‘‘সবকিছুর দাম বেড়েছে, দাম কমেছে শুধু সৌজন্যতার” : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেশ কিছুদিন আগে নবান্নে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী এ-কথা বলেন।
আমি জানি, খুবই খারাপ লাগা থেকে কথাটি সেদিন বললেও বর্তমান সময়ের নিরিখে এটি একটি অমোঘ সত্যকথা। সভ্যতা, ভদ্রতা, বিবেক, বিবেচনার রাজনীতি বিরোধীদের কাছে এখন অতীত কারণ ভোট রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারার রাগে অসৌজন্যতাই এখন তাঁদের মুখের বুলি। ফলে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, কুৎসা, অপমান করার নেশায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee- Abhishek Banerjee) অসুস্থতাকে নিয়েও নোংরামি শুরু করেছে।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে একটি অপারেশন হয়েছে। যে ছবি আমরা সকলেই দেখেছি। কয়েক বছর আগে একটি রোড অ্যাক্সিডেন্টে অভিষেকের চোখে আঘাত লাগে। এবং তার পর থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চললেও চোখ নিয়ে অভিষেক বেশ ভুগছে। বহু জায়গায় চিকিৎসা করেও চোখটি আগের মতন হচ্ছে না।
এখন বিরোধীদের আনন্দের বিষয় যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee- Abhishek Banerjee) বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। শুধুমাত্র এই কারণেই কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি ছেলেটিকে আক্রমণের সীমারেখা অতিক্রম করার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের গুরুত্ব হারিয়ে পরিবার ও ব্যক্তি-অপমানই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা সবাই জানি বাড়ির রাজনৈতিক পরিবেশ অভিষেককে ছোট থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। কারণ মাসের পর মাস সে দেখেছে নিজের পিসি আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৎকালীন শাসকদল সিপিএম কীভাবে মারধর করেছে। বহুবার নার্সিংহোমে থাকতে হয়েছে। ফলে ছোট থেকেই তারও রক্তে রাজনীতি বইতে শুরু করেছে। এখন তো সে রাজনীতির ভাষা আয়ত্ত করে যথেষ্ট পাকাপোক্ত। দিদির যোগ্য উত্তরসূরি বলাই যায়।
সেই অভিষেকের চোখের সমস্যা নিয়েই কয়েকদিন ধরে সিপিএম, বিজেপি ও মিডিয়ার বিপ্লবীদের মিলিত বাহিনী হায়নার মতো আক্রমণ করা শুরু করেছে।
আমার এসব দেখে রাগ হলেও হাসি পায় যে এরা খোঁজও রাখে না যে অভিষেক বাংলার যুবকদের নয়নের মণি। এই মুহূর্তে দিদির পরেই ভারতবর্ষের নেতারা অভিষেক ব্যানার্জিকে শুধু চেনেন না রীতিমতন সমীহ করে চলেন। আর একুশের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে বিজেপিকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে এই অভিষেকই। ও এখন বাংলার যুবক-যুবতীদের কাছে গৌরব। বিরোধীরা এই বয়সেই অভিষেকের সঙ্গে আর পেরে উঠছেন না তাই আক্রমণের পথ ধরেছেন।
আচ্ছা, রাজনীতি তো আপনারাও করেন! আপনাদের কি শারীরিক সমস্যা নেই? আপনাদের নেতারা কি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাননি। আপনারা অসুখে ওষুধ খান না? ডাক্তারের কাছে যান না? আপনাদের পরিবার পরিজন অসুস্থ হন না? এর সবই উত্তর কিন্তু হ্যাঁ। আপনাদের প্রিয়জনকে যদি আপনাদের মতো ভাষায় আক্রমণ করা হয় তা হলে কেমন লাগবে বলুন তো? অবশ্য অসুস্থতাকে কটাক্ষ করে রাজনৈতিক মতপার্থক্য বোঝানোর রীতিনীতি আপনাদেরই কালচার, যদিও।
রাজনৈতিকভাবে আপনারা এতটাই দেওলিয়া হয়ে গেছেন যে রাজনীতির ভাষা ভরসা সবটাই হারিয়ে ফেলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক জুজুটি আপনাদের কাছে এখন একটি আতঙ্কের নাম। সারাজীবন তাঁকে আপনারা শালীনতার সীমা ডিঙিয়ে কী কী ভাষায় না অপমানিত করেছেন। অথচ দেখুন তিনি আজ পর্যন্ত আপনাদের কোনও নেতাকে রাজনৈতিক আক্রমণের বাইরে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
