সৌমালি বন্দ্যোপাধ্যায়: সালকিয়ার ‘ঢ্যাং বাড়ি’র দুর্গাপুজো এবার ১৫০ বছরে পড়ল। হুগলির খানাকুলের রাজহাটি গ্রামের তৎকালীন জমিদার শ্রীরাম ঢ্যাং ব্যবসার সূত্রে সালকিয়ায় চলে এসেছিলেন। পরে এখানেই ১৪, ব্যানার্জিবাগান লেনের বসতবাড়িতে ১৮৭৩ সালে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন তিনি। সেই থেকেই একই নিয়ম ও রীতি মেনে চলে আসছে ঢ্যাংবাড়ির পুজো। প্রয়াত শ্রীরাম ঢ্যাংয়ের পঞ্চম বংশধররা এখন পুজোর দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। প্রতিমা শিল্পী, পুরোহিত ও ঢাকি পুজোর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসছে। পুজোর সূচনার কয়েক বছর পরে শ্রীরাম ঢ্যাং ‘শ্রীশ্রী দুর্গামাতা ও লক্ষ্মীমাতা সহায়’ নামে একটি এস্টেট চালু করেন।
আরও পড়ুন-প্রাচীন রীতিতে আজও পূজিত ৩০০ বছরের দুর্গা
এই এস্টেট দ্বারাই পুজোর যাবতীয় কাজকর্ম ও খরচাপাতি পরিচালিত হয়। জন্মাষ্ঠমীর দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে এই বাড়িতে পুজোর সূচনা হয়। ওই দিন ভোরে বাড়ির ছেলেরা গঙ্গাস্নান করে গঙ্গামাটি তুলে আনেন। নতুন কাঁচা বাঁশ ও গঙ্গামাটি পুজো করে বাড়ির ঠাকুরদালানে সাবেক কাঠামোতে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। ডাকের সাজের একচালা প্রতিমাই ফি বছর তৈরি হয়। মহাষষ্ঠীর সকালে বেল-বরণ ও ঘট স্থাপন করে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীর বোধন হয়। সপ্তমীর সন্ধ্যায় ১২ জন ব্রাহ্মণকে লুচি, ফল, মিষ্টি ও দক্ষিণা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর সময় ‘ধুনো পোড়ানো’ হয়। বাড়ির মহিলারা মায়ের সামনে সারিবদ্ধভাবে বসে তাঁদের দু’হাতে ও মাথায় একটি করে হাঁড়ি বসানো হয়। তাতে কর্পূর জ্বালিয়ে ধুনো পোড়ানো হয়।
আরও পড়ুন-আজ আসছে পাকিস্তান, ভারত-পাক ম্যাচের দিকে তাকিয়ে বাবর
এরপর ছোট থেকে বড়, বাড়ির সবাই সবাই ওই মহিলাদের কোলে বসে মাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন। নবমীতে হয় কুমারী পুজো। প্রতিদিন সকালে ফল, মিষ্টি ও নারকেল নাড়ু দিয়ে মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় লুচি, হরেক মিষ্টি ও ক্ষীর-রাবড়ি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। সবটাই বাড়ির মহিলারা তৈরি করেন। দশমীর দিন চলে সিঁদুরখেলা। রাতে মাকে বরণ করে সালকিয়ারই শ্রীরাম ঢ্যাং ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। পুজোর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীরাম ঢ্যাংয়ের দুই নাতি শ্যামলকৃষ্ণ ঢ্যাং নির্মলকুমার ঢ্যাং জানান, এবার আমাদের পুজোর ১৫০ বছর পূর্তি।