সংবাদদাতা, তারাপীঠ: অতিমারীর কারণে ও সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউকে মাথায় রেখে কৌশিকী অমাবস্যায় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকছে তারাপীঠ। মঙ্গলবার তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ, জেলা প্রশাসন, তারাপীঠ মন্দির সেবায়েত কমিটি, শ্মশানরক্ষা কমিটি, হোটেল লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সমস্ত গণ পরিবহন ইউনিয়নের সমন্বয় বৈঠক হয় তারাপীঠে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক বিধান রায়, তারাপীঠ মন্দির সেবায়েত কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা।
আরও পড়ুন : বিজেপির হাতছাড়া বেলাড়ি পঞ্চায়েত
বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অতিমারী ও সম্ভাব্যে তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় তারিখ থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারাপীঠ মন্দির ও শ্মশান বন্ধ থাকবে। তবে মায়ের পুজো পুরোহিতরা করবেন। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। কোন গণপরিবহন, তীর্থ যাত্রী চলাচল হবে না। হোটেল বুকিং হবে না। তারাপীঠ মন্দির সেবায়েত কমিটি, শ্মশান রক্ষা কমিটি, হোটেল লজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন ও সমস্ত গণপরিবহন ইউনিয়নের সমন্বয় বৈঠকে এটি স্থির হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অতিমারী রুখতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। সার্বিক ভ্যা্কসিনেশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে তৃতীয় ঢেউ আসছে।
আরও পড়ুন : কাবুলে আটকে দার্জিলিঙের ৩, ফেরাতে তৎপর প্রশাসন
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, এমনিতে এখন রাত্রি এগারোটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সম্পূর্ণ যান চলাচল বন্ধ। সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ থেকে আট তারিখ পর্যন্ত তারাপীঠ বন্ধ থাকবে। সাধারণত এই বিশেষ দিনে তারাপীঠে বারো থেকে তেরো লক্ষ লোক সমাগম হয়। কিন্তু অতিমারীর কারণে এবারও ওই ক’দিন তারাপীঠ পুরো বন্ধ থাকবে। পুলিশ প্রশাসন সজাগ থাকবে। বাকি সবাই সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারাপীঠ হোটেল লজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি বলেন, এই বন্ধের ফলে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। তবুও এটা আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ মানুষের জীবন থেকে তো কিছু বড় নয়।
২০২১ সালে কৌশিকী অমাবস্যা ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে। মূলত , বাংলা সময় ২১ ভাদ্র ১৪২৮ সালে এই দিনক্ষণ পড়েছে। কৌশিকী অমাবস্যার মূল তিথি ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭:০৭ মিনিট থেকে শুরু হবে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে ছাড়বে এই অমাবস্যা।
কথিত আছে, মহিষাসুর বধের পর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারা। শেষে দেবতারা মহামায়ার তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী নিজ কোষ থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত করে এক পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তি রূপে আবির্ভূত হন। নিজ কোষ শরীর থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হলেন কৌষিকী। কৌষিকীদেবী আবার তারা ও কালীতে রূপান্তরিত হন। আবার শোনা যায় এই অমাবস্যার দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ফলে ওই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয় এবং কুম্ভস্নান করার সমান পুন্য হয়। এই বিশ্বাসে আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ওই দিনটিতে তারাপীঠে ছুটে আসেন। রেলপথেই বেশি মানুষ আসেন। লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।