‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’ ফেরানোর দাবি

জানুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’। ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত হত আকাশ আটে। ৫০৩ পর্বে দেখানো হয়েছে। বিলে থেকে নরেন্দ্রনাথ এবং নরেন্দ্রনাথ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার যাত্রা। যদিও শিকাগো বক্তৃতাপর্ব থেকে স্বামীজির জীবনের বাকি অধ্যায় ধারাবাহিকে দেখানো হয়নি। সম্প্রতি দর্শক মহলে সেই অধ্যায়টি দেখানোর দাবি উঠেছে। ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে নির্মাতাদের তরফে। এই বিষয়ে পরিচালক সুশান্ত বসু এবং নরেন্দ্রনাথ চরিত্রের অভিনেতা অধিরাজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

আকাশ আটের ধারাবাহিক ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’ (Swami Vivekananda)। ২০২২ সালের জুনে শুরু হয়েছিল। প্রথম থেকেই পেয়েছে দর্শক আনুকূল্য। ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে। ৫০৩ পর্বে। শুরুতে ছোট্ট বিলেকে ঘিরে দানা বেঁধেছিল কাহিনি। বিলের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল শিশু অভিনেতা সাফল্য দেবনাথকে। বিলে একটা সময় হয়ে ওঠেন পরিণত বয়সের নরেন্দ্রনাথ। তিনি যুক্তিবাদী। স্পষ্টবক্তা। সুগায়ক। তাঁর জীবনে আসে বহু ঝড়ঝাপটা। সেখান থেকে উত্তরণের পথ খোঁজেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ছোঁয়ায় নরেন্দ্রনাথ সারা বিশ্বে পরিচিত হন স্বামী বিবেকানন্দ নামে। নরেন্দ্রনাথের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অধিরাজ গঙ্গোপাধ্যায়। ধারাবাহিকে শিকাগো বক্তৃতাপর্ব থেকে স্বামীজির জীবনের বাকি অধ্যায় দেখানো হয়নি। সম্প্রতি দর্শক মহলে দাবি উঠেছে সেই অধ্যায়টি দেখানোর। ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে নির্মাতাদের তরফে।
কথা হল পরিচালক সুশান্ত বসুর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি ঠাকুর, মা, স্বামীজির ভাবধারায় বিশ্বাসী। ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’র (Swami Vivekananda) আগে ‘জগজ্জননী মা সারদা’ পরিচালনা করেছি। ধারাবাহিকটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। জেলায় জেলায় আমাদের যেতে হত ঠাকুর, মা, স্বামীজির চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতেন। তিনি আরও বলেন, ‘যে-কোনও কাজে যদি প্রাণ থাকে, ভালবাসা থাকে, তাহলে সাফল্য আসতে বাধ্য। মন-প্রাণ দিয়ে ডাকলে পাথরও ঈশ্বর হয়ে যায়। ‘জগজ্জননী মা সারদা’ তৈরির আগে আমি মা সারদার কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভেবেছি। সেই ভাবনা থেকেই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। পাশাপাশি এটাও জানাই, অতিরঞ্জিত কিছু দেখানো যাবে না। টিআরপির জন্য, ব্যবসার জন্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারব না। করা উচিতও নয়। তাঁদের জীবনকাহিনি পাঠ করে যেটুকু জেনেছি, সেটুকুই ছোটপর্দায় তুলে ধরব। বারুইপুরে একটি ছোট্ট জায়গায় আমরা শ্যুটিং করতাম। সৎভাবে। ভক্তিভরে। ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’র ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। সৎভাবেই কাজটা করেছি। পেয়েছি মানুষের ভালবাসা। স্বামীজি আজীবন তরুণদের জন্য ভেবেছেন। তাই আমার টার্গেট অডিয়েন্স ছিল তরুণ প্রজন্ম। মনে হয়, তাঁদের কাছে স্বামীজির আদর্শ তুলে ধরতে পেরেছি। আমি বরাবর পিরিওডিক্যাল কাজ করতে পছন্দ করি। দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি ঠাকুর-দেবতাদের গল্প। তবে মানুষরূপী দেবতাদের নিয়ে কাজ করতেই আমি বেশি ভালবাসি। ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’ ধারাবাহিকে প্রত্যেকেই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তাঁদের ঘিরেও দেখা গেছে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা। স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের শেষ অধ্যায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বামীজি শিকাগো ধর্ম মহাসম্মেলনে যাচ্ছেন, এতটা দেখিয়েই আমরা ধারাবাহিকটি শেষ করেছি। বাকি অধ্যায়টা দেখাইনি। এখন দর্শক মহলে স্বামীজির জীবনের সেই অধ্যায়টা দেখানোর দাবি উঠেছে। আমরা ভাবনাচিন্তা করছি। দেখা যাক কী হয়।’
কথা হল অভিনেতা অধিরাজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শ্যুটিং শুরুর আগে খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ এর আগে যে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছি, সবই কাল্পনিক। লেখকদের সৃষ্টি। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ একটি বাস্তবচরিত্র। মহাপুরুষ। তিনি আজও সবার মনে বিরাজ করছেন। আমাকে চরিত্রটার মধ্যে ঢুকতে হয়েছে। পরিচালক সুশান্ত বসু যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন বিস্তর, গবেষণা করেছেন, আমাকে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে বহু গল্প বলেছেন। ফলে আমার পক্ষে চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা অনেকটাই সহজ হয়েছিল।’ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দর্শকরা খুবই খুশি। যেখানেই গেছি, তাঁরা ভাললাগার কথা জানিয়েছেন। আমি মাঝেমধ্যেই বেলুড় মঠে যাই। সেখানেও অনেকেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরাও আশীর্বাদ করেছেন। ধারাবাহিকটি তাঁদের ভাল লেগেছে, জানিয়েছেন সেই কথাও। তবে ধারাবাহিকটি শেষ হয়ে যাওয়ায় দর্শকদের অনেকেই মনমরা। এতটাই ভাল লেগেছিল তাঁদের। দর্শকমহলে দাবি উঠেছে স্বামীজির জীবনের শেষ অধ্যায়টি দেখানোর। সামাজিক মাধ্যমেও অনেকেই লিখেছেন সেই কথা। দর্শকদের দাবি মিটবে কিনা জানি না। তবে পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে ধারাবাহিকটি ফিরে এলে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশিই হব।’
‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’ ধারাবাহিকে মা ভুবনেশ্বরী দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কন্যাকুমারী চন্দ এবং বাবা বিশ্বনাথ দত্তের ভূমিকায় তীর্থ মল্লিক। সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন রাকেশ ঘোষ। সায়মিক বিরতির পর দর্শকদের দাবি মেনে স্বামীজির জীবনের বাকি অধ্যায় নিয়ে ধারাবাহিকটি সত্যিই ফিরবে কিনা, সেটা সময় বলবে।

আরও পড়ুন- ক্রীড়ামন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও টিকিট নিয়ে জটিলতা

Latest article