কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তিন কন্যার গল্প। না, