বহুগামিনী

যতই ছুঁতমার্গ থাকুক না কেন যুগ যুগ ধরে বহাল তবিয়তেই টিকে রয়েছে পরকীয়া। আড়াল-আবডাল সরিয়ে আজ তা প্রকাশ্যে। কারণ, এখন রয়েছে বিভিন্ন এক্সট্রা ম্যারিটাল ডেটিং অ্যাপও। সেখানে নাম লেখালেই কেল্লাফতে। সেইসব অ্যাপের সমীক্ষা বলছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে এখন পুরুষের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে মহিলারা। ভারতের ১০ জন মহিলার মধ্যে ৭ জনই রয়েছেন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। তাই পুরুষ নন বহুগামিনী আসলে নারীই। সত্যিই কি তাই? কিন্তু কেন? পরকীয়া এক জটিল প্রশ্ন, বিশিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যাঁর উত্তর খুঁজলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

পুরুষরাই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে (Extramarital affair) বেশি আগ্রহী। নারী-পুরুষের সম্পর্কে প্রতারক একজন পুরুষই হন। এ যেন এক চিরাচরিত ভাবনা। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে অন্যকথা। পুরুষেরাই একগামী। নারীরাই নাকি বৈচিত্র্য খোঁজেন যৌন সম্পর্কে। সেটা না পেলেই তাঁরা অন্য পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হন। এই কারণেই পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি পরকীয়ায় জড়ান। তাই বহুগামিনী নারী।
এক্সট্রা ম্যারিটাল ডেটিং অ্যাপ গ্লিডেন ৩০-৬০ বছর বয়সি শহুরে, শিক্ষিতা, কর্মরতা মহিলাদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে প্রায় ৪৮ শতাংশ মহিলা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সন্তানের মা-ও বটে। এই সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে ভারতের ১০ জনের মধ্যে ৭ জন মহিলা স্বামীর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। তাহলে এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশনশিপ বা পরকীয়া কি নতুন কোনও হাওয়া? অতি আধুনিকীকরণ, গ্লোবালাইজেশন, পাশ্চাত্যকরণ এসব ভারী ভারী শব্দের ফলশ্রুতি? আর মহিলারা কি সেই জোয়ারে গা ভাসিয়ে পরকীয়ার রেসে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে গেছেন? পরকীয়া এক জটিল প্রশ্ন যার উত্তর লুকিয়ে আছে অতীতে।
ঋগ্বেদ দিয়ে যদি শুরু করি। বৈদিকযুগের প্রথম গ্রন্থের একটি মন্ত্র হল—
‘অভ্রাতরো ন যোষণো ব্যন্তঃ পতিরিপো ন জনয়ো দুরেবাঃ। / পাপসঃ সত্তো অনৃতা অসত্যা ইদং পদমজনতা গভীরম্।’
এখানে মন্ত্রে পতি বিদ্বেষেণী দুরাচারিণীকে পাপী বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে পরকীয়া আজকের হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও পশ্চিমি ট্রেন্ড বা একাকিত্ব, একঘেয়েমিতার ফলশ্রুতি নয়। ঋগ্বেদের যুগেও পরকীয়া ছিল। তাই পরকীয়া প্রাচীন।
ঋগ্বেদে পরকীয়াকে ‘পাপ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে সেই পাপ হল নৈতিক। ঋগ্বেদের বেশ কিছু স্কন্ধে পরপুরুষের জন্য একজন নারীর হৃদয়ের উৎকণ্ঠার বর্ণনাও করা হয়েছে। অর্থাৎ নারীর সঙ্গেও পরকীয়া সংযোগ সেই সময় থেকেই।

মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায়ে বলা হয়েছে পরকীয়া গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। যে অপরাধের শাস্তি ভয়ঙ্কর। সেখানে আলাদা করে মহিলাদের কথা বলা রয়েছে। যেসব মহিলা অকারণে স্বামী ত্যাগ করে পরপুরুষের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হবেন তাঁদের শাস্তি হিসেবে মনু বলেছেন, তাকে নির্জন স্থানে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে হবে। আচার্য মনু সেখানে এও বলেছেন, অন্য পুরুষের দ্বারা উৎপন্ন পুত্র ওই স্ত্রীর স্বামীর সন্তান বলেই পরিগণিত হবে, জৈবিক পিতার নয়।
মনুসংহিতার একাদশ অধ্যায়ে পরকীয়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ না বলে প্রায়শ্চিত্তযোগ্য পাপ বলা হচ্ছে।
উদ্দালকপুত্র শ্বেতকেতুর মা যখন এক ব্রাহ্মণের সহগামিনী হয়েছিলেন এবং সেই পুরুষের সঙ্গে চলে যাচ্ছিলেন তখন শ্বেতকেতু ভীষণ রেগে গেলেন। পিতা উদ্দালক তাঁকে নিবৃত্ত করে বললেন, ‘তুমি রাগ কোরো না পুত্র, এটাই স্ত্রীলোকের চিরাচরিত ধর্ম, সে গাভীর মতো স্বাধীন। এই দেহের অধিকার তার। কাজেই অন্যগমন অন্যায় নয়।’ শ্বেতকেতু কিন্তু আশ্বস্ত হলেন না সেই কথায়। তিনি পশুপক্ষীদের মতো প্রাচীন আচার বাতিল করে নারীর একপতিত্বের ফরমান জারি করলেন।

মজার বিষয় হল, স্মৃতিশাস্ত্রে পরকীয়াকে কুকর্ম বললেও সেখানে পরকীয়ার অপরাধে পুরুষের বেশি শাস্তি এবং নারীর কম শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। আবার নারদস্মৃতিতে বলা হয়েছে কোনও বিবাহিত নারী যদি অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্ভোগে লিপ্ত হন পারস্পরিক সম্মতিতে তা হলে তাকে অপরাধ বা অন্যায় বলা যাবে না।
রামায়ণ, মহাভারতের যুগে, দ্বাপর যুগে নারীর পরকীয়া (Extramarital affair) নিন্দনীয় ছিল না। বরং তাঁদের পরপুরুষের গমনের ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। অম্বিকা আর অম্বালিকা ব্যাসদেবের সঙ্গে পরকীয়াই করেছিলেন বইকি! ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডু তো সেই পরকীয়ারই ফসল। পাণ্ডুর স্ত্রী কুন্তীর গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া ভিন্ন ভিন্ন দেবতার ঔরসজাত সন্তানেরাও পরকীয়ারই ফসল। দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী কি এক অর্থে পরকীয়া নয়!
তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন যখন বনবাসের শাস্তি মেনে বেরিয়ে পড়েছিলেন তখন পথে সুপর্ণের স্ত্রী উলুপির সঙ্গে তাঁর পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়। উলুপি অনেক দিন অর্জুনের সঙ্গে বসবাস করেন। উলুপির গর্ভে অর্জুনপুত্র ‘ইরাবান’-এর জন্ম হয়।

দক্ষের সাতাশ জন কন্যার স্বামী হলেন চন্দ্রদেব। তিনি দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী অর্থাৎ গুরুপত্নী তারাকে অপহরণ করেছিলেন। তারারও এতে সম্মতিই ছিল এবং একসঙ্গে বহুদিন কাটিয়েছিলেন তিনি চন্দ্রের সঙ্গে। তাঁদের পুত্রের নাম হয় ‘বুধ’। আয়ান ঘোষের স্ত্রী রাধার সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেম নিয়ে পাগল গোটা জগৎ সংসার। সেই প্রেম সর্বজনবিদিত এবং স্বীকৃত এবং পূজিত। রাধা করেছিলেন সেই মধুর পরকীয়া যে-রসে জগৎ আজও মজে।
কামসূত্র-র রচয়িতা বাৎস্যায়ন তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন যৌনতার একটি উদ্দেশ্য কখনওসখনও সন্তান-উৎপাদন হতে পারে, কিন্তু সেটাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। স্ত্রীলোক পশুদের থেকে আলাদা, কারণ সে সন্তানধারণের উপযুক্ত সময় ছাড়াও রমণে প্রবৃত্ত হয়। পুরুষের মতো নারীও আনন্দের জন্যই যৌনতা চায়। এমনকী, যদি কোনও স্ত্রীলোক বোঝেন যে তাঁর স্বামী সন্তোষজনক যৌনসঙ্গী নন, তা হলে তিনি সেই যৌনসঙ্গীকে ত্যাগ করতে পারেন। বিধবারাও যৌনতৃপ্তির জন্য সঙ্গী খুঁজতে পারেন। এমন এক অতি-আধুনিক ভাবনাচিন্তা সেই যুগে প্রবল ভাবেই ছিল।

আরও পড়ুন- প্রায় ৭২% ভোট, হারের ভয়ে মেজাজ হারালেন ট্রেনি সভাপতি

আসলে বিজ্ঞান বলছে একজন নারী সম্পর্কে যৌনবৈচিত্র্য চান বেশি। কিন্তু অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখেন কারণ উল্টো দিকের মানুষটা বিশ্বস্ত হবে না এই ভেবে।
আসলে নরনারীর বহুগামিতা আদিম অভ্যেস। আদিম সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সেখানে মায়ের নামেই পরিচিতি পেতেন সন্তানরা। নারী ছিলেন না কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ফলে নারী তার পছন্দমতো পুরুষসঙ্গী বেছে নিতেন এবং ত্যাগও করতেন। রমণীর নিজের ইচ্ছেতেই পুরুষের সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হতেন। যুগ বদলেছে সেই সঙ্গে বদলেছে গোটা চিত্রটাই। যেমন বদলেছে সম্পর্কের সমীকরণ। তেমনই বদলেছে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কের (Extramarital affair) সমীকরণও। আড়াল আবডাল আর নেই। এই বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিক অনিরুদ্ধ চৌধুরী মনে করেন,
‘বর্তমান সমাজে নারী পুরুষের বাধাবন্ধনহীন অবাধ মেলেমেশা। আমাদের কালচারের একটা পশ্চিমীকরণ ঘটেছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীর অবাধ প্রবেশাধিকার। হাটে-বাজারে, বাসে-ট্রামে রাস্তায়, দোকানে, রেস্তোরাঁয়, অফিসে, কোর্ট-কাছারিতে, মহাকাশে, সমুদ্রগর্ভে নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ তারা স্বাবলম্বী। পথেঘাটে একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে ধূমপান এখন ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বেশি করেন। সোশ্যাল মিডিয়া দিয়েছে ফ্রি মিক্সিংয়ের সিলমোহর। এখন প্রকাশ্যে বলেকয়ে নিজের পছন্দের বন্ধু বেছে নিয়ে ভার্চুয়াল সম্পর্কে যাচ্ছেন নারী। সবসময় শরীরের দাবিতে নয়, অনেকেই মনের দাবিতেও গড়ছেন সম্পর্ক। তার মধ্যে ক্ষতি কিছু নেই। কিন্তু একটা সীমারেখা থাকা দরকার। নিয়ন্ত্রণের জায়গাটা নিজের কাছে। পশ্চিমের অনুকরণ নয়, আমাদের ঐতিহ্যের, সংস্কৃতির আধুনিকীকরণ দরকার। একটা ভারসাম্য থাকতেই হবে।’
এক্সট্রা ম্যারিটাল ডেটিং অ্যাপ ‘গ্লিডেন’-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৭০ শতাংশ বিবাহিত নারী যৌনতার জন্য পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। ২৬ শতাংশ কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই পরকীয়ায় জড়িয়েছেন আর ১৫ শতাংশ ওপেন রিলেশনশিপে অর্থাৎ সঙ্গীকে জানিয়েই তাঁরা অন্য সম্পর্কে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অ্যালিসিয়া ওয়াকার বিবাহিত পুরুষ-নারীর মধ্যে একটি সমীক্ষা চালান। সেই রিপোর্ট বলছে পরকীয়া (Extramarital affair) সম্পর্ক পুরুষদের থেকে নারীরাই বেশি উপভোগ করেন। কেন? এর কারণ ঠিক কী? এই প্রসঙ্গে মনোচিকিৎসক প্রথমা চৌধুরী বললেন, ‘এটা আগেও ছিল। তখন মেয়েরা অত সহজে প্রকাশ করত না। এখন নৈতিকতার দিক থেকে মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে, তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থান বদলেছে। তাঁরা আজ আর পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল নয়। ফলে বৈবাহিক সম্পর্কে সুখী না হলে সহজ ভাবে একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের মতো করে ভাল থাকার রসদ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে অনেক সময় সেখানেই ঘটছে বিপদ। পরকীয়ার ফলে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে আকছার। আবার আমি কাউকে ভালবাসি মানেই অন্য কাউকে আমার ভাল লাগতে পারে না বা ভালবাসতে নেই এমনটা মানেন না বহু মহিলাই ফলে তাঁরাই নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। বৈবাহিক সম্পর্কে একঘেয়েমি, বোরডম থেকেও মেয়েরা ঝুঁকছে পরকীয়ায়। আরও একটা বড় কারণ হল সোশ্যাল মিডিয়া। আগে যেগুলো ভাবাই যেত না এখন তা হাতের মুঠোয়। বন্ধুত্ব করতে চান? ডেটিং করতে চান? হাতের কাছে রসদ ভর্তি।
অনলাইন ফ্লার্টিং, ভার্চুয়াল ফ্লার্টিং— এইসব শব্দ এখন ট্রেন্ডি। ফলে বিষয়টা অনেক বেড়েছে।

