অত্যাচারী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। একদিকে তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের স্বামী, সন্তান ও ভাইবোনেদের। অন্যদিকে তাঁরা নিজেরাও গৃহকোণের সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা পরিত্যাগ করে দেশজননীর শৃঙ্খল মোচনের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন দলে দলে। তাঁরা ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা তুমুল অত্যাচারিত হয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। কখনও ঘরের ভেতর থেকে, কখনও বা বাইরে বেরিয়ে, কখনও নেপথ্যচারিণী হয়ে, কখনও বা সক্রিয় অংশগ্রহণ ক’রে উপমহাদেশের নারীরা স্বাধীনতা অর্জনে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তেমনই এক অগ্নিকন্যা ছিলেন বাসন্তী দেবী। পরাধীন ভারতে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য কারাবরণ করে অমর হয়ে আছেন ইনি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহধর্মিণী বাসন্তী দেবী (Basanti devi- Pritilata waddedar) ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।
১৮৮০ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বাসন্তী দেবী (Basanti devi- Pritilata waddedar)। তাঁর পিতা বরদানাথ হালদার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবী। তাঁর পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়সে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটো কনভেন্টে ভর্তি হন। শুরু হয় তাঁর ছাত্রীজীবন। জন্ম কলকাতায় হলেও বাসন্তী দেবীর পিতৃগৃহ ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুর তেলিরবাগ গ্রামে। ১৮৯৭ সালে তাঁর বিয়ে হয় চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে। স্বামী চিত্তরঞ্জন ছিলেন স্বনামধন্য ব্যারিস্টার। দেশপ্রেমিক স্বামী দেশের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করায় তিনি গর্ববোধ করতেন এবং স্বামীকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করতেন। এইভাবেই তিনিও দেশের কাজে অর্থাৎ স্বাধীনতা আন্দোলনে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন।
১৯২০ সালে নাগপুর কংগ্রেসে চিত্তরঞ্জন দাশ ঘোষণা করলেন তিনি আইন পেশা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করবেন। এই ঘোষণাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাসন্তী দেবী বলেছিলেন, ‘‘অর্থকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ মনে করি না।’’
চিত্তরঞ্জন দাশ যখন সিদ্ধান্ত নিলেন ভবানীপুরের বাড়িসহ তাঁর সব সম্পদ দেশের কাজে দান করবেন তখন হাসিমুখে বাসন্তী দেবী এই কাজে স্বামীর পাশে দাঁড়ান। তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়েন অসহযোগ আন্দোলনে। চরকা প্রচলনের এবং মেয়েদের তথা নারীশক্তিকে সংগঠিত করার গুরুভার নিজের কাঁধে তুলে নেন বাসন্তী দেবী। ১৯২১ সালের ৭ ডিসেম্বর বড়বাজারে তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। ওইদিন তিনি ননদ ঊর্মিলা দেবী ও নারীকলা মন্দিরের কর্মীবাহিনী নিয়ে বড়বাজারে আইন অমান্য ও হরতাল ঘোষণা করতে গিয়েছিলেন। বাসন্তী দেবীকে গ্রেফতার করায় সাধারণ মানুষ দারুণ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। দিকে দিকে জ্বলে ওঠে ক্ষোভের আগুন। জনগণের এই অগ্নিরোষে ভীত হয়ে ইংরেজ প্রশাসনের পুলিশ বাসন্তী দেবীকে ছেড়ে দেয়। বাসন্তী দেবীকে গ্রেফতারের খবর চাউর হতেই বাংলার তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দেশের কাজে এগিয়ে আসতে থাকেন। এরপর গ্রেফতার হন চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২২ সালে বাসন্তী দেবী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের সভানেত্রীর ভূমিকা পালন করেন। এখানে উল্লেখ্য, তিনি ও চিত্তরঞ্জন দাশ মিলে সম্পাদনা করতেন তৎকালীন ‘বাংলার কথা’ পত্রিকা।
১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর বাসন্তী দেবী কিছুটা ম্রিয়মান হয়ে পড়েন। একবছরের মধ্যে তাঁদের একমাত্র পুত্রেরও মৃত্যু হয়। পুত্র চিররঞ্জনও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কারারুদ্ধ হন। বাসন্তী দেবীর গোটা পরিবারটিই দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত খুব একটা দেখা যায় না।
ভজন-পূজন-আরাধনা ছেড়ে দেবালয়ের রুদ্ধদ্বার তথা সুখী গৃহকোণ ত্যাগ করে পথে নেমে দেশের কাজে এমন নিঃস্বার্থ আত্মনিয়োগ সেই উত্তাল সময়ে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সুভাষ চন্দ্র বসু ও বিধান চন্দ্র রায়ের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন বাসন্তী দেবী।
