প্রতিবেদন : আমজনতার করের টাকায় মোদি-ভজনার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য যে বিপুল খরচ করা হবে কেন্দ্রের সেই গোপন তথ্য সামনে চলে আসতেই বেকায়দায় পড়েছে ভারতীয় রেল। আর তাই মুখ বাঁচাতে এবার নতুন নিয়ম লাগু হচ্ছে। জানা গিয়েছে, তথ্যের অধিকার আইনে জবাব দেওয়ার নীতি আরও কঠোর করেছে ভারতীয় রেল। রেলের নয়া নিয়মে সমস্ত জবাব জোনাল জেনারেল ম্যানেজার বা ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারকে দেখিয়ে তবেই ছাড়পত্র নিতে হবে। তাঁদের সম্মতি ছাড়া কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। অর্থাৎ অপ্রিয় সত্য ফাঁস হয়ে গিয়ে মোদি সরকারের যাতে মুখ না পোড়ে সেজন্য কড়া বন্দোবস্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন-৯ জুন বিশ্বকাপে ভারত-পাক দ্বৈরথ
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদির ছবি সহ সেলফি বুথ তৈরির খরচ জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন সমাজকর্মী অজয় বোস। তাঁর আবেদনের জবাবে জানানো হয়, মধ্য অঞ্চলে মোট ২০টি স্থায়ী সেলফি বুথ তৈরি করা হবে, যার প্রতিটিতে খরচ হবে ৬.২৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও ৩২টি অস্থায়ী সেলফি বুথ থাকবে। যার প্রতিটিতে খরচ হবে ১.২৫ লক্ষ টাকা। এই সব সেলফি বুথের জন্য মোট ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা খরচ হবে ভারতীয় রেলের। এর মধ্যে স্থায়ী বুথের জন্য খরচ হবে ১ কোটি ২৫ লাখ এবং অস্থায়ী বুথের জন্য খরচ হবে ৩৭ লাখ। আর এই আরটিআই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে কেন্দ্র সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানান বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, জনগণের টাকা নয়ছয় করে লোকসভা ভোটের আগে মোদির ঢাক পেটাতে চায় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-প্রধান বিচারপতিকে রাখার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা
সম্প্রতি বিভিন্ন স্টেশনে মোদির সেলফি পয়েন্টের জন্য খরচের তথ্য সামনে আসতেই মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পদ থেকে চুপিসারে বদলি করে দেওয়া হয় শিবরাজ মানাসপুরে নামে এক ব্যক্তিকে। যা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। অভিযোগ, মোদি সেলফি বুথ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের জেরেই গত ২৯ ডিসেম্বর তাঁকে আচমকাই বদলি করে দেওয়া হয়। মানাসপুরের জায়গায় মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পদে আনা হয়েছে স্বপ্নীল ডি নিলাকে। পাশাপাশি রেলের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, আরটিআই সংক্রান্ত সব জবাব আগে জোনাল ম্যানেজারকে দেখাতে হবে। তাঁর অনুমোদন পেলে তবেই সেই জবাব পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন-এলাকার মানুষের প্রধান ভরসা রায়বাঁধ, গ্রামীণ হাট ঢেলে সাজছে রাজ্যের টাকায়
গত কয়েক মাস ধরে দেশের একাধিক রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাটআউট বসানো হয়েছে। এগুলিকে থ্রি-ডি সেলফি পয়েন্ট নাম দেওয়া হয়েছে। বুথগুলিতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন স্কিল ইন্ডিয়া, উজ্জ্বলা যোজনা এবং চন্দ্রযান মিশনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলি এলইডি আলোয় সজ্জিত। রেলযাত্রার আগে বা পরে যাত্রীরা যাতে প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে সেলফি তুলতে পারেন তার জন্যই এই বিপুল আয়োজন। মধ্য রেলওয়ের পাশাপাশি উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনেও এই সেলফি বুথ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একাধিক স্টেশনে একের বেশিও সেলফি বুথ তৈরি করা হচ্ছে। এই আবহে এই সেলফি বুথের খরচ প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছে রেল। বিরোধীদের অভিযোগ, জনগণের টাকা বেলাগামভাবে খরচ করে নির্লজ্জভাবে মোদির প্রচার শুরু হয়েছে।