সৈকতের নাম রবীন্দ্রনাথ

কর্নাটকের ছোট্ট শহর কারওয়ার। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আরব সাগরের তীরবর্তী জায়গাটা বেশ নির্জন, নিরিবিলি। ১৮৮২ সালে এখানে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ তাঁর মনে বিশেষ ছাপ ফেলেছিল। নিজের সাহিত্যজীবনের গঠনে জায়গাটির অবদান তিনি ভুলতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে কারওয়ার সৈকতের নাম পালটে রাখা হয় ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমুদ্র সৈকত’। কবিপক্ষে সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট শহর কারওয়ার (Karwar)। কর্নাটক রাজ্যের অন্তর্গত। সমুদ্র তীরবর্তী এই শহরের বাসিন্দাদের জীবনযাপন অতি সহজসরল। ‘কারওয়ার’ নামটি পার্শ্ববর্তী ‘কাদওয়াদ’ গ্রাম থেকে নেওয়া হয়েছে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তবে জায়গাটা কিছুটা হলেও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। খুব বেশি মানুষ জানেন না। অবশ্য বাঙালিদের কাছে জায়গাটার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেকেই যান। ঘুরে দেখেন। কারণ এখানেই আছে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমুদ্র সৈকত’। বিশ্বকবির সম্মানে সমুদ্র সৈকতের নাম রাখা হয়েছে। বিষয়টি বাঙালিদের জন্যে সত্যিই গর্বের। সংস্কৃতি, আচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে বাঙালি জীবনের রয়েছে বিস্তর ফারাক। তবুও কেন সৈকতের নাম বিশ্বকবির নামে? জানা যায়, ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নিরিবিলি শহরে জেলা জজের দায়িত্বে পালন করতে এসেছিলেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথও। আরব সাগরের পাড়ে এমন শান্ত, নিরিবিলি, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ কবির মনে বিশেষভাবে ছাপ ফেলেছিল। জায়গাটা তাঁর এতটাই ভাল লেগেছিল যে, এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন নাটক— ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। কারওয়ার তাঁর মনে কতটা প্রভাব রেখেছিল, সেটা রবীন্দ্রনাথ বহুবার অকপটেই স্বীকার করেছেন। নিজের সাহিত্যজীবনের গঠনে জায়গাটার অবদান তিনি কোনওদিনই ভুলতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে কারওয়ার সৈকতের নাম পালটে রাখা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমুদ্র সৈকত। এখানে আছে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি।

সৈকতের কাছেই যুদ্ধজাহাজের আদলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি জাদুঘর। এটাই ভারতের অল্প কয়েকটি বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজ জাদুঘরের একটি। পর্যটকরা জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন। এই শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কালী নদী। নদীটি এখানে এসেই সমুদ্রে পড়েছে। সমুদ্রের খুব ধারেই নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে কালী ব্রিজ। এই ব্রিজ গোয়া এবং কর্নাটককে একসঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ব্রিজের অদূরেই ভুতুড়ে অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে সাদাসিবগার দুর্গ। ১৭১৫ সালে রাজা বাসাবা লিঙ্গা দুর্গটি নির্মাণ করেন। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুবার মালিকানা বদলে গেছে।

কারওয়ারে (Karwar) আছে কিছু ছোট ছোট দ্বীপ। মাদ্দিলিঙ্গার, আনজা দেব, দেবগৌড়। দ্বীপগুলো থেকে ঘুরে আসা যায়। বিশেষত দেবগৌড়ে গেলে ব্রিটিশ আমলের পাঁচতলা বাতিঘরটি অবশ্যই দেখতে হবে। আনজা দেব দ্বীপটি ১৯৬১ সালের দিকেও পর্তুগিজদের শাসনাধীন ছিল। তবে এখন অবস্থা বদলে গেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী এই দ্বীপটির দায়িত্ব নিয়েছে। ঘুরতে গেলে অনুমতি নিতে হয় এবং নিয়ম মেনেই যেতে হয়। একবার ব্যবস্থা করতে পারলে ভ্রমণটুকু আনন্দের হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমুদ্র সৈকতেই প্যারাসেইলিং, কায়াকিং, স্নোকয়েলিং ছাড়াও আরও বেশকিছু ওয়াটার অ্যাক্টিভিটির সুযোগ আছে। পরিচ্ছন্ন সৈকতটি সহজেই মন ভাল করে দেবে।

