মোদি জমানায় কাজের আকাল, শিক্ষিত বেকারে ছেয়ে গিয়েছে দেশ

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট : ভারতে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ্যে

Must read

প্রতিবেদন : কর্মসংস্থানের চরম আকাল দেশ জুড়ে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু হাতে কাজ নেই। মোদি জমানার (Modi Government) ভয়াবহ উদ্বেগের এই ছবি চাপা দিতেই ধর্মের তাস দিয়ে বিভাজনের খেলা খেলতে মরিয়া বিজেপি। বছরে দু-কোটি চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ধরা পড়ে যেতেই রামের হাওয়া তুলে ভোটে জেতার কৌশল। সেইসঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণ তীব্র করে দেশের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেনা ছক। যদিও তা দিয়ে আড়াল করা যাচ্ছে না আন্তর্জাতিক সমীক্ষা রিপোর্টের তথ্য। স্পষ্ট হচ্ছে, বিজেপি জমানায় দেশের আমজনতার রুটি-রুজির সংকট কী মারাত্মক জায়গায় পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (আইএইচডি) যৌথ সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের সংখ্যা ২০০০ সালের ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন- কেজরি-মন্তব্য নিয়ে এবার তলব মার্কিন প্রতিনিধিকে

আইএলও এবং আইএইচডির যৌথভাবে সংকলিত ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট, ২০২৪ অনুসারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ভারতে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ২০২২ সালে ভারতের যুবদের সংখ্যা দেশের মোট বেকার জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ ছিল। সমীক্ষা অনুসারে, সমস্ত বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের অংশ, ২০০০ সালে ৫৪.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৬৫.৭ শতাংশ হয়েছে। এ-ছাড়াও বর্তমানে শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে পুরুষদের (৬২.২%) তুলনায় নারীর (৭৬.৭%) সংখ্যা বেশি। সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারতে বেকারত্বের সমস্যা যুবকদের মধ্যে, বিশেষ করে শহুরে এলাকার শিক্ষিতদের মধ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে ঘনীভূত হয়েছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তরুণদের কর্মসংস্থান এবং আংশিক কর্মসংস্থান কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও কোভিড-১৯ মহামারীর বছরে তা ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০০০ সালে মোট কর্মরত যুব জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল স্বনিযুক্ত। পাশাপাশি কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী ১৩% নিয়মিত কাজ ছিল, বাকি ৩৭% ছিল অনিয়মিত কাজ। ২০১২ এবং ২০১৯ সালে এই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ছিল ৪৬%, ২১%, ৩৩% এবং ৪২%, ৩২%,২৬%। ২০২২ সালে তা হয় ৪৭%, ২৮%, ২৫%। সমীক্ষা অনুযায়ী, পরবর্তী দশকে শ্রম কর্মশক্তিতে যুক্ত করতে আরও পদক্ষেপের জন্য পাঁচটি মূল নীতির ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলি হল : কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচার, কর্মসংস্থানের মান উন্নত করা, শ্রম বাজারে বৈষম্য মোকাবিলা, সক্রিয় শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং নীতি শক্তিশালী করা, শ্রম বাজারের ধরন এবং যুব কর্মসংস্থানের জ্ঞানের ঘাটতি পূরণ করা।

আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লিখিত শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভেঙ্কটরামানন অনন্ত নাগেশ্বরন। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করা সঠিক নয়। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষেত্র, এবং যারা লাভজনক কার্যকলাপে জড়িত, তাদেরই নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যেই পরিষ্কার, ভোটের আগে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছোটানো মোদি সরকার (Modi Government) দেশে কর্মসংস্থানের দুরবস্থার দায় নিতে চায় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপি সরকারকে তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও বাম দলগুলি। বিরোধীদের বক্তব্য, দেশের যুব সম্প্রদায়কে নিয়ে মোদি সরকার যে নির্লজ্জ উদাসীনতা দেখাচ্ছে, ভোটবাক্সেই তার সমুচিত জবাব পাবে তারা। দেশে কর্মসংস্থানের বেহাল অবস্থার দায় বিজেপি সরকারের। তা থেকে নজর ঘোরাতেই কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতিসক্রিয়তা, আবার কখনও সিএএ ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।

Latest article