পরকীয়া (Extramarital affair) করতে আর দেখা করতে হয় না। অনলাইনে যৌনইঙ্গিতবাহী চ্যাটিং ছবি শেয়ার করা, ফ্যান্টাসাইজ করা এখন খুব আম-বিষয়। দাম্পত্যের কমিটমেন্ট দিনে দিনে হয়ে যায় সোনার পাথরবাটি। পাঁচবছর গড়াতেই সব কেমন হালকা। দায়িত্ব-কর্তব্যের জানালা দিয়ে প্রেম উড়ে যায় কবেই। লুকিয়েচুরিয়ে চোখের জল ফেলা, কষ্ট পাওয়ার দিন শেষ। তাই পুরনো সম্পর্কের অনুভূতি মুছে নতুন সম্পর্ক গড়ছেন মেয়েরা।
তাহলে কি এই মুহূর্তে পরকীয়া বা এক্সট্রা ম্যারিটাল সম্পর্ক ট্রেন্ডে? এই প্রশ্নের উওরে সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় ভিন্নমত পোষণ করলেন। তিনি বললেন, আমি একেবারেই এইভাবে কোনও কিছু ক্যাটাগরাইজ করার পক্ষপাতী নই। মানুষের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ থাকে। সেখানে তারতম্য ঘটিয়ে দেয় সংযম। এর সঙ্গে গ্লোবালাইজেশনের একটা প্রভাব পড়েছে। আমরা অনুকরণপ্রিয় হয়ে পড়েছি ফলে পাশ্চাত্যের ভালটা নিতে পারি বা না পারি ওদের কিছু অভ্যেস রপ্ত করে নিয়েছি যা আমাদের কালচারে খাপ খায় না। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। বিশেষত মহিলাদের, তাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। স্বামীর ওপর আর নির্ভরশীল নন। ফলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সময় দিতে নারাজ। একটা সম্পর্ক টেকাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তার জন্য যে ধৈর্যটা দরকার সেটা তাঁদের নেই। নিজের শর্তেই বাঁচতে চাইছেন বেশিরভাগ। সর্বোপরি বলব সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে আমরা শুধু অন্যের আনন্দ, হই-হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, বেড়ানো, প্রেমের উদযাপন দেখি। ফলে যিনি সমস্যায় রয়েছেন তিনি ভাবছেন আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ রয়েছি। আসলে এর উল্টোপিঠটাও যে আছে সেটা কেউ ভাবেন না। সেটা দেখেই নিজের সম্পর্ককে নিয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন তাঁরা।

পরকীয়ার (Extramarital affair) বিষয়ে নারীরা ব্যক্তিস্বাধীনতাকেই গুরুত্ব দেয়। বিবাহিত জীবনের সুপ্ত কামনা-বাসনা পূরণ করার অদম্য ইচ্ছে তাঁদের টেনে নিয়ে যায় নতুন সম্পর্কের দিকে। তাহলে বিয়ে এবং দাম্পত্য প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় পোস্টাল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ বললেন, মেয়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটা মেয়ে আজ আর্থিকভাবে স্বাধীন। ফলে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতাও বেড়েছে। অনেকেই পুরনো, রংচটা সম্পর্ক আর রাখতে চাইছেন না। কিন্তু তা বলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারায়নি। তাহলে মানুষ এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করতেন না। আসলে প্রতিটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
আত্মকেন্দ্রিকতা, আলগা পারিবারিক বন্ধন, অশান্তি, সহানুভূতিহীন জীবনযাপন পরকীয়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সর্বোপরি বলা যায় পরকীয়ার মূলে রয়েছে আসক্তি। পরকীয়া প্রেমের কারণ আত্মমুগ্ধতা। আর আসক্তির কারণ মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু প্রয়োজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণের।

Latest article