ঘুরে আসুন গোয়ালিয়র

মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র। ঐতিহাসিক স্থান। দুর্গ, প্রাসাদ, মন্দির, স্মৃতিসৌধ এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য। পাশাপাশি আছে জঙ্গল, পর্বত। কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ? স্থাপত্য শিল্প মুগ্ধ করে? তাহলে ঘুরে আসতে পারেন মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র (Gwalior)। নামের মধ্যেই আছে রাজসিক ব্যাপার। শোনা যায়, সাধু গ্রীবালিপার নাম থেকে হয়েছে গ্বালিয়র নামকরণ। পরে ব্রিটিশের মুখে মুখে হয়েছে গোয়ালিয়র। দুর্গই এখানকার মূল আকর্ষণ। গোয়ালিয়রের শ্রীবৃদ্ধি কাছাওয়া রাজাদের হাতে। কাছাওয়া থেকে পরিহরদের দখলে যায়। পরে ইলতুতমিস গোয়ালিয়র দখল করেন। তবে গোয়ালিয়রের সুবর্ণ যুগ আসে তোমররাজ মান সিংয়ের আমলে। আসেন শেরশাহও। এইসব শাসকদের কীর্তিকলাপ, দুর্গ, প্রাসাদ, অত্যাশ্চর্য মন্দির, নানান স্মৃতিসৌধ গোয়ালিয়রের প্রধান দ্রষ্টব্য। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও নতুন ভাবে সেজে উঠেছে। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এ ছাড়াও আছে জঙ্গল, পর্বত। কয়েকটা দিন কাটিয়ে এলে প্রাণে উঠবে খুশির তুফান। কী কী দর্শনীয় স্থান আছে গোয়ালিয়রে, দেখে নেওয়া যাক।

গোয়ালিয়র (Gwalior) দুর্গ
বহু প্রাচীন দুর্গ। সমগ্র উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গগুলির মধ্যে একটি। পাথুরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। সুউচ্চ ভবনটি বহু দূর থেকে দেখা যায়। অপূর্ব কারুকাজ। চোখ ফেরানো যায় না। মুঘলসম্রাট বাবর এই দুর্গটিকে ‘ভারতের দুর্গগুলির মধ্যে রত্ন’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। এই দুর্গ দর্শন ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে গোয়ালিয়র ভ্রমণ। সকাল ৮টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঘুরে দেখার সময় সকাল ৯-৩০ থেকে বিকাল ৫-৩০। ভারতীয়দের জন্য প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখার জন্য দিতে হবে অতিরিক্ত ৭৫ টাকা।

তানসেন সমাধি
ভারতের অন্যতম সেরা সংগীতজ্ঞ ছিলেন তানসেন। মুঘলসম্রাট আকবরের দরবারে নবরত্নের একজন। গান গেয়ে তিনি নাকি বৃষ্টি আনতে পারতেন। মোহাম্মদ গাউসের কাছে শিখেছিলেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত। গোয়ালিয়র ঘরানা বাদ্যযন্ত্রের ধারা তৈরি করেন। শহরে রয়েছে তাঁর সমাধি। বহু পর্যটক এই স্মৃতিসৌধটি ঘুরে দেখেন। প্রতি বছর নভেম্বরে আয়োজিত হয় তানসেন সংগীত সম্মেলন। দেশের বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

তেলি কা মন্দির
তেলি কা মন্দিরের শিল্পকর্ম এককথায় অসাধারণ। দেখে বিস্মিত হতে হয়। এই হিন্দু মন্দিরে রয়েছে দক্ষিণ এবং উত্তরের স্থাপত্য ঐতিহ্যের উপাদান। পূজিত হন ভগবান বিষ্ণু। মন্দিরটি একসময় তেল পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত হত। তাই নাম তেলি কা মন্দির।

গোয়ালিয়র (Gwalior) চিড়িয়াখানা
গোয়ালিয়র চিড়িয়াখানা শহরের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে আছে নানা প্রজাতির পশুপাখি। মূলত সাদা বাঘ-সহ বন্যপ্রাণীর আকর্ষণেই জমে ভিড়। গোয়ালিয়র মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন চিড়িয়াখানাটি দেখাশোনা করে। পাশাপাশি আছে চমৎকার ফুলের বাগান। বাগানে রয়েছে একটি মসজিদ, গুরুদ্বার, প্রার্থনা হল এবং থিওসফিক্যাল লজ।

সাস বাহু মন্দির
গোয়ালিয়রের সেরা আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি। এটি বিষ্ণুমন্দির। বিষ্ণু হিন্দু ধর্মে ‘সহস্ত্রবাহু’ নামে পরিচিত। তাই জোড়া মন্দির সহস্ত্রবাহু মন্দির বা হরিসাদনাম মন্দির নামেও পরিচিত। একাদশ শতকে তৈরি। দুটি মন্দিরেই রয়েছে অসাধারণ ভাস্কর্য।

