অসীম চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : নগরায়নের ধাক্কায় বহু বন্যপ্রাণ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। অনেকে তো প্রায় হারিয়েই গিয়েছে। এই অবস্থায় আশার আলো দেখাচ্ছে ধূসর নেকড়ে এবং বাদামি হায়না। প্রায় সাত দশক পর শালপিয়ালের জঙ্গলে ঘেরা দুর্গাপুর ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে। শিল্পায়নের স্বার্থে নির্বিচারে জঙ্গল কেটে ফেলায় হারিয়ে গিয়েছিল প্রাকৃতিক ভারসাম্য। সম্প্রতি দুর্গাপুর মহকুমার পাণ্ডবেশ্বর, লাউদোহা ও কাঁকসা ব্লকের বিভিন্ন জঙ্গল এলাকায় দেখা মিলেছে ধূসর নেকড়ে ও বাদামি হায়নাদের।
আরও পড়ুন-১০ লক্ষ কুইন্টাল ধানক্রয় মুর্শিদাবাদ জেলা
এদের উপস্থিতি দেখে উল্লসিত বন দফতর। এতদিন মূলত কাঁকসার জঙ্গলমহলে মাঝেমধ্যে দেখা মিলত খটাশ, বনবিড়াল, সিভেট ক্যাট, খেঁকশিয়াল, বাঘরোল বা বিষাক্ত সাপ ও নানা প্রজাতির পাখির। দুর্গাপুরের বনাধিকারিক নীলরতন পাণ্ডা জানান, দুর্গাপুরের অধীনে ছিল প্রায় আট হাজার হেক্টর বনভূমি। সম্প্রতি সেই এলাকা বেশ কিছুটা বেড়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর হয়েছে। কয়েক বছর ধরে কাঁকসা, বনকাটি, অযোধ্যা, ফরিদপুরের মাধাইগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় দেখা মিলছে ময়ুরেরও। সম্প্রতি মাধাইগঞ্জে দেখা মিলেছে একজোড়া ধূসর নেকড়ের। মাসখানেক আগে পাণ্ডবেশ্বরের খনি এলাকায় দুটি হায়নার দেখা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-উদয়নারায়ণপুরে দু’দিন বন্ধ দোকান
এই এলাকায় খানছয়েক নেকড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওরা যাতে খাবারের অভাবে এলাকা ছেড়ে না চলে যায়, জঙ্গলগুলিতে নিয়মিত খাবারের জোগান রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে এই এলাকায় অসংখ্য চিতাবাঘের দেখা মিলত। এখন মাঝে মধ্যেই শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ঢুকে পড়ে হাতির দল। গৃহস্থের বাড়ির চালে কিংবা দাওয়ায় ময়ুর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় হামেশাই। দুর্গাপুরের লাগোয়া পানাগড়ের জঙ্গল থেকে কাঁকসার দেউল পার্কে একসময় চিতল হরিণ ও ব্যাঘ্রপ্রকল্প করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাম আমলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। নেকড়ে ও হায়নার উপস্থিতির পর নতুন করে ফের এই এলাকাকে ঘিরে একটি ফরেস্ট সাফারি জোন করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে প্রশাসন।