প্রতিবেদন : বুধবারই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, সেই সঙ্গে সিআইডির হাতে তদন্তের দায়িত্বভার তুলে দেন তিনি। তারপর ৪০ ঘণ্টাও কাটল না। শুক্রবার সকালেই বাগুইআটি অপহরণ ও জোড়া খুন-কাণ্ডে সিআইডি জালে ধরা পড়ল মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি। এদিন সকালে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। গ্রেফতারের পর শুক্রবারই তাকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। বিচারক সত্যেন্দ্রকে ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে সত্যেন্দ্রর হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে রাজি হননি। লিগাল এইড তার হয়ে সওয়াল করে আদালতে।
আরও পড়ুন-১৯ নেতা-মন্ত্রীর সম্পত্তি মামলা স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট
বাগুইআটির দুই ছাত্র অতনু এবং অভিষেককে খুনের অভিযোগে ঘটনায় সত্যেন্দ্রকে খুঁজছিল পুলিশ। এদিন গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশের বিশেষ একটি দল হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয়। সাদা পোশাকে তারা সেখানে হাজির ছিল। স্টেশনে সত্যেন্দ্র পৌঁছতেই তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে বিধাননগর কমিশনারেটে নিয়ে আসা হয়। আদালতে তোলার আগে তাকে এক দফা জেরা করা হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ধারের ৫০ হাজার টাকা শোধ করতে পারেনি। বারবার চাওয়ায় বিপাকে পড়ছিল। শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরেই খুনের পরিকল্পনা করে সত্যেন্দ্র। সত্যেন্দ্রর স্ত্রীর সঙ্গে মৃত এক কিশোরের সম্পর্কের টানাপোড়েনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
আরও পড়ুন-হিংসা মামলায় বেকসুর অনুব্রত, কেউ চিরদিন জেলে থাকে না
অভিযুক্তের খোঁজে একযোগে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিস ও সিআইডি। সেইসময়ই আততায়ীর এক আত্মীয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনেদেন নজর পড়ে। একটি লেনদেনে নজর আটকায় তদন্তকারীদের। এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে বুঝতে পারেন তাঁরা। তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্ত সত্যেন্দ্রকে টাকা পাঠিয়েছে তার জামাইবাবু। আর সেই টাকা তুলেই আততায়ী ভিন রাজ্যে পালানোর চেষ্টা করছে। যদিও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিল না সত্যেন্দ্র। অন্য একটি নতুন নম্বর থেকে ফোন করছিল সে। সেই নম্বরের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করেই পুলিস সত্যেন্দ্র অবধি পৌঁছয়। পুলিস যখন তাকে গ্রেফতার করে, তখন সে টিকিট কাটার জন্য ট্রাভেল এজেন্সিতে বসেছিল।
আরও পড়ুন-আদিবাসী মেয়েদের তিরন্দাজিতে সাড়া
গত কয়েকদিন ধরে হাওড়া স্টেশনের ওয়েটিং রুমই ছিল সত্যেন্দ্রর অস্থায়ী ঠিকানা। সেখান থেকে ট্রেনে মুম্বই পালানোর ছক কষছিল। এই ক’দিন পুলিশকে বোকা বানাতে সে একাধিকবার সিম বদলেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়ের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়াটাই তার কাল হল। ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তার হদিশ পায় পুলিশ। এদিকে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র ধরা পড়ার খবর বাগুইআটিতে মৃতের বাড়িতে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অতনুর মা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি তো ছেলেটাকে শেষবার চোখের দেখা দেখতেও পাইনি। ওকে যে খুন করল তার ফাঁসি চাই। শুধু পরিবার নয়, অতনুর প্রতিবেশীরাও অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি তুলেছেন।