জোহানেসবার্গ, ৬ জানুয়ারি : রুদ্ধশ্বাস ডে ফোর-এর অপেক্ষায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবাইকে হতাশ করল ওয়ান্ডারার্স। ভারতীয় বোলিংয়ের যাবতীয় কারিকুরি উড়িয়ে দ্বিতীয় টেস্ট অতি সহজে নিজেদের দখলে নিয়ে নিলেন অকুতোভয় ডিন এলগার।
দিনভর বৃষ্টির শেষে চায়ের পর যখন চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হল, তখনও ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু এদিন খেলা যত গড়াল, ২২ গজে আরামসে জাঁকিয়ে বসলেন দুই নট আউট ব্যাটসম্যান এলগার ও ভ্যান ডার ডুসেন। এলগার একটু পরেই হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেলেন। ডুসেনও পায়ের তলায় জমি শক্ত করে ফেললেন। ম্যাচ তখনই প্রায় দক্ষিণ আফ্রিকার মুঠোয়।
আরও পড়ুন-দিনাজপুরে শক্তিশালী মহিলা ব্রিগেড ‘বঙ্গজননী’
এই ম্যাচ হতে পারত ভারতের। ওয়ান্ডারার্সেই প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এলগারের মতো এমন একজন অধিনায়ক আছেন, যিনি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। আগের দিন বুমরার বলে হেলমেটে ঘা খেয়েও পিছু হটেননি। এদিনও বুমরা, শামিকে সামলে গেলেন অনায়াস ভঙ্গিতে। বেশ কয়েকবার শরীরে বল লাগল। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতির মতো এসব আমল না দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪০-এর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। পাঁচ ঘণ্টা পরে খেলা শুরু হওয়ার আরও ঘণ্টাখানেক পরে শামি ভারতকে প্রথম সাফল্য দেন ডুসেনকে (৪০) তুলে নিয়ে। প্রথম স্লিপে তাঁর নিচু ক্যাচ ধরেন পূজারা। তবে বাভূমা এসে ধস আটকে দেন। এরপর ইতিহাস। ওয়ান্ডারার্সে এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা হারাল ভারতকে। শেষপর্যন্ত তাদের রান ২৪৩-৩। এলগার নট আউট থেকে গেলেন ৯৬ রানে। বাভুমা নট আউট ২৩ রানে। সকালে যখন খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল, তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্টেডিয়ামের উপর। এতে প্রথম সেশন তো গেলই, বরবাদ হল বৃহস্পতিবারের ম্যাচের অনেকটা অংশ।
আরও পড়ুন-মাস্ক-এ স্বনির্ভর সুচিত্রা
চতুর্থ দিনে টান টান পরিস্থিতি ছিল ম্যাচের। জেতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১২২ রানের। আর ভারতের দরকার ছিল আটটি উইকেটের। আগের দিন এলগার একাই টেনেছিলেন তাঁর দলকে। শুধু শেষবেলায় অশ্বিন পিটারসেনকে ফিরিয়ে দিয়ে একটা চাপ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এলগার আর ভ্যান ডুসেন পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলেন। তবু দেখার ছিল চতুর্থ দিন অশ্বিনরা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন কি না। যা তাঁরা পারেননি। এদিন মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছেন শামি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ছিল কপিলদেবের ৬৩তম জন্মদিন। এই উপলক্ষে তাঁর সতীর্থ সুনীল গাভাসকর কে এল রাহুলের দলের উদ্দেশে বার্তা দেন, তোমরা কপিলের জন্য এই টেস্ট জেতো। কপিলকে ভারতের গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার আখ্যা দিয়ে সানি আরও বলেন, এই ভারতীয় দলের অনেকেই কপিলের ভক্ত। তাই জন্মদিনের উপযুক্ত উপহার হতে পারে জোহানেসবার্গের জয়। তিনি মনে করিয়ে দেন, ভারত কখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ জেতেনি। ২০১৮-তে ওয়ান ডে সিরিজ জিতলেও টেস্ট সিরিজ হেরে গিয়েছিল ভারত। এবার টেস্ট সিরিজ জিতলে সেটা দারুণ বার্থ ডে গিফট হবে কপিলের জন্য। শেষপর্যন্ত সেটা হয়নি।
আরও পড়ুন-শুক্রবার শেষকৃত্য প্রয়াত মজিবুরের, ত্রিপুরায় শেষশ্রদ্ধা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের
সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে ভারত জিতেছিল ১১৩ রানে। ফলে জোহানেসবার্গে জিতলেই সিরিজের দখল নিতে পারত ভারত। সেক্ষেত্রে কেপটাউনে তৃতীয় টেস্টের আর কোনও মূল্য থাকত না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে টেস্ট জিতে শেষ টেস্ট বাঁচিয়ে রাখল।