অপরাজিতা জোয়ারদার, রায়গঞ্জ: পুজোর ইতিহাস নিয়ে রয়েছে মতভেদ। প্রচলিত মত, বাংলায় মোঘল শাসনকালে যখন কুলিক নদীর পূর্ণ যৌবন, সেই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় সমস্ত কাজ এই নদীকে ঘিরেই শুরু হয়। বড় বড় সওদাগরি নৌকা কুলিক নদীর বন্দরে নোঙর করত। ওই সময়েই বাইরে থেকে আসা কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় দেবীর মন্দির। তবে অনেকের মতে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা রঘুনন্দন গিরি গোঁসাই। তাঁদের আন্দোলনের সময়ই এই মন্দির গড়ে ওঠে। সে যাই হোক, এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে ৫০০ বছরের ইতিহাস।
আরও পড়ুন-বাম-কং আমলের দাবি পূরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিগগিরই চালু হচ্ছে নেতাজি সুভাষ সেতু
এখানে আজও বেনারসি শাড়ি পরিয়ে পঞ্চমীর দিন মাকে বসানো হয় পঞ্চমুন্ডির আসনে। প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্যে উত্তরের সেরা পুজোগুলির একটি রায়গঞ্জ বন্দর আদি দুর্গা মন্দির। এখন পুজো হয় নতুন মন্দিরে। এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বন্দর এলাকাতে একসময় বসত বিশাল মেলা। উৎসবের মরশুমে জমে উঠত বিকিকিনির পালা। সময়ের হাত ধরেই সর্বজনীন পুজোর রূপ নেয় মন্দিরের পুজো। প্রথম দিকে টিনের চাল দিয়ে ঘেরা ছিল মন্দির । সেখানেই প্রতিদিন দেবীর আরাধনা হত। বেশ কয়েকবছর আগে রায়গঞ্জের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পাকা মন্দির তৈরি হয়। শুরু থেকেই প্রতিমার কাঠামো একই রাখা হলেও ১৯৫৩ সালে কুলিকের ভয়াবহ বন্যায় তা ভেসে যায়।
আরও পড়ুন-তৃণমূলের উদ্যোগে তুফানগঞ্জে ফিরছে নৌকাবাইচ
পরবর্তীকালে নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়। তারপর থেকে সেই কাঠামোতেই প্রতি বছর দেবীপ্রতিমা তৈরি করা হয়। বেনারসি শাড়ি পরিয়ে দেবীকে পঞ্চমীর দিন পঞ্চমুন্ডির আসনে বসানো হয়। মহালয়ার দিন থেকেই পূজার যাবতীয় কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। এখানে কোনওদিনই রেওয়াজ নেই চাঁদা তোলার।। রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা স্বেচ্ছায় মন্দিরে এসে তাঁদের সামর্থ্য মত অর্থ দান করে যান। ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে দশমীর পুজো শেষ হবার পর সিদ্ধিপ্রসাদ বিতরণ করা হয় দর্শনার্থী ও ভক্তদের। তারপরে দেবীকে নৌকায় চাপিয়ে বিসর্জনের পালা।