সংবাদদাতা, হলদিয়া : হলদিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে স্বজনপোষণ এবং কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির হদিশ পেল হলদিয়া পুলিশ। বিরোধী দলনেতার ভাই তথা কাঁথির প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীকে যখন কাঁথি থানার পুলিশ পথবাতি কেলেঙ্কারিতে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করছে, সেই সময়ই বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদকের বিরুদ্ধেও পুলিশি অভিযান চলে।
আরও পড়ুন-ডাকযোগে বর্ষীয়ান তৃণমূল কর্মীদের শুভেচ্ছা
যদিও অভিযুক্ত শ্যামল পলাতক বলে জানায় পুলিশ। হলদিয়া পুরসভা সূত্রে প্রকাশ, শ্যামল চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবৈধভাবে নিজের এবং আত্মীয়স্বজনদের ঠিকাদারি সংস্থাকে পুরসভার কাজের টেন্ডার দিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে পুলিশ নথিপত্র সংগ্রহ করে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদার সংস্থাকে পুরো টাকা মেটানোর অভিযোগ-সহ কোথাও কাজ শুরু হয়নি, কোথাও আবার কাজ মাঝপথে আটকে ছিল এমন ঠিকাদার সংস্থাও টাকা নিয়ে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ২০২১ সালের ১৬ অগাস্ট রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব এফআইআর করার নির্দেশ দেন হলদিয়া পুরসভাকে। তৎকালীন এক্সিকিউটিভ অফিসার এফআইআর দায়ের করেন ভবানীপুর থানায়।
আরও পড়ুন-পুজোর একদিন আগে লক্ষ্মীলাভ
অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট মামলা দায়ের করে পুলিশ তদন্তে নামে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের হাতে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য এসেছে। শুক্রবার হলদিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাহুল পান্ডের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল পুরসভায় তদন্তে যায়। ছিলেন হলদিয়ার মহকুমা শাসক তথা বর্তমান পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, বিভিন্ন থানার ওসি ও পুলিশ আধিকারিকরা। শ্যামল যে সময় হলদিয়ার পুরপ্রধান ছিলেন, দিনভর সেই সময়ের বিভিন্ন ফাইল সংগ্রহ করে রাতে দুটি গাড়িতে তা নিয়ে যায় তদন্তকারী দল। শনিবারও অভিযান চালায় পুলিশ। এসডিপিও রাহুল পান্ডে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জেনেছি, শ্যামল আদক নানাভাবে নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজনকে বেনিফিট পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দুর্নীতি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আমরা বেশ কিছু রেকর্ড ইতিমধ্যে সিজ করেছি। মেঘনাথ সাহা ইনস্টিটিউটের কাছে পাকা রাস্তা করা হয়। বেনিয়ম করে ফেক ডকুমেন্ট ব্যবহার করে কিছু মানুষকে টেন্ডার দেওয়া হয়। সেই সংক্রান্ত ফাইল হাতে এসেছে। দুর্নীতির সঙ্গে আর কারা যুক্ত, বিশদে খোঁজ করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন-আজ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো
উল্লেখ্য, শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এই প্রথম নয়। হলদিয়ার পরিবহণ ব্যবসায়ী মোবারক আলির অভিযোগের ভিত্তিতে হলদিয়ার পুলিশ ২০২১ সালের ১২ জুলাই একটি মামলা রুজু করে। সেই মামলায় তৎকালীন চেয়ারম্যান শ্যামল আদক-সহ তাঁর দুই অনুগামী রাজীব পাল ও কালুর বিরুদ্ধে হলদিয়া বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা তোলার সরাসরি অভিযোগ ছিল। তদন্তে নেমে রাজীব ও কালুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা পুলিশি তদন্তে সাহায্য করে। ফলে সে সময় অনেক নথি ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পুলিশ সিজ করে। পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তিকে নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ৬ জনের বেশি গোপন জবানবন্দি দেন। ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপরই শ্যামল কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার এখন তদন্ত করছে সিবিআই।