জনজোয়ারে মেসিরা

৩৬ বছরের বিশ্বকাপ-খরা কাটানোর আনন্দে সেই রবিবার থেকেই তো আর্জেন্টাইনরা রাত জাগছেন! অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বরণ করার জন্য।

Must read

বুয়েনস আইরেস, ২০ ডিসেম্বর : আর্জেন্টিনায় তখন গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটা বলছে আড়াইটে (ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সকাল এগারোটা)। বুয়েনস আইরেসের এজেইজা বিমানবন্দরে পা রাখল বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা। বিমানের দরজা খুলে প্রথম যিনি বেরিয়ে এলেন, তিনি লিওনেল মেসি। হাতে বিশ্বকাপ। নায়কের মুখে ভুবনজয়ের হাসি। পাশে আরেক লিওনেল! আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। এরপর একে একে বেরিয়ে এলেন বাকিরা।

আরও পড়ুন-সৌজন্যে কাঁথির সভা স্থগিত

অত রাতেও বিমানবন্দরের বাইরে থিকথিকে ভিড়। ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ-খরা কাটানোর আনন্দে সেই রবিবার থেকেই তো আর্জেন্টাইনরা রাত জাগছেন! অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বরণ করার জন্য। বিমানবন্দরে মেসিদের জন্য অপেক্ষা করছিল হুডখোলা বাস। যার গায়ে বড় বড় হরফে লেখা ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। সেই বাস বাইরে বেরোতেই আবেগের গণবিস্ফোরণ! ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ জয়ধ্বনিতে যেন কেঁপে উঠল গোটা শহর! জনজোয়ারে ভেসে বাস ধীর গতিতে এগিয়ে চলল শহরের প্রাণকেন্দ্র ওবেলিক্স স্কোয়ারের দিকে। আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন আগেই ট্যুইট করে জানিয়েছিল, ‘‘মঙ্গলবার বুয়েনস আইরেসের ওবেলিক্সে গিয়ে উৎসব করবে বিশ্বকাপজয়ীরা। সেখানে উপস্থিত থাকবেন সমর্থকরাও।’’ রাস্তার দু’পাশে তাই যেদিকে চোখ যায় কালো মাথার ঢল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংখ্যাটা প্রায় দু’লক্ষ ছুঁইছুঁই (এক লক্ষ ৭৬ হাজার)!
বাস যত এগোল, ততই এই উন্মাদনার পারদ চড়তে থাকল। বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমর্থকরাও এগোতে থাকলেন গন্তব্যের দিকে। সঙ্গে মেসি ও তাঁর সতীর্থদের নামে জয়ধ্বনি। নীল-সাদা জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে তাঁরা গান গাইছেন, নাচছেন, লাফাচ্ছেন। একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। কেউ মনের আনন্দে গিটার বাজাচ্ছেন। আবার কেউ গলায় ঝোলানো ড্রাম একটানা বাজিয়ে চলেছেন। হুডখোলা বাসে ট্রফি হাতে মেসি ও তাঁর সতীর্থরা উপভোগ করলেন প্রতিটি মুহূর্ত। কখনও ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন। কখনও চুমু ছুঁড়ে দিলেন ভক্তদের উদ্দেশে। রাত পেরিয়ে ভোর হলেও এই উৎসব যে চলবে, সেটা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্ডেজ। তাই তিনি আগাম সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন-বিজেপির থেকে নীতিকথা শুনব না

এদিকে, দোহা থেকে বিমানে ওঠার পর থেকেই উৎসবে মেতে উঠেছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ ড্রাম বাজাচ্ছিলেন। তার তালে তালে নাচছিলেন মেসি-রডরিগো ডি পলরা। চিৎকার করে গান গাইছিলেন বিশ্বকাপের উদীয়মান তারকার পুরস্কার পাওয়া এনজো ফার্নান্ডেজ। সেই উৎসবের রেশ দেশে ফেরার পরেও বজায় রইল। বিশ্বকাপজয়ী নায়কদের বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে থাকা ২১ বছরের ছাত্র আইতোর কেরদোকাস চিৎকার করছিলেন ‘লিও… লিও’ করে। মধ্যবয়সি রেমন দিয়াজ আবার চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘আজ গোটা রাত জাগব। আগামিকালও গোটা দিন পথে পথে কাটাব। কোনও কাজ করব না। ৩৬ বছর পর আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি। উৎসবটা তো মনে রাখার মতোই করতে হবে।’’

আরও পড়ুন-সমাধান হবেই, আস্থা রাখুন : ব্রাত্য বসু

তবে রাজসিক শোভাযাত্রার তাল কাটল একবার! বাসের খোলা ছাদে অ্যাঞ্জেল ডি’মারিয়া, নিকোলাস ওটামেন্ডি, রডরিগো ডি’পল ও লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গে বসেছিলেন মেসি। তাঁদের সবার চোখ ছিল রাস্তার জনতার দিকে। সেই সময় রাস্তার ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে মেসিদের। কোনওরকমে দ্রুত মাথা নিচু করে দুর্ঘটনা এড়ান মেসিরা। তবে তারের ধাক্কায় পারেদেসের মাথার টুপি বাইরে ছিটকে পড়ে।

Latest article