বছর ১৩ পর
কথায় বলে আনলাকি থার্টিন। অথচ সেই ১৩ তারিখেই কলকাতার বুকে লেখা হল নতুন ইতিহাস। সৌজন্য বলিউড তারকা সলমন খান। গত শনিবার ইস্টবেঙ্গল ময়দানে তিনি অংশ নিলেন দাবাং শোয়ে। এটাই কলকাতায় তাঁর প্রথম কোনও মেগা ইভেন্ট। ৩৫ বছরের কেরিয়ারে কয়েকবার শহরে এসেছেন। ছবির প্রচারে বা ব্যক্তিগত কাজে। শেষবার এসেছিলেন ১৩ বছর আগে। তাই তাঁর জন্য ছিল দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশেষে তিনি এলেন। ঝড় তুললেন কলকাতার হৃদয়ে।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ডহারবারের সভায় পার্থ, সাম্প্রদায়িকতা বাংলা বরদাস্ত করে না
টিকিটের দাম তিন লাখ
শহরে আসছেন সলমন খান, খবর ছড়িয়েছিল আগেই। শুরু থেকেই তাঁর শো ঘিরে ছিল ব্যাপক উন্মাদনা। টিকিটের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বিভিন্ন দামের। সর্বোচ্চ তিন লাখ। কলকাতার পাশাপাশি দূরের মানুষও মুখিয়ে ছিলেন সল্লু ভাইয়ের এক ঝলক মায়াবী দর্শনের আশায়। ১৩ মে সন্ধে ৬টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। ময়দান-চত্বরে ভিড় জমতে শুরু করে দুপুর থেকেই। নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ছিল কড়া। কলকাতা পুলিশের তৎপরতা ছিল দেখার মতো। ভক্তদের উন্মাদনা চরমে পৌঁছয়, যখন জানা যায় মাঝরাতেই শহরে পা রেখেছেন ভাইজান। বিকেলে সলমন দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
আরও পড়ুন-ছোট ছোট মিথ্যে বড়সড় ক্ষতি
কানায় কানায় পূর্ণ
সেই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিভিন্ন গেটে চোখে পড়ে লম্বা লাইন। মোটামুটি ছটার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ ও গ্যালারি। মঞ্চের পাশে বড় পর্দায় ফুটে উঠছিল শতবর্ষ প্রাচীন লাল-হলুদ ক্লাবের গর্বের ইতিহাস। প্রায় সাতটা নাগাদ শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে মঞ্চ। বেজে ওঠে মিউজিক। আসেন সঞ্চালক মণীশ পল। একে একে ডেকে নেন পূজা হেগড়ে, আয়ূষ শর্মা, প্রভু দেবা, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, সোনাক্ষী সিনহাকে। প্রত্যেকেই নেচে-গেয়ে জমিয়ে দেন আসর। তবে তাঁদের পারফরম্যান্স ছিল অনেকটা বিয়েবাড়ির স্টার্টার আইটেমের মতো। মেনকোর্স মাটন বিরিয়ানি তখনও বাকি।
আরও পড়ুন-সেলাই প্রশিক্ষণে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ
ধামাকেদার এন্ট্রি
সোনাক্ষী সিনহার উপস্থিতিতেই মণীশ পল ঘোষণা করেন ভাইজানের নাম। আসছেন, তিনি আসছেন। উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। কমবয়সি, মাঝবয়সিদের পাশাপাশি ছিলেন পক্বকেশ বয়স্করা। তাঁদের মধ্যেও দেখা যায় প্রবল উত্তেজনা। জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বলিউড মেগাস্টারের বিভিন্ন সুপারহিট ছবির নানা মুহূর্ত। তারপর? মঞ্চে ধামাকেদার এন্ট্রি হয় সলমন খানের। পরনে কালো পোশাক, গালে হালকা দাড়ি। বেজে ওঠে ‘ও-ও জানে জানা’। গিটার হাতে বলিউড ভাইজান। ভুবন ভোলানো হাসি ছড়িয়ে শুরু করেন ডান্স পারফরম্যান্স। তাঁকে দেখে দর্শকরা তখন প্রায় পাগল। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজের চোখকে। কয়েকজন যুবক-যুবতী ভেসে গেলেন আবেগে। স্বপ্নপূরণের আনন্দে চেপে রাখতে পারলেন না কান্না। অনেকেই চিৎকার করে উঠলেন ‘লাভ ইউ ভাইজান’, ‘লাভ ইউ প্রেম’, ‘লাভ ইউ সলমন’। ওঠে তুমুল ঢেউ। মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বাস্তব এবং রূপকথা।
