প্রতিবেদন : তবে কি এখানেও পালাবদল আসন্ন? চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা।
রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। খাদ্য নেই, জ্বালানি নেই, দিনে গড়ে টানা ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। অসুস্থ হয়ে পড়লে মিলছে না ওষুধ। বাচ্চারা দুধ পাচ্ছে না। কাগজ- কালি নেই, তাই প্রশ্নপত্র ছাপা যাচ্ছে না। সব পরীক্ষা স্থগিত। বিপন্ন হাজার হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ।
আরও পড়ুন-সংক্রমণ বাড়ল
ক্ষুব্ধ, নিরুপায় মানুষ প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন রাস্তায়। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে তুলকালাম। ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে পুলিশ। জনতার ক্ষোভ সামলাতে চলেছে লাঠিচার্জ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি করতে হয়েছে কারফিউ। রাজাপক্ষে গোটা ঘটনাকেই চরমপন্থীদের কাজ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। তবে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরুতে শান্তিপূর্ণই ছিল বলেই বিক্ষোভকারীদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশই প্রথম কাঁদানে গ্যাস আর জলকামান ছোঁড়ে, তাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে জমায়েত। পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে। শুক্রবার সকালেও দাঙ্গায় জড়িত থাকার অপরাধে ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি দাম বাড়ল ৮০০ ওষুধের
প্রশ্ন উঠছে, এমন মারাত্মক পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হল ছবির মতো সুন্দর এই দেশে? উত্তর মিলছে নানা সূত্রে। গোতাবায়ে রাজাপক্ষে দেশের প্রেসিডেন্ট। তাঁর বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রকও তাঁরই হাতে। রাজাপক্ষের আরও দুই ভাই ও ছেলেরা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। অর্থাৎ, দেশ পরিচালনায় তাঁরাই সর্বেসর্বা। করোনার কারণে পর্যটনে টান পড়ায় অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে শ্রীলঙ্কার, এই দাবি ঠিক নয়। রাজাপক্ষে সরকার ও তার পূর্বসূরিদের ভুলনীতি ও কুশাসনই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। পাশপাশি রয়েছে বিপুল বিদেশি ঋণের বোঝা। যার বেশিটাই চিনের। এখন চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ফাঁসে আটকে দেশের অর্থনীতি। অথচ দুঃসময়ে পাশে নেই শি জিনপিং সরকার৷
আরও পড়ুন-দ্য কাশ্মীর ফাইলস, বিজেপির তীব্র নিন্দায় পাওয়ার
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার কোনও চিন্তাভাবনা না-করেই শুধু বাহবা পেতে রাজস্ব ও ভ্যাট কমিয়েছিল। যার জেরে সরকারের কোষাগার খালি। সেই অভাব ঢাকতে দেদার টাকা ছাপানো হয়েছে। নিট ফল, চরম মুদ্রাস্ফীতি। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও তলানিতে। বর্তমানে মাত্র ২৩০ কোটি ডলার রিজার্ভ আছে। অথচ উন্নয়নী প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণের খাতে এ বছর কিস্তি দিতে হবে ৮৯০ কোটি ডলার। দেশ ঋণ পরিশোধ করবে, নাকি নিত্যপণ্য আমদানি করবে? ফলে ভয়াবহ সংকট। খাদ্যপণ্যের দাম ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বলেছে, ২০০ শ্রীলঙ্কান রুপির বিনিময়ে এখন ১ মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন-জিৎ-এর ইসমার্ট জোড়ি…
কিন্তু বাস্তব হল, এই দামেও ডলার মিলছে না। কালোবাজারে ২৫০ থেকে ২৬০ রুপিতে মিলছে ১ ডলার। এই অন্ধকার কীভাবে কাটবে, তার কোনও সদুত্তর এখনই মিলছে না। ফলে সোনার লঙ্কা আপাতত জ্বলছে অশান্তির আগুনে। ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে এখন চরম দুর্দশায় জনগণ।