শহর কলকাতা এখন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত মা কালীর আরাধনায়। তার আকাশ আলোকিত আতশবাজিতে আর বাতাস মুখরিত শ্যামাসংগীতের মূর্ছনায়। এমনই এক সময় নাকি গায়েব দুর্মূল্য কালী মূর্তি। আর সেই মূর্তির সন্ধান পেতে মরীয়া যারা, তারাও সব বিচিত্র অভিজ্ঞতায়। সত্যি নয়, পুরোটাই ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’ ছবির কাহিনি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়
আরও পড়ুন-কথিত আছে, কুরুক্ষেত্রের এই শক্তিপীঠে আরাধনা করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব
অষ্টধাতুর কালো রত্নখচিত এক প্রাচীন কালী মূর্তি যা কলকাতার কালীর আদলেই তৈরি, চুরি হয়ে যায় প্রতাপগড় মন্দির থেকে। শুধুমাত্র রত্নের মূল্য নয়, এর অ্যান্টিক মূল্যও বেশ চড়া। আর তাই সেটি হাতাতে চায় একগুচ্ছ লোক। এরা সবাই যে দাগি অপরাধী তা নয়। এমনকী আছে পুলিশ থেকে সিআইডি’ও। পাকেচক্রে পুরো জার্নিটার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া কুশীলবদের নিয়েই গড়ে উঠেছে ছবির গল্প। আর কেন তারা হাতাতে চায় এই মূর্তি, কীভাবে ধুলো দেয় অন্যের চোখে এবং এসবের মধ্যে কীভাবে জমে ওঠে তাদের নিজেদের রসায়ন, সেসব গল্পের উপাদান! পুরো ঘটনাটা ঘটছে কলকাতা তোলপাড় করে। তবে পরিচালক অভিজিৎ গুহ ও সুদেষ্ণা রায়ের ছবি ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’র মূল নির্যাস এটা হলেও আরও অনেকগুলি কারণেই ছবিটি প্রাসঙ্গিক। নানা বিতর্ক পিছনে রেখে ও মা হওয়ার পর সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরতের এই ছবির হাত ধরেই ফের শুটিং-এ ফেরা। শুধু তাই নয়, এ ছবিতে আছেন বিধায়ক-অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীও, যাঁর সঙ্গে এর আগে এক ছবিতে থাকলেও জুটি হিসেবে সোহম-নুসরতের এটি প্রথম ছবি। এছাড়া এই ছবির হাত ধরেই ছোটপর্দার অভিনেতা সোমরাজ মাইতির অন্যতম নায়ক হিসেবে বড়পর্দায় পা রাখা। সোমরাজ এ ছবিতে জুটি বেঁধেছেন সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
আরও পড়ুন-না ফেরার দেশে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, এক নজরে কখন কোথায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
ছবিতে সোহম, সোমরাজ ও সুস্মিতার চরিত্রের নাম যথাক্রমে অনীশ, সুজয় ও মিলি। তিনজনেই ভারী বন্ধু। তবে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। মিলি বিয়ের গয়না নিয়ে পালিয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে সিনেমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্ন পূরণও হয়নি আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার মুখও নেই। সুজয়কে অনাথ আশ্রমে মানুষ করেছিলেন এক পাদ্রি, তিনি মারা যাওয়ার পর সে ফের অনাথ। আর অনীশের দেখনদারি হিরোইজম অনেক থাকলেও পকেটের অবস্থা দেখানোর মতো নয়! এমত অবস্থায় তিনজনেরই চলে নানাবিধ কেপমারি করে। এর মধ্যে সুজয়-মিলির মধ্যে বেশ একটা খুনসুটি ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলেও অনীশের এসব বালাই ছিল না। কিন্তু ভুবনজোড়া পাতা প্রেমের ফাঁদে পা পড়ে তারও, রাকার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকেই। এই রাকা চরিত্রটিতেই অভিনয় করছেন নুসরত। অনীশ যে একজন কেপমার তা না জেনেই ওর নায়কোচিত কাজকর্ম দেখে আসলে রাকাই অনীশের প্রেমে পড়ে। এবার চুরি যাওয়া কালী মূর্তি নানা হাত বদল হয়ে এসে পৌঁছয় এই চারজনের কাছে। শেষ অবধি কী হয় এই চারজনের কিংবা দুর্মূল্য মূর্তিটির তা জানা যাবে পর্দায়। পুরোটা কমিক-থ্রিলার গোত্রের। যদিও তার সঙ্গে ডিরেক্টর-ডুয়োর নিজস্ব সিগনেচার রম-কম-এর ছোঁয়াও থাকছে।
আরও পড়ুন-চিত্তরঞ্জন দাশের জন্মদিবস উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য
ছবিতে আরও যাঁরা আছেন, তাঁরা হলেন কাঞ্চন মল্লিক, সুমিত সমাদ্দার, রাজু চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রায় পুরো শুটিংই হচ্ছে কলকাতায়। তবে যেহেতু ছবির সিংহভাগ জুড়েই চেজিং সিকোয়েন্স আছে তাই চেনা কলকাতাকেই নতুনভাবে কাজে লাগিয়েছেন অভিজিৎ-সুদেষ্ণা। সুদেষ্ণা জানালেন, কলকাতার এমনকিছু অঞ্চল এ ছবিতে দেখা যাবে যা আগে কখনও পর্দায় ধরা হয়নি। যেমন চারু মার্কেট থানার পিছনে একটি মন্দিরে শুটিং হয়েছে, যে মন্দিরটার কথা বেশিরভাগ মানুষ জানেনই না। এছাড়া ভবানীপুর এলাকা, হিন্দুস্তান পার্ক, সার্দার্ন অ্যাভিনিউ, লেক গার্ডেন্স, নিউটাউন, রাজারহাট, বারুইপুর এসব চেনা জায়গারই এমন কিছু অঞ্চলে শুটিং হয়েছে যা দর্শক এনজয় করবেন।
এ ছবিতে নুসরতকে দেখা যাবে একেবারে অন্যরকম চরিত্রে। সচরাচর নায়িকা হিসেবে তাঁকে যেমন লুক-এ দেখা যায়, ‘রাকা’র লুক ও চরিত্র দুটোই তার চেয়ে আলাদা। ইন্ডিয়ান ট্র্যাডিশনাল লুক কিন্তু আধুনিক সাহসী একটি মেয়ে। ছবির বাকি প্রোটাগনিস্টদের মাঝে ওই সবচেয়ে পজিটিভ ফোর্স। নাচের স্কুল চালায়। নিজের উপার্জনে কেনা স্কুটিও চালায়। পরিচালকদ্বয় দু’জনেই খুশি নুসরতের সঙ্গে কাজ করে। এই প্রথম নুসরতের সঙ্গে ছবিতে কাজ। সন্তান হওয়ার মাত্র একমাসের মধ্যে কাজে ফেরা যে বেশ অন্যরকম সাহস দাবি করে একথা মেনে নিলেন সুদেষ্ণা। বললেন, মানতেই হবে, নুসরত অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী একটি মেয়ে যে নিজের শর্তে নিজের জীবন চালায় আর সেটা সম্ভব হয় ওর মনের জোর অসম্ভব লেভেলের বলে। সোহমের সঙ্গে নুসরতের জুটি ভীষণ মানিয়েওছে। ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’র মিউজিক করেছে স্যাভি। এই নভেম্বরেই শুটিং শেষ হয়ে যাবে তবে ছবি মুক্তির ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই মুহূর্তে নির্বিঘ্নে শুট শেষ করাই লক্ষ্য।