সৌন্দর্য, যৌবন এবং সুস্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখার জন্য চিরকালীন প্রয়াস থাকে মানব সমাজের। আয়ুর্বেদের সঙ্গে মেডিক্যাল সায়েন্স কাজে লাগিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে এবং তাকে আরও সুন্দর করে তুলতে তৈরি হয়েছে কসমেটোলজি (Cosmetology)। একটি কোর্সের মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্পেশালিস্ট হলে পেশার জগতে সুযোগ রয়েছে অসংখ্য। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য নিয়ে মানুষের মধ্যে যেভাবে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে কসমেটোলজি (Cosmetology) বিষয়ে পেশার দরজা খুলে যাচ্ছে অনবরত।
কসমেটোলজিস্ট কী?
বিউটি থেরাপি থেকে শুরু করে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট সমস্ত রকমের কাজে নিযুক্ত থাকতে হয় কসমেটোলজিস্টদের। অনেক ক্ষেত্রে কসমেটোলজিস্টরা বিউটিশিয়ান নামেও পরিচিত হন। বর্তমানে কসমেটোলজি (Cosmetology) কোর্সের বিভিন্ন শাখা তৈরি হয়ে গেছে। হেয়ার, স্কিন এবং বডি ট্রিটমেন্ট নিয়ে স্পেশ্যালাইজেশন করা যেতে পারে এই বিষয়ে। কসমেটোলজিস্টকে দক্ষ হতে হয় মেক-স্কিন কেয়ার এবং বিউটি প্রোডাক্ট সমন্ধে। মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকটিও বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হয়। উপযুক্ত কথোপকথন, আলোচনার দক্ষতার সঙ্গে সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণীয়তা এবং সৌন্দর্যকে আরও ভাল করে তোলার চোখ থাকতে হয় এই পেশার ক্ষেত্রে।
কসমেটোলজিস্টদের জন্য কী কোর্স?
বর্তমানে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে কসমেটোলজি (Cosmetology) সম্পর্কে কোর্স করানো হয়ে থাকে। কসমেটোলজির উপর ডিপ্লোমা কোর্স এবং কোনও বিশেষ বিষয়ে স্পেশ্যালাইজেশন করে পেশার জগতে প্রবেশের পথ সুগম হয়। এই ধরনের কোর্সগুলিতে হেয়ার কাটিং, স্টাইলিং, কালারিং, পার্মানেন্ট ওয়েভিং, মেনিকিওর, পেডিকিওর থেকে শুরু করে নেইল ডিজাইনিং, মেক- ফেসিয়াল, স্কিন কেয়ার, স্কিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার ট্রিটমেন্ট একাধিক বিষয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। হেয়ার, স্কিন বা নেইলের ওপর স্পেশ্যালাইজেশন করে হেয়ার স্টাইলিস্ট/হেয়ারড্রেসার, স্কিন কেয়ার স্পেশালিস্ট বা নেইল টেকনিশিয়ান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রফেশনাল কোর্স হিসাবে বিউটিকেয়ার, স্পা ম্যানেজমন্ট, হেয়ার ট্রিটমেন্টের মতো কোর্সও করানো হয়ে থাকে। ১ বছর, ছয় মাস বা তিন মাসেরও কোর্স হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
কোর্সের বিষয় কী থাকে?
কসমেটোলজি কোর্স করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা চাওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত মাধ্যমিক বা সমতুল উত্তীর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র এই ধরনের কোর্সের জন্য গ্রহণযোগ্য হন। তবে এই ধরনের কোর্সের শেষে কাজের জন্য লাইসেন্স- প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দ্য অ্যাসোসিয়েশন অফ বিউটি থেরাপি অ্যান্ড কসমেটোলজি থেকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। স্যালুন বা স্পা করতে চাইলে লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বর্তমানে পাবলিক হেলথ, হাইজিন এবং প্রফেশনাল এথিক্সের কথা মাথায় রেখে লাইসেন্সের আবশ্যিকতা আনা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে শেখার সুযোগ থাকলেও নিজের দক্ষতা এবং উত্কর্ষতা এই ধরনের পেশায় নিজেকে উন্নত করতে অধিক কার্যকরী হয়। উন্নত মানের পরিষেবা প্রদানের জন্য কাস্টমারের সঙ্গে সঠিকভাবে আলোচনা করে, তার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে এবং তার পাশাপাশি নিজের মতামতকে তুলে ধরার ক্ষমতা রাখতে হয় বেস্ট বিউটি সার্ভিসের জন্য।
আরও পড়ুন: আইএনটিটিইউসি শ্রমিকরা বলবেন, নেতারা শুনবেন
কোথায় করানো হয়?
একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ধরনের কোর্সের জন্য। মূলত দিল্লি, মুম্বইয়ে এই সমস্ত কোর্স করার প্রতিষ্ঠানের আধিক্য রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল পলিটেকনিক ফর উইমেন দিল্লি, ল্যাকমে ট্রেনিং অ্যাকাডেমি মুম্বই, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেট মেডিসিন কলকাতা, তামিলনাড়ু ওপেন ইউনিভার্সিটি, ইনস্টিটিউট অফ কসমেটিক্স অ্যান্ড লেজার সায়েন্স মুম্বই—এই সব প্রতিষ্ঠানে কসমেটোলজি নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বিদেশে এই ধরনের কোর্স নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, প্যারিসে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কী ধরনের কাজ?
একজন কসমেটোলজিস্টকে হেয়ার কাটিং, ট্রিমিং, শেপিং থেকে শুরু করে কালারিং, ব্রাশিং, কম্বিং বিভিন্ন কাজে দক্ষ হতে হয়। স্কিন থেরাপি বা ট্রিটমেন্টের উপর যাঁরা কাজ করতে চান তাঁদের কসমেটিক্স, ক্রিম, লোশন প্রোডাক্ট সম্বন্ধে বহুল ধারণা, মেক-ম্যাসাজিং ট্রিটমেন্ট, থেরাপি প্রভতি নানা ধরনের কাজ রয়েছে। এমনকী ক্রনিক বা স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্টের জন্য পরামর্শ প্রদানের ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হয়। আধুনিক যুগে বিউটি ট্রিটমেন্টে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ, প্রোডাক্টের উন্নতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সমস্ত প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপডেট, ইকুইপমেন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। কাস্টমার স্যাটিসফিকেশনের দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়। কোনও এক জায়গায় কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এবং তার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পেশায় উন্নতি করার রাস্তা রয়েছে।
পেশার চাহিদা কেমন?
সার্বিকভাবে সারা বিশ্ব তথা ভারতেও এই ধরনের পেশার উন্নতি হচ্ছে খুব দ্রুত। মানুষের মধ্যে ফ্যাশন এবং বিউটি সম্বন্ধে সচেতনতা বিউটি কেয়ার ইউনিট, পার্লার বা সেলুনের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করছে প্রতিনিয়ত। নামী বিউটি কেয়ার প্রতিষ্ঠান, সেলুন, পার্লারে কাজের চাহিদা গত কয়েক বছরে কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে এই কোর্সের পর নিজের জন্য ব্যবসা চালু করার বিষয়টিও ফলপ্রসূ। হেয়ারস্টাইলিস্ট বা কসমেটোলজিস্ট হিসাবে নিজের সেলুন, পার্লার বা স্পা সেন্টার চালু করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করার বহুল সুযোগ রয়েছে। এর বাইরেও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজের সুযোগ রয়েছে অনেক। কসমেটোলজির প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানগুলিতেও পরবর্তীকালে কনসালট্যান্ট বা প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করার রাস্তাও খোলা থাকছে।
১) মানুষের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে এবং তাকে আরও সুন্দর করে তুলতে তৈরি হয়েছে কসমেটোলজি।
২) কসমেটোলজিস্টকে দক্ষ হতে হয় মেক-স্কিন কেয়ার এবং বিউটি প্রোডাক্ট সম্বন্ধে।
৩) হেয়ার কাটিং, স্টাইলিং, কালারিং, পার্মানেন্ট ওয়েভিং, মেনিকিওর, পেডিকিওর থেকে শুরু করে নেইল ডিজাইনিং, মেক-ফেসিয়াল, স্কিন কেয়ার, স্কিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার ট্রিটমেন্ট একাধিক বিষয়ে পড়ানো হয়ে থাকে এই ধরনের কোর্সগুলিতে।
৪) সমস্ত প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপডেট, ইকুইপমেন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
৫) নামী বিউটি কেয়ার প্রতিষ্ঠান, সেলুন, পার্লারের পাশাপাশি নিজের জন্য ব্যবসা চালু করার বিষয়টিও ফলপ্রসূ, এমনকী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজের সুযোগ রয়েছে অনেক।