‘‘মেয়েদের বলছি, তোমরা পড়াশোনা করো। নিজের পায়ে দাঁড়াও। কারো উপর নির্ভরশীল হয়ো না। তোমরা কন্যাশ্রী। তোমরাই বিশ্বজয় করবে।”
‘‘পশ্চিমবাংলায় আমাদের সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে চলেছে। আনন্দধারা নামে এই প্রকল্পটি এ-ক্ষেত্রে খুব সফল হয়েছে”
‘‘আমার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মেয়েদের আর কারও কাছে হাত পাততে হবে না।”
গতকালই চলে গিয়েছে আন্তর্জাতিক নারীদিবস (Women’s Day), বাংলায় নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উপরোক্ত ভাবনাগুলোর সফল রূপায়ণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন সমাজনীতিতে নারীরা গৃহকোণের বাইরেও অনন্যা।
বাংলার মেয়েদের এই উত্তরণ গোটা দেশেই উদাহরণস্বরূপ। নারী যে সর্বজয়া তার উদাহরণ তো স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। যে নারীর অতীত থেকে বর্তমানের দীর্ঘ আন্দোলনময় যাত্রাপথে একমাত্র কাজ হচ্ছে মানুষের পাশে থাকা।
বিরোধী নেত্রী থেকে আজকের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তাঁর সাংসদ, বিধায়কদের মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি যথেষ্ট সংখ্যায়। এমনকী কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বের দায়িত্বভার তিনি মহিলা মন্ত্রীদের হাতেই সঁপেছেন।
এগারো সালে ক্ষমতায় এসে সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি সবথেকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন মেয়েদের দিকেই। আজ সব জায়গায় শহর ছাপিয়ে গ্রামগঞ্জের মেয়েরাও সমানভাবে কাজ করছে। ফলে বদলে গেছে আমাদের বাংলার সামাজিক চিত্র।
আজ যখন রাস্তার পাশে কিংবা জনসভায় স্কুল ড্রেস পরে ‘‘আমি কন্যাশ্রী” ‘‘আমি রূপশ্রী” প্ল্যাকার্ড হাতে মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকে উজ্জ্বল চোখমুখে তখন সত্যি গর্ব হয় এমন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। বিরোধীরা খুব লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে তামাশা করে দেখি। কিন্তু এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে কেউ করছে মোমবাতির ব্যবসা। কেউ বা ফুলের। কারও সন্তানের পড়াশোনার কাজে লাগছে। কারও বা ওষুধের খরচ জোগান দিচ্ছে।
আসলে ‘‘আর কারও কাছে হাত পাততে হবে না”… সেই ভরসার জায়গাটুকু দিদির হাত থেকে তারা পেয়েছে। যে অবদানের কৃতজ্ঞতা আমি দেখি বাংলার মা-বোনেদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে। এ-সবই সম্ভব হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
বাস্তব এটাই যে, আমাদের দেশের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে এখনও পুরুষের গলাই উচ্চশির সেখানে বাংলার মেয়েরা স্বনির্ভর হবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে নারীদিবসের (Women’s Day) মর্যাদা এখানেই। কারণ নারীদিবস নিশ্চয় নারীদের পুজো করার জন্য নয়।
আরও পড়ুন- হাত বাড়ালেই টোটকা
অনেকদিন আগে কলকাতায় একটি নির্বাচনী পদযাত্রায় একটি মেয়ে তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সুরক্ষা ব্যারিকেড ভেঙে ছুটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে পায়ের উপর পড়ে প্রণাম করার সময় দেখেছিলাম তার দু-চোখ বেয়ে জল ঝরছে আনন্দে। দিদি তাকে অসুবিধার কথা জানতে চাইলে সে বলল, ‘আপনাকে দেখতে পেয়েছি আর কিছু চাই না।’ আবার কোনও এক বৃদ্ধা মা নবান্নর উঁচু বাড়িটার দিকে তাকিয়ে সকাল-সন্ধে প্রণাম করেন এটা বলে যে, ‘ওখানে আমার মেয়ে মমতা থাকে।’
আজও মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি বাংলার মা-বোনেদের জড়িয়ে ধরেন অনায়াস। শোনেন তাঁদের আবদার বা অনুযোগ। তাঁদেরই মাটির দাওয়ায় বসে বলে ওঠেন, কী রান্না করেছ? দেবে আমায় খেতে? এ-দৃশ্যের সম্মুখীন আমি হই প্রতিনিয়ত। আর এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারা জীবনের অর্জন।
