মাথা গরম হতে বা উচ্চস্বরে কথা বলতে কেউ দেখেনি এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। তিনি অসম্ভব ধৈর্যশীল। ক্ষুরধার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বুদ্ধিমত্তা। একেবারে বুথস্তর থেকে কাজ করতে করতে আজ তিনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী। কলকাতার বিদায়ী মেয়র (KMC Mayor)। দক্ষ প্রশাসক। শুধু নিজের এলাকা নয়, গোটা রাজ্যে তিনি এখন অন্যতম জনপ্রিয় একজন নেতা। তিনি সকলের প্রিয় সদাহাস্য ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। তবে ববি (Boby) বলেই নামেই বেশি পরিচিতি তাঁর।
আরও পড়ুন-নানা রূপে চির ভাস্বর
রাত পোহালেই কলকাতা পুরভোট (KMC Election)। ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক লালবাড়ি দখলের লড়াই। বলা যায় এবার লড়াই অনেকটাই একপেশে। লড়াইয়ের ময়দানে শাসক তৃণমূলের (TMC) থেকে বিরোধীরা শত যোজন দূরে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে এবার তৃণমূলের কলকাতা পুরসভা দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িযে এবার ফের নিজের ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম। ২০০০ সাল থেকে একটানা চারবার জিতেছেন। দল আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম মেয়র হিসেবে প্রজেক্ট না করলেও, পুরবোর্ড গঠনের পর তিনিই ফের কলকাতার মহানাগরিক হতে চলেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন-কলকাতায় ১৩৫টার বেশি আসন পেয়ে জয়ী হবে তৃণমূল কংগ্রেস, আত্মবিশ্বাসী অভিষেক
মানব সেবাই পরম ধর্ম, এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এবং শপথ নিয়ে মানুষের পাশে থেকে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করে গিয়েছেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ এবং তার সমস্যা সমাধানে কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে সরাসরি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ফিরহাদ হাকিম সর্বপ্রথম ‘‘টক টু মেয়র’’ (Talk to Mayor) কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রতি শনিবার যেখানে সরাসরি মানুষ ফোন করে মেয়রকে কাছে পেয়েছেন। আর নাগরিক পরিষেবায় ‘’টক টু মেয়র” বা পরবর্তী সময়ে ‘’টক টু কেএমসি” কতটা ফলপ্রসূ তা হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছেন কলকাতার মানুষ।
আরও পড়ুন-পুর প্রচারে প্রণবপুত্র অভিজিৎ বিজেপি পরাজিত দিদির রাজ্যে
তিনি মেয়র থাকাকালীন করোনা মহামারির প্রকোপ থেকে আমফান, সবকিছু ঝড়ের মতো বয়ে গিয়েছে কলকাতার বুকের উপর দিয়ে। তছনছ করে দিয়েছে মহানগরকে। তবে ফিরহাদ হাকিম ও তাঁর সহকর্মীদের দক্ষতায় সেই ঝড়ঝাপটা সামলে আবার তিলোত্তমা হয়ে উঠেছে কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লকডাউনে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো থেকে করোনা টিকাকরণে কলকাতা পুরসভার অভূতপূর্ব সাফল্য ধরা দিয়েছে ফিরহাদ হাকিমের হাত দিয়েই।
ফিরহাদ হাকিমের হাত ধরেই গত কয়েক বছরে উন্নয়নের এভারেস্টে পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু ফিরহাদ হাকিম বিশ্বাস করেন, উন্নয়নের কোনও সীমারেখা হয় না। উন্নয়ন যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে আবার নতুন উন্নয়নের চিন্তা ভাবনা করতে হয়। তাই আত্মতুষ্টিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আরও বেশি বেশি রাস্তা, আলো, পানীয় জল, উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা করে আগামী দিনে আরও উন্নততর কলকাতা উপহার দেওয়াই লক্ষ্য হবে কলকাতা পুরসভার। একইসঙ্গে শহরকে পরিষ্কার ও নির্মল রাখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জঞ্জাল অপসারণে জোর দিতে হবে। জঞ্জালকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার পরিকল্পনাও চলছে।
আরও পড়ুন-KMC Elections : বুড়িমার যোগ্য উত্তরসূরি সাংবাদিকতার ছাত্রী মোনালিসা-ই প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের
শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করেন ফিরহাদ হাকিম। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেয়র’স ক্লিনিকের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। কোভিড পরীক্ষাও বাড়াতে হবে। বুস্টার বা বাচ্চাদের ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র মিললেই তা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলেই জানিয়েছেন বিদায়ী মেয়র।
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, তৃণমূল পুরবোর্ড গঠন করলে এবার প্রথম লক্ষ্যই হবে শহরবাসীকে স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেওয়া। পুরসভায় দালালরাজ চিরতরে নির্মূল করতে অনলাইনেই সমস্ত পরিষেবা মিলবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।