কারওয়ার (Karwar) মূলত একটি বন্দর নগরী। বন্দরের জীবনযাত্রা ছাড়াও এখানের রেলযাত্রা পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝ দিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন, এমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা খুব সহজে পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া ভ্রমণের ফাঁকে হরেক পদের সামুদ্রিক মাছ ও স্থানীয় খাবার খাওয়ার সুযোগ তো আছেই। দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র্য এবং সারাদিনের সৈকত নিয়ে ব্যস্ততা ভুলিয়ে রাখবে কিছুদিনের জন্য। ঘুরে আসা যায় লেডিস বিচ থেকে। কাছেপিঠে আছে আরও কয়েকটি সমুদ্র সৈকত। সেগুলো হল :
দেববাগ সমুদ্র সৈকত
কর্নাটক রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে একটি দেববাগ সমুদ্র সৈকত। এই সৈকত প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। উড়ে বেড়ায় সাদা সিগাল পাখি। চারপাশের পাহাড়ের আদিম সৌন্দর্য, এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।

আরও পড়ুন-জোড়া ঘূর্ণাবর্ত সপ্তাহভর রাজ্য জুড়ে চলবে ঝড়-বৃষ্টি

মাজালি সমুদ্র সৈকত
নৈসর্গিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। আছে সমুদ্র-মুখী আবাসনের সুবিধা। এছাড়াও এখানে আছে জলক্রীড়া এবং মাছ ধরার সুযোগ। দেখা যায় নানা ধরনের পাখি। ফলে মাজালি সমুদ্র সৈকত না ঘুরলে অনেক কিছু অ-দেখা থেকে যাবে।

কোডিবাগ সৈকত
এই সৈকতে সব ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের সুবিধা আছে। এখানে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ দেখা যায়। সমুদ্র সৈকতে রয়েছে জেলেদের বাড়ি। সারা বছর ওঠে প্রচুর মাছ।

তিলমাটি সমুদ্র সৈকত
তিলমাটি সমুদ্র সৈকতটি অতি মনোরম। নির্জন নিরিবিলি। আকর্ষণের বিশেষ কারণ হল বেসাল্টিক কালো রঙের বালি, যা তিল বীজের মতো। স্থানীয়ভাবে ‘তিল’ নামেই জায়গাটার নামকরণ করা হয়েছে। সেখান থেকেই সৈকতের নামটি এসেছে।
বিনাগা সৈকত
বিনাগা সমুদ্র সৈকতের মনোরম পরিবেশে বেড়াতে ভাল লাগে। এখানে আছে পর্তুগিজদের তৈরি সেন্ট অ্যানস চার্চ। রাজ্য সীমান্তে অবস্থিত আনজিদিভ দ্বীপ থেকে সৈকতটি প্রায় এক মাইল দূরে। বহু পর্যটক এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে পছন্দ করেন।

কীভাবে যাবেন?
আগে চলে যান বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে রেল বা বাসে কারওয়ারে (Karwar) যাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। অথবা বিমানে চড়ে সরাসরি গোয়া চলে যান। সেখান থেকে কারওয়ারে বাসে দ্রুত পৌঁছানো যায়। এই কবিপক্ষে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?
কারওয়ারে আছে ছোট-বড় অনেক হোটেল। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। যাবার আগে বুকিং করে গেলেই ভাল। তার জন্য গুগল সার্চ করে নেবেন।

Latest article