আরও পড়ুন-বাম মুখপত্রে কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন, নিন্দার ঝড়, ঝুলি থেকে বেরোল বেড়াল
খোশমেজাজে ভাইজান
রূপকথার মহানায়ক তখন মঞ্চে। পারফর্ম করে চলেছেন একটার পর একটা সুপারহিট গানের তালে। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’-এর ‘জুতে দো প্যায়সে লো’, ‘পত্থর কে ফুল’-এর ‘কভি তু ছলিয়া লগতা হ্যায়’ অনেকের মনে জাগিয়ে তোলে নয়ের দশকের স্মৃতি। প্রয়াত গায়ক এস পি বালাসুহ্মণিয়মের জাদুকণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ে আলোকালো মাঠ জুড়ে। এরপর সলমন পারফর্ম করেন ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’, ‘দাবাং’, ‘সুলতান’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’, ‘মুঝসে শাদি করোগি’, ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’, ‘কিক’, ‘রেডি’ প্রভৃতি ছবির গানের সঙ্গে। তিনটি পর্বে বলিউড সুলতান পারফর্ম করেন। প্রথম দুটি পর্বে মূলত একা। শেষ পর্বে সোনাক্ষী, জ্যাকলিন, পূজা, প্রভুর সঙ্গে। মাঝে কিছুক্ষণ কথা বলেন। মঞ্চে মিলিত হন কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে। করেন রসিকতা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা ও আজীবন সদস্যপদ। সবমিলিয়ে পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ভাইজান ছিলেন দারুণ মুডে। ইতি টানেন হুড় হুড় দাবাং দাবাং-এর ছন্দে। তিন ঘণ্টার ভরপুর বিনোদন। আনন্দে মাতান দর্শকদের। সিনেমার মতোই তাঁর শো-ও এককথায় পয়সা উসুল।
আরও পড়ুন-মাধ্যমিকে জেলার দাপট, মেয়েরাই আবারও শীর্ষস্থানে
ছাপিয়ে গেলেন সবাইকে
বহু বলিউড তারকা নানা সময় কলকাতায় এসেছেন। পারফর্ম করেছেন। দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। তাঁদের ঘিরেও দেখা গেছে তুমুল উন্মাদনা। তবে সলমন খান ছাপিয়ে গেলেন সবাইকে। তাঁর জমকালো শো ভেঙে দিয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই স্বীকার করলেন, বহুবছর বাদে শহরের বুকে এইরকম মেগা এন্টারটেনমেন্ট শো হল। এমন শো কলকাতা কবে দেখেছে মনে করা বেশ কঠিন। আদৌ হয়েছে কিনা, উঠতে পারে সেই প্রশ্নও। ৫৭ বছরের সলমন গরমের মধ্যেও নিজেকে যেভাবে উজাড় করে দিলেন, সেটা অবিশ্বাস্য। বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের পয়লা নম্বর স্টার মনে করা হয়।
আরও পড়ুন-CBI তলব: ৩-৪বছর ধরে তদন্তের নামে ডাকাডাকি! ক্ষমতা থাকলে গ্রেফতার করার চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
আবার কবে?
শো সফল করার জন্য কলকাতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সলমন খান। অনুরাগীদের ভালবাসায় তিনি আপ্লুত। ভাইজান জানেন, যতই বিতর্কে জড়ান, জীবনে এবং কেরিয়ারে যতই ওঠানামা আসুক, ভক্তরা তাঁর সঙ্গ ছেড়ে যায় না। যাবেও না। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ফ্যান ফলোয়ার। দারুণ অভিনেতা নন। আহামরি নাচেন না। তাঁর শোকেসে শোভা পায় না বড় পুরস্কার। তবু তাঁকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এতটাই পাওয়ার৷ কোটি কোটি মানুষের ভালবাসাই তাঁর পুরস্কার, প্রেরণা। হ্যান্ডসাম খানসাহেব এই মুহূর্তে বিনোদনের সেরা প্যাকেজ, বলিউডের শেষ কথা। লড়াকু মানসিকতা আজ তাঁকে এই উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ভক্তের ভগবান বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন কলকাতার খিদে। আবার কবে তিলোত্তমার বুকে আছড়ে পড়বে সলমন-ঝড়? আপাতত এই প্রশ্নই ভেসে বেড়াচ্ছে সর্বত্র।