দীর্ঘ জীবনে বাসন্তী দেবীকে সহ্য করতে হয়েছিল অনেক পারিবারিক বিপর্যয় ও ব্যক্তিগত শোক। ১৯৭৪ সালের ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন বাসন্তী দেবী। কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে তাঁর স্মৃতি সমাধি বর্তমান। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ভারতমাতার অবিস্মরণীয় এই অগ্নিকন্যাকে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম বাসন্তী দেবী।
বাসন্তী দেবীর মতোই অগ্নিযুগের আরেক বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Basanti devi- Pritilata waddedar)। বাংলার প্রথম নারী শহিদ হিসেবে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন প্রীতিলতা।
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা। তাঁর পিতা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভা দেবী। তাঁদের পরিবারের আদি পদবি ছিল দাশগুপ্ত। পরিবারের কোনও পূর্বপুরুষ নবাবি আমলে উপাধি পেয়েছিলেন ‘ওয়াহেদেদার’, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার ডাকনাম ছিল রানি। অন্তর্মুখী, লাজুক ও মুখচোরা স্বভাবের প্রীতি তাঁর ছোটবেলায় গৃহস্থালির সমস্ত কাজে তাঁর মাকে সাহায্য করতেন।
ডাঃ খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৯১৮ সালে প্রীতির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মেধাবী এই মেয়েটিকে স্কুলের শিক্ষকেরা খুব পছন্দ করতেন। ইতিহাসের ক্লাসে উষাদির কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে প্রীতিলতা শুনতেন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইয়ের বীরগাথা। স্কুলে তাঁর অন্যতম বান্ধবী ছিলেন কল্পনা দত্ত, যিনি পরবর্তীকালে বিপ্লবী হয়েছিলেন। দু’জনেই বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। রানি লক্ষ্মীবাইয়ের বীরত্বের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা দু’জনেই দেশের জন্য লড়াইয়ের কথা ভাবতে থাকেন। তখন থেকেই তাঁরা নিজেদের অকুতোভয় বিপ্লবী হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। স্কুলে প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিল আর্টস তথা সাহিত্য। নিজে নাটক লিখতেন। তাঁর লেখা নাটক ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর মঞ্চস্থ করেন তাঁর বান্ধবীরা। ভাল বাঁশি বাজাতে পারতেন প্রীতিলতা।
আরও পড়ুন-শিক্ষকদের টিউশন আইনত নিষিদ্ধ হল
এই সময়েই তাঁর বিয়ের প্রস্তাব আসে বাড়িতে। কিন্তু প্রীতির প্রবল আপত্তিতে বিয়ের ব্যবস্থা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৩০ সালে আইএ পরীক্ষায় ঢাকার ইডেন কলেজে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সার্বিকভাবে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন প্রীতি। এই সময় বিপ্লবীদের সংগঠন ‘শ্রী সংঘ’- এর মহিলা শাখা ‘দীপালি সংঘ’এর সদস্যা হন প্রীতি। এঁরা নারীশিক্ষা প্রসারের কাজের সঙ্গে গোপনে মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত করার কাজ করতেন। আইএ পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কারণে মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি পেয়ে কলকাতায় বেথুন কলেজে পড়তে যান প্রীতি। বিএ-তে তাঁর অন্যতম বিষয় ছিল দর্শন। দর্শনে তিনি অনার্স করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিপ্লবের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে অনার্স পরীক্ষা তাঁর আর দেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে স্কুলে শিক্ষকতার কাজেও যুক্ত হন প্রীতিলতা।
স্কুলজীবনে উষাদির কাছ থেকে পাওয়া ‘ঝাঁসির রাণী’ বইটি প্রীতিলতার (Basanti devi- Pritilata waddedar) জীবনে গভীর রেখাপাত করে। এছাড়াও প্রীতির নিকটাত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার, যিনি ছিলেন বিপ্লবীদলের কর্মী, তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত বিপ্লবীদের কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন। প্রীতির তখন দশম শ্রেণি। লুকিয়ে লুকিয়ে তখন পড়েন ‘দেশের কথা’, ‘বাঘাযতীন’, ‘ক্ষুদিরাম’ আর ‘কানাইলাল’। এই সময় দাদা পূর্ণেন্দুর কাছে বিপ্লবী দলে যোগদানের গভীর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন প্রীতি। কিন্তু মহিলাদের বিপ্লবী দলে যোগদানের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকায় তখন তাঁর ইচ্ছেপূরণ হয়নি।
