মণীশ কীর্তনিয়া, কোচবিহার: কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— একটাই বাংলা। উন্নয়নের বাংলাকে ভাগ হতে দেব না। জনসংযোগ কর্মসূচি শুরুর বারো ঘণ্টা আগে কোচবিহারে জনজোয়ারে ভেসে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ ভাগ করতে চায়। আমি এই শব্দবন্ধের বিরোধী। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ একটাই বঙ্গ, সেটা পশ্চিমবঙ্গ। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি শুরু হবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে।
আরও পড়ুন-প্রবল তাপপ্রবাহে ইউরোপে মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে ২০২২, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
কিন্তু সোমবার কোচবিহারে অভিষেক পৌঁছতেই যেন কার্যত সেই যাত্রার সূচনা হয়ে গেল। একই সঙ্গে বার্তা দিলেন অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের। সোমবার কোচবিহারে এবিএন কলেজ মাঠ থেকে হেঁটেই মদনমোহন মন্দিরে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার দু’ধারে জনতা তাঁকে বিপুল উৎসাহে স্বাগত জানায়। কাঁসর-ঘণ্টা-ঢাক— কী ছিল না সেই ভিড়ে! মদনবাড়িতে পুজো দিয়ে অভিষেক জানান, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ একটাই বঙ্গ, সেটা পশ্চিমবঙ্গ। হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে অভিষেকের জন্য হাজির ছিল গাড়ি কিন্তু গড়িতে না উঠে মন্দিরের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করেন তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ঐ মুহূর্ত থেকেই কার্যত শুরু হয়ে যায় ‘জনসংযোগ যাত্রা’। মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরনোর পর অভিষেক বলেন, ‘আমি মানুষের কাছে যাব। গণতন্ত্রে আমি বা কোনও নেতাই শেষ কথা নয়। মানুষই শেষ কথা বলে।’ তার আগে এদিন সকালেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে অভিষেকও ট্যুইট করে দিদিকে (দলনেত্রীকে) লেখেন ‘আপনার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে সব জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে গোটা বাংলায় জনসংযোগ যাত্রা শুরু করতে চলেছি। বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে আমি পৌঁছব। তাদের কথা শুনব।’ এদিন কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে অভিষেক বলেন, আজ পঞ্চায়েতিরাজ দিবস। সেই দিনেই আমরা কর্মসূচি শুরুর জন্য কোচবিহার পৌঁছচ্ছি। এদিন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় (অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) নিয়ে অভিষেক বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় সে যেই হোক।
আরও পড়ুন-সুদানে বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল, ভুগছে প্রবল খাদ্য সংকটে, শুরু অপারেশন কাবেরী
অভিষেককে দেখতে রাস্তার দু’ধারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কোচবিহার থেকে দিনহাটার বামনহাটে যাওয়ার পথে মাঝেমধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। দু-একটি দলীয় দফতরের সামনেও নেমে পড়েন। একটি জায়গায় স্থানীয়রা তাঁকে জমির পাট্টা নিয়ে সমস্যার কথা জানান। শুনে সমাধানের আশ্বাস দেন অভিষেক। এখানকার ভেটাগুড়ি যা বিজেপির মন্ত্রীর বাড়ির এলাকা, সেখানেও অভিষেককে দেখতে কয়েক ঘণ্টা ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশকে দড়ি ফেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। কোচবিহার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের বামনহাটা পর্যন্ত ছিল বাইকমিছিল। ছিল লাখো যুবকের উৎসাহ-উদ্দীপনা। দেশের মধ্যে এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কর্মসূচির সূচনার আগে যে জনজোয়ার আর উদ্দীপনার ছবি ধরা পড়ছে তাতে আগামী দু’মাসে বাংলায় ঝড় তুলতে চলেছে এই কর্মসূচি, তা নিশ্চিত করে বলাই যায়।