প্রতিবেদন : হাতে ছিল কুড়ুল। হয়ে গেল তুলি! কুঠার দিয়ে বন কেটে, গাছ বেচে চলত গরিব মানুষজনের সংসার প্রতিপালন আর পেটের ভাত জোগাড়। ঝাড়গ্রামের লালবাজার গ্রাম যেতে হয় পুলিশ লাইনের মূল রাস্তা থেকে ক্যানেলপাড়ের রাস্তা ধরে ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। এখন যার আদরের নাম খোয়াব গাঁ। সেই গ্রামের আদিবাসী লোধা পরিবারের মানুষজনের এমনতর আদর্শ বদল ও গাঁয়ের ভোলবদলের নয়া স্বপ্নের কথা শোনাতেই এই ভূমিকার অবতারণা। খোয়াব গাঁয়ে ১৩টি লোধা পরিবারের ৭৫ জন মানুষের বসবাস।
আরও পড়ুন-শিল্পশহর মাতালেন সিংহলি সিংহ জয়সূর্য
এতকাল এঁদের সংসার চলত জঙ্গলের গাছ কেটে, বিক্রি করেই। ফলে ক্রমেই সাফ হয়ে যাচ্ছিল জঙ্গল। সেই সময় একদিন হঠাৎই সেই গ্রামে পৌঁছলেন চালচিত্র আকাদেমির শিল্পীরা। গ্রামের মানুষকে তাঁরা বোঝালেন এভাবে বন যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে বিপন্ন হয়ে পড়বে তাঁদের অস্তিত্বই। এর পর ওই শিল্পীর দল লালবাজার গ্রামে গড়লেন ওপেন স্টুডিও। তা দেখে এবং তাঁদের কথা শুনে উজ্জীবিত হয়ে বিকল্প জীবিকার খোঁজে মনোনিবেশ করলেন গরিব আদিবাসীরা। গরিবগুর্বো মানুষগুলো কুড়ুল ফেলে হাতে তুলে নিলেন রঙ আর তুলি।
আরও পড়ুন-জিএসটির বাড়াবাড়ি কেন্দ্রকে চিঠি অমিতের
গোটা গ্রামে চলল রামধনু রঙে নতুন স্বপ্ন আঁকার এক অভিনব নজরকাড়া কর্মযজ্ঞ। সাহিত্যিক শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন নাম দেওয়া খোয়াব গাঁ-র মানুষ রঙিন খোয়াবনামার অংশীদার হলেন স্বেচ্ছায়। বন্ধ হল গাছ কেটে বন ধ্বংসের কাজ। এখন তাঁরা পরের জমিকর্ষণ ও চাষাবাদে হাত লাগিয়ে টাকা পাচ্ছেন। কেউ কেউ রাজমিস্ত্রির কাজও করেন। পেটের টানে একদিন তাঁরা যত গাছ কেটেছেন, তার থেকেও বেশি নতুন বৃক্ষরোপণই এখন তাঁদের স্বপ্ন। পাশাপাশি গোটা গ্রামের দিকে যেদিকেই নজর পড়বে, চোখে ভাসবে স্বপ্ন দিয়ে আঁকা ছবির জগৎ।