অনেকে বলবেন আজ তিনি মুখ্যমন্ত্রী… রাজনৈতিক প্রয়োজনেই এসব করেন। আসলে তা নয়। রাজনৈতিক বাধ্যতায় তাদের বলতে হয় একথা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মননের তাড়নায় বিরোধী নেত্রী থাকতে তিন দশকেরও বেশি সময় ক্লান্তিহীন পায়ে নীল স্ট্র্যাপ রাবারের হাওয়াই চটির ফটফট আওয়াজে ছুটে বেড়াতেন রাজ্যের বুথে বুথে তখন থেকেই তাঁর পাশে প্রথম ভরসার হাত মেয়েরাই বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আজ রাজনীতির হাইটেক সোসাইটির সদস্য হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে মায়ের মতো, দিদির মতো সহজ-সরল অনুভূতিগুলো মরে যায়নি। বরং তিনি আরও সাবলীলভাবে সতেজ করেছেন তাঁর স্নেহ ভালবাসাকে। মেয়েরা তো এটুকু মমতাই চায়। দিদি সেটাই করতে পেরেছেন।
ঠিক এই কারণেই দিদির প্রতি বাংলার মেয়েদের কৃতজ্ঞতা ছাপিয়েও কোথাও একটা সুতোর টান জুড়েছে। তাই বারেবারে কুচক্রীদের আঘাত তাঁকে কখনওই বিচলিত করে না। কারণ তিনি জীবনের তারকে বেঁধেছেন সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। তাই শুধু মেয়েরাই নয় সবাই জানে দিদি আছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারীদের সমস্যা বুঝে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভারতীয় রাজনীতিতে পুরুষদের চেয়ে তিনি যে অনেক বেশি সফল একথা তাঁর কাজই যেন প্রমাণ করে দেয়। আজ বাংলার মেয়েদের দিদির প্রতি যে আবেগ তার সবটাই ওঁর ভাবনা ও কাজের প্রতি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পুঞ্জীভূত হয়েছে।
এই যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কিছুদিন আগে বললেন, ‘‘আমি যা কাজ করেছি তাতে আমার নোবেল পাওয়া উচিত।” …ভুল তো বলেননি। দিল্লির ভোল পালটে দিয়েছেন তিনি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে যে কাজ উনি করেছেন তাতে নোবেলের দাবি করতেই পারেন। দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দাবি কখনওই করবেন না। তিনি মানুষের হৃদয়ের দাবিতে বিশ্বাসী। মানববন্ধন দ্বারা সমাজের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। কারণ রাস্তাঘাট, জল, রেশনের বাইরে জনপ্রতিনিধির সংজ্ঞায় যদি মানবিকতাও জুড়ে যায় তবেই জনতা জনার্দন শেষ কথা বলে তাই না? স্বীকৃতি তো তাঁদেরই দান। আমাদের দিদি সেখানেই স্বীকৃত। তবে আমি এই চটিচাটা দালাল অশোক মজুমদার জানি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন নোবেল পাবেন।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি উনি পথকে চিনেছেন নাকি পথ ওঁকে চিনেছে? এত নিপুণ দক্ষতায় মানুষের প্রয়োজনকে ছকে নেন উনি যার ভাবনার তল খোঁজে সাধ্য কার? রাজনৈতিক মানবতার এমন দৃষ্টান্ত রোজ রোজ জন্মায় না। রাজনৈতিক অসংখ্য চড়াই উতরাই তাঁর পথের সহযাত্রীর মতো। ঠিক যতবার তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয় খাদের কিনারে ততবারই তিনি সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করেন। আসলে স্ট্রিট ফাইটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁর গোটা জীবনটাই একটা খোলা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু কুড়িয়ে নিতে পারলে জীবনের মূল্য চড়া দামে কিনতে হবে না।
নিজের জীবনের ভিতর দিয়ে আত্মস্থ করেছেন বলেই যে মুক্তির আলো মেয়েদের মধ্যে তিনি জ্বালিয়েছেন তার ছটা বাংলা ছাপিয়ে গোটা দেশের মেয়েদের একদিন আলোকিত করবেই করবে।
জীবনের যে যে প্রতিকূলতা কাটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সফলতার শিখর ছুঁয়েছেন তার ইতিহাস লেখা হবে আগামীতে। নারীদিবসের উৎকর্ষ সাধনের সেই ইতিহাস পড়ে উত্তরপ্রজন্ম জানবে ভারতবর্ষ নামের তৃতীয় বিশ্বের একটি ছোট্ট রাজ্যের এক সাধারণ নারীর অসাধারণ হয়ে ওঠার জীবনগাথা।
আজ আন্তর্জাতিক নারীদিবসের (Women’s Day) প্রাক্কালে আমি বাংলার নারী ক্ষমতায়নের প্রতিভূ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুরনিশ জানাচ্ছি। উনি সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন। এমনই চালিকাশক্তি হয়ে মেয়েদের পাশে থাকুন। সমাজের পাশে থাকুন।