স্পিতি উপত্যকা (Spiti Valley)। অবস্থান হিমাচল প্রদেশে। লাহুল এবং স্পিতি জেলায়। এই জেলায় আছে দুটি সাব ডিভিসন। একটি লাহুল। যার সদর দফতর কেলং। অন্যটি স্পিতি। যার সদর শহর কাজা। একটা সময় স্পিতি উপত্যকায় রাজত্ব করত নোনো রাজা। তখন সদর শহর ছিল ধনকর গ্রাম। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে স্পিতি নদী দিয়ে। উন্নত হয়েছে হিমাচলের পর্যটন ব্যবস্থা। কাজা পরিণত হয়েছে স্পিতির সদর শহরে। স্পিতি ঘুরতে হলে পর্যটকদের কাজাকে কেন্দ্র করেই ঘুরতে হবে।
হিমালয়ের বুকে এই জায়গাটা ‘লিটল তিব্বত’ এবং ‘তুষার মরুভূমি’ নামেও পরিচিত। বহু মানুষ মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে স্পিতি চলে আসেন।
এই মুহূর্তে স্পিতি উপত্যকা পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের বেড়ানোর জায়গা। গত কয়েক বছরে দেশের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেড়েছে জনপ্রিয়তা।
মিডল পয়েন্ট
স্পিতি কথার অর্থ মিডল পয়েন্ট। এই জায়গাটা আগে ভারত ও তিব্বতের মধ্যে মিডল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করত। বর্তমান অধিবাসীরা বেশিরভাগ তিব্বতি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
লাদাখের মতো
স্পিতি উপত্যকায় (Spiti Valley) পা রাখলে মনে হবে লাদাখে চলে এসেছেন। কারণ লাদাখের সঙ্গে আশ্চর্যরকমের মিল। বরফের চাদরে মোড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। লাদাখের মতো স্পিতিতেও বছরের যে কোনো সময় যাওয়া যায় না। বেড়ানোর উপযুক্ত সময় মে থেকে অক্টোবর। শীতে স্পিতির রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এলাকাটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৩-১৪ হাজার উচ্চতায় অবস্থিত। পড়ে বরফ। যদিও স্থানীয়রা শীতের মরশুমেও দাপিয়ে বেড়ায় স্পিতির কোলে।
সঙ্গে রাখুন
সাধারণত আমরা যে উচ্চতায় থাকি, সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় একশো শতাংশ। কিন্তু স্পিতিতে অক্সিজেনের পরিমাণ পঞ্চাশ শতাংশ। কোথাও কোথাও তারও কম। সেই জন্য মাথা ধরা, মাথা ঘোরা, জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর থেকে বাঁচতে অবশ্যই কর্পূর, হোমিওপ্যাথি কোকা-৩০ ইত্যাদি ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। এই ওষুধগুলো খেতে হবে স্পিতি সফর শুরুর দুই দিন আগে থেকেই। সঙ্গে রাখা যেতে পারে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিশেষত বয়স্ক মানুষের কথা ভেবে। খেতে হবে পরিমাণমতো জল। উপভোগ করতে হবে ঠাণ্ডা। তাহলে শরীর ভাল থাকবে।
কমপক্ষে কতদিন?
তিন-চার দিনের ট্যুরে স্পিতি উপত্যকা (Spiti Valley) বেড়ানো পোষাবে না। কারণ ওইটুকু সময়ের মধ্যে সফর শেষ করতে পারবেন না। হাতে অন্তত ১১-১২ দিন সময় নিয়ে যেতে হবে। দুর্গম জায়গা। বারবার যাওয়া সম্ভব নয়। তাই একবার গেলে সম্পূর্ণ সার্কিটটা শেষ করে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্পিতি উপত্যকার সঙ্গে যোগ রয়েছে কিন্নর ভ্যালির। সেটাও দেখে আসতে পারেন।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পিন ভ্যালি জাতীয় উদ্যান : ৬৭৫ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পিন ভ্যালি জাতীয় উদ্যানটি। স্পিতি উপত্যকা বেড়াতে গেলে পর্যটকরা অবশ্যই ঘুরে দেখবেন। এখানে এমন কিছু পশু পাখি দেখতে পাওয়া যায়, যাদের নাম পর্যন্ত আগে শোনা যায়নি। এখানে সহজেই দর্শন পাওয়া যায় স্নো লিওপার্ড, স্নোকক, সাইবেরিয়ান আইবেক্সের মতো বন্যপশুর।
আরও পড়ুন- ঘৃণাভাষণ বন্ধ করতে রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা করা দরকার
চন্দ্রতাল লেক : স্পিতি উপত্যকার অন্যতম সেরা দর্শনীয় স্থান চন্দ্রতাল লেক। পাহাড় বেষ্টিত হিমালয়ের মাঝে শান্ত, শীতল, স্বচ্ছ নীল জলের হ্রদ। এখানকার মনোরম পরিবেশে ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিংও করা যায়।
কী মনেস্ট্রি : প্রাচীন এই বৌদ্ধ মঠ স্পিতি উপত্যকার অন্যতম আকর্ষণ। ইতিহাস জানতে আগ্রহী হলে এই মঠ অবশ্যই ঘুরে দেখবেন। এই কী মনেস্ট্রি হিমাবহ এবং হিমালয় দ্বারা পরিবেষ্টিত।
কিব্বের : স্পিতি ভ্যালিতে অবস্থিত একটি গ্রাম কিব্বের। হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত। ৪২৭০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। পৃথিবীর মোটোরেবল গ্রামগুলির মধ্যে একটি। যেখানে বাইক ছুটিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই গ্রামে শহুরে কোলাহলের থেকে বেশি পাখির ডাক শুনতে পাবেন। এ ছাড়াও এখানে ক্যাম্পিং, ট্রেকিং করতে পারেন।
কুঞ্জম পাস : অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের পছন্দের জায়গা শ্বাসরুদ্ধকর কুঞ্জম পাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫,০৬০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। দেশের সর্বোচ্চ মোটরচালিত পাসগুলির মধ্যে অন্যতম।
তাবো মনেস্ট্রি : স্পিতি উপত্যকার সাইটসিনে কোনও মতেই বাদ পড়বে না তাবো মনেস্ট্রি। এই মনেস্ট্রিতে আছে ৯টি মন্দির। এখানে বোধিসত্ত্বের স্টাকো ভাস্কর্য, অপূর্ব প্রাচীর চিত্রকলা এবং স্তূপ রয়েছে। যারা শান্ত পরিবেশ এবং কৌতূহলজনক ইতিহাসের সন্ধান করছেন, তাঁদের জন্য এই মনেস্ট্রি একটি আদর্শ বেড়ানোর জায়গা।
ধনকর প্যালেস : পাহাড়ের বুকে ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধনকর প্যালেস। নিচে গোম্পা। শোনা যায়, যুদ্ধের সময় পুরো উপত্যকার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল এই প্যালেসটি। আজ শুধুই ইটের ধ্বংসস্তূপ। তবে আজও এই প্যালেস থেকে স্পিতি উপত্যকার একটি প্যানোরমিক ভিউ দেখতে পাওয়া যায়।