সুরজকুণ্ড
সুরজকুণ্ড গোয়ালিয়র শহরের গোয়ালিয়র ফোর্টের একটি সুবিশাল ট্যাঙ্ক। পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৈরি। সুরজকুণ্ড থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার মতো। ঐতিহাসিক মূল্যের কারণে অসংখ্য পর্যটক আকৃষ্ট হন। ইতিহাস অনুসারে, গোয়ালিয়রের আবিষ্কারক সুরজ সেন পুকুরের জল খেয়ে নিজের কুষ্ঠরোগ সারিয়ে তুলেছিলেন। সেই থেকে মনে করা হয়, এই কুণ্ড জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী। এর জল একটি থেরাপিউটিক তরল হিসাবে কাজ করে। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। আশেপাশের এলাকাটি সুন্দর। পরিপাটি করে সাজানো। বেশ কিছুক্ষণ থাকতে ভাল লাগে।

আরও পড়ুন- শান্তির রামনবমী অশান্ত করল যারা জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না

জয়বিলাস প্রাসাদ
বিলাসবহুল প্রাসাদটি ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। ১৮৭৪ সালে রাজা এডওয়ার্ড সপ্তমকে স্বাগত জানানোর জন্য গোয়ালিয়রের মহারাজা জয়াজি রাও সিন্ধিয়া তৈরি করেন। বর্তমানে সিন্ধিয়া রাজ পরিবারের আবাসস্থল।

সিন্ধিয়া জাদুঘর
গোয়ালিয়রের একটি আকর্ষণীয় জায়গা সিন্ধিয়া জাদুঘর। ১৯৬৪ সালে তৈরি। অবস্থান গোয়ালিয়রের বিখ্যাত জয়বিলাস প্রাসাদের ভিতর। এই জাদুঘর সিন্ধিয়া পরিবারের শাসক এবং গোয়ালিয়রের মহারাজা জিভাজি রাও সিন্ধিয়ার সম্মানে তৈরি। দেখা যায় ইউরোপীয় শৈলী। রয়েছে কাচের আসবাবপত্র। মডেল ট্রেন মিউজিয়ামের অন্যতম আকর্ষণ। পাশাপাশি দেখা যায় সেই সময়ের পাণ্ডুলিপি, ভাস্কর্য, মুদ্রা, চিত্রকর্ম এবং অস্ত্রশস্ত্র।

সরোদঘর
সংগীতপ্রেমীদের জন্য গোয়ালিয়রের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। সরোদঘর আসলে সংগীত জাদুঘর। উস্তাদ হাফিজ আলি খানের পৈতৃক বাড়িতে অবস্থিত। কিংবদন্তি শিল্পীদের ব্যবহার করা বাদ্যযন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় ঐতিহাসিক রেকর্ড এবং সংগীতশিল্পীদের ফটোগ্রাফ।

সূর্যমন্দির
১৯৮৮ সালে তৈরি। মন্দিরে সূর্য দেবের একটি মূর্তি রয়েছে। নির্মাণশৈলী অসাধারণ। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মন্দিরটি দেখার জন্য আসেন। তাই সারা বছর মন্দির প্রাঙ্গণে ভিড় চোখে পড়ে।

পদাবলি ও বটেশ্বর
আকর্ষণীয় মন্দির। গোয়ালিয়রের শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত। মন্দিরের দেয়ালে রয়েছে নানারকম অলংকার। সেই কারণে মন্দিরটি ছোট খাজুরাহো নামেও পরিচিত। প্রায় সমস্ত মন্দিরের কাঠামোয় রয়েছে গুপ্ত-পরবর্তী এবং প্রথম দিকের গুর্জরা-প্রতিহার স্থাপত্যের ছায়া।

রানি লক্ষ্মীবাই সমাধি
ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইয়ের সম্মানে নির্মিত সমাধি। রয়েছে রানি লক্ষ্মীবাইয়ের একটা ধাতবমূর্তি। প্রতি বছর জুন মাসে রানির সম্মানে মেলা বসে। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা।

গোপাচল পর্বত
গোয়ালিয়রের অন্যতম দর্শনীয় স্থান গোপাচল পর্বত। সপ্তম এবং পঞ্চদশ শতকের শিলা-কাটা জৈন স্মৃতিস্তম্ভগুলি এই পর্বতকে উল্লেখযোগ্য করে তুলেছে। স্মৃতিস্তম্ভগুলি আদিনাথ, মহাবীর, নেমিনাথ এবং ঋষভনাথ, চার জৈন তীর্থঙ্করের সম্মানে তৈরি। পর্যটকের ভিড় হয় ভালই।

Latest article