পরবর্তীকালে ১৯৩২ সালের মাঝামাঝি কোনও এক সময় প্রীতিলতা তাঁদের ধলঘাট ক্যাম্পে সূর্য সেন ও নির্মল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। মহিলাদের বিপ্লবী দলে নেওয়া নিয়ে কয়েকজনের আপত্তি থাকলেও শেষপর্যন্ত প্রীতিলতাকে দলে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কারণ দলের অন্যান্যদের যুক্তি ছিল অস্ত্র পরিবহণকারী মহিলারা পুরুষদের মতো এতটা সন্দেহভাজন হবেন না। সূর্য সেন এবং তাঁর বিপ্লবী দল চট্টগ্রামের মহাপরিদর্শক ক্রেগকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এই কাজের জন্য নিযুক্ত বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তী ভুল করে ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এসপি এবং তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করে। তাঁরা সেই রাতেই গ্রেফতার হন। বিচারে রামকৃষ্ণের ফাঁসির হুকুম হয় এবং কালীপদকে সেলুলার জেলে নির্বাসন দেওয়া হয়। ফাঁসির রায় ঘোষণার আগে পর্যন্ত কলকাতার আলিপুর জেলে রাখা হয় ধৃত বিপ্লবীদের। প্রীতিলতা তখন দলের নির্দেশে জেলে গিয়ে বোন পরিচয়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে প্রায় চল্লিশবার দেখা করেন।
সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের কর্মী হিসেবে প্রীতিলতা টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখলের মতো অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৩২ সালে সূর্য সেন পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করেন, যেখানে একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশের অনুমতি নেই’।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাতদিন আগে কল্পনা দত্ত গ্রেফতার হওয়ায় প্রীতিলতাকে এই আক্রমণের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আক্রমণের দিন নির্ধারিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ধরা পড়লে গ্রুপের সদস্যরা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করবেন। হামলার দিন প্রীতি পাঞ্জাবি পুরুষের পোশাক পরে ছদ্মবেশ ধারণ করেন। সেদিন তাঁর সহযোগীরা ছিলেন কালীশঙ্কর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী, মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে, পান্না সেন প্রমুখ বিপ্লবীগণ। সকলেই ছিলেন ছদ্মবেশে। রাত ১০টা ৪৫ মিঃ নাগাদ তিনটি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে বিপ্লবীরা আক্রমণ চালায়। ভবনে আগুন লাগানো হয়। তখন ক্লাবের ভেতরে প্রায় ৪০ জন লোক ছিল। ক্লাবে উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ অফিসারের হাতেও রিভলভার ছিল। তারাও পাল্টা গুলি চালালে একটি গুলি প্রীতির হাতে লাগে। গুলিবিদ্ধ আহত প্রীতি ঔপনিবেশিক পুলিশের হাতে গ্রেফতারি এড়াতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পটাশিয়াম সায়ানাইড গিলে ফেলেন। পরদিন অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ প্রীতিলতার লাশ উদ্ধার করে। তাঁর মৃতদেহ তল্লাশি করে পুলিশ কয়েকটি লিফলেট, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি, গুলি, বাঁশি এবং তাঁদের আক্রমণের পরিকল্পনার খসড়া পায়। ময়না তদন্তে দেখা যায় বুলেটের আঘাত নয়, পটাশিয়াম সায়ানাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে প্রীতিলতার। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রীতিলতার এই আত্মাহুতি তৎকালীন যুবসমাজকে দেশের শৃঙ্খলমোচনে ঝাঁপিয়ে পড়ায় উদ্বুদ্ধ করে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে কিংবদন্তি বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আজও জীবিত রয়েছেন লক্ষকোটি মানুষের হৃদয়ের গভীরে। তিনি বিপ্লবী বাঙালি নারী হিসেবে অসীম সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের নিদর্শন রেখে গেছেন। অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা আজও দেশের নারীশক্তির ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা। মাত্র ২১ বছরের জীবনে দেশের স্বাধীনতার জন্যে তাঁর অসীম ত্যাগ, তীব্র দেশপ্রেম ও আপসহীন বিপ্লবী মতাদর্শ আজও দেশবাসী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তাঁর স্মরণে বাংলাদেশে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁকে ‘নারীদের জন্য আলোর বাতিঘর’ সম্মানে স্মরণ করা হয়। তাঁর নামে চট্টগ্রামে রয়েছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সড়ক। পাহাড়তলি রেলওয়ে স্কুলের সামনে স্থাপন করা হয়েছে একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য মূর্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার নামাঙ্কিত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয় তো বটেই, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনোলজিকাল ইনস্টিটিউট এবং ছাত্রীনিবাস-সহ শিক্ষানিকেতন আজও সগৌরবে বর্তমান।
তাঁর মাকে লেখা এই বীরকন্যার শেষ চিঠিটি বিপ্লবী সূর্য সেন প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দেশের জন্য প্রীতিলতার আত্মাহুতির পর কল্পনা দত্তের লেখা থেকে জানা যায় যে, প্রীতির বাবা দুঃখে-শোকে পাগলের মতো হয়ে যান, কিন্তু প্রীতির মা মেয়েকে হারানোর প্রবল যন্ত্রণার মধ্যেও মেয়ের গভীর দেশপ্রেমের জন্য সবসময় গর্ব অনুভব করতেন এবং বলতেন, ‘‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে।’’