আরও পড়ুন-মার্চে পর্যটন শিরোপা পুরস্কার নিতে যাবেন বার্লিন
আপনারা অন্ধ সেজে থাকলেও বাংলার মানুষ কিন্তু দেখেছে, যতবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শরীর খারাপ শুনেছেন এমনকী নার্সিংহোমেও ভর্তি হয়েছেন তিনি তাঁকে দেখতে গেছেন। এ কথা স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও মেয়ে সুচেতনা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রয়াত জ্যোতিবাবু, শ্যামল চক্রবর্তী-সহ বহু বামফ্রন্ট নেতাদেরও খোঁজ খবর রাখতেন নিয়মিত। এসব দেখেও আপনাদের শিক্ষা হয় না! আজ মমতা-বিরোধী এই সিপিএমের নেতারাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তি-আক্রমণ করেছেন। কিন্তু উনি কখনও করেননি।
একটি সাম্যবাদের ধুয়ো তোলা বামপন্থী দল যখন দাপটের সঙ্গে তিন দশকের বেশি রাজ্যের শাসনভার পরিচালনা করার পরও মাত্র দশ বছরে শূন্যে নেমে যায় তখন এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না যে শাসনকার্য পরিচালনায় তাদের আন্তরিকতা কম, শাসানি বেশি ছিল। ক্ষমতার সেই স্বাদ তাদের সাম্যবাদের সলিলসমাধি করে দিয়েছে। আর একটি দল তো ক্ষমতায় এসে গেছি ধরে নিয়ে চোদ্দোতলা থেকে সপাট একতলায় এমন পড়ে এমন ধাঁধা লেগেছে যে তাদের চুনো নেতা থেকে দিল্লিশ্বর পর্যন্ত ভুল বকছে। বামেদের ক্ষমতার সেই দম্ভ শারীরিক ভাষায় এখনও রয়ে গেছে, বিজেপি তো কেন্দ্রের ক্ষমতাবলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে সন্তানের বয়সি একটি ছেলেকে কটাক্ষ করছেন তার অসুস্থতার জন্য।
আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ছেলেটির চোখটি নষ্ট হয়ে গেলেই বোধহয় আপনাদের হাড় জুড়োয়। অভিষেকের চোখ অপারেশনের বিশ্লেষণ চলছে। দু-বারের সাংসদ কোথায় চিকিৎসা করাবেন সেটা আপনাদের মতামত না নেওয়াটাই অভিষেকের অন্যায় হয়েছে বলেই বোধ হচ্ছে।
আজকাল ঠিক বুঝতে পারি না রাজনীতির অর্থটা আদতে কী? সমাজ গঠন নাকি ক্ষমতার লক্ষ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্রমণ? রাজনীতি মাঠে সরকার-বিরোধীদের কথা চালাচালি তো হবেই। সরকারের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকে। এই সরকারেরও আছে। আপনারা সেটা নিয়ে আওয়াজ তুলুন। আন্দোলন করুন। কিন্তু একটি ছেলের অসুস্থতা নিয়ে কটাক্ষ করছেন কেন?
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো হয়ে রাজনীতি করাটাই যদি তার অপরাধ হয়ে থাকে আপনাদের কাছে তার জন্য শরীরের কষ্টটাকে হেয় করাটাও কি আপনাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে গেছে নাকি? ভাবলে ঘেন্না হয় আপনারা এতটাই ক্লীব মানসিকতার যে এর আগে তার ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়েও নোংরা আলোচনায় মেতেছিলেন। ছিঃ ছিঃ… এ লজ্জা আপনাদের নয়, মনুষ্যত্বের।
রাজনীতি সমাজের কথা বলে। মানুষকে নৈতিকতার পাঠ দেয়। সৌজন্যতাই রাজনীতির সংজ্ঞা। অথচ সেই সৌজন্য বদলে গিয়ে শুধু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের উৎকট নেশা চেপেছে বিরোধীদের। মানুষের অধিকারের জন্য পা মেলানোর মহতী উদ্যোগ কী করে প্রতিহিংসার জন্ম দেয় আমি ভেবে পাই না। এ সত্যিই অন্ধকারের দিকে যাত্রা… এ-ভারি দুর্ভাগ্যের। ভারি চিন্তার। যদিও আমরা জানি এর উপযুক্ত জবাব ২০২৪ এমনকী ২০২৬-এই আপনারা আবার পাবেন এই অভিষেক আর আমাদের প্রিয় দিদির নেতৃত্বে। তাই যতই ঢ্যাঁড়া পেটান কুৎসার আর যা-ই নাটক-যাত্রা করুন বাংলার মানুষের ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি থাকবেই থাকবে।