সুস্মিতা মণ্ডল, কুলতলি : কয়েক বছর আগেও ছবিটা ছিল অন্যরকম। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘ বা কুমিরের হামলায় মারা যেতেন হামেশাই। অনেকেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কর্মক্ষমতা হারাতেন। ২০১৯ সালে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের নিয়ে বন দফতর তৈরি করে বন সুরক্ষা কমিটি। জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে বিকল্প আয়ের জন্য নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে সুন্দরবনে ৪০টি বন সুরক্ষা কমিটি আছে।
আরও পড়ুন-বিধায়কের উদ্যোগে শুরু হল বেহাল স্টেডিয়ামের সংস্কার
এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির গুড়গুড়িয়ায় ৪টি স্বনির্ভর দলের সদস্যদের মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে চার দলের ৮০ সদস্যকে নিয়ে তৈরি হয় কুলতলি সমবায় সমিতি। সেই সমবায়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের সংরক্ষিত জঙ্গলে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে টানা চার মাস সুন্দরবনের হেতাল, বাণী, কেওড়া, বকরা গাছে ফুল ভরে যায়। ফুলের মধু খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির দল আসে। সে সময় বনকর্মীদের সহায়তায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়।
আরও পড়ুন-আশ্রমের জমা জলের সমস্যা মেটাতে তৎপর রাজ্য, শুরু ৮৮ লক্ষের প্রকল্প
জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের পর সমবায়ে নিয়ে এসে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করে চলে প্যাকেজিং। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা মধু প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন। সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে ‘বনফুল’ নামে ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই বনফুল মধু রাজ্য সরকারের বিশ্ব বাংলা, সুফল বাংলা বা বেনফিশের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। মিলছে অনলাইনেও। সুন্দরবনের এই মধু যে কোনও মধুর থেকে অনেক বেশি স্বাদু। সমবায় সমিতির সম্পাদক দেবাশিস মণ্ডল জানান, সমবায়, বন দফতরের সহযোগিতায় বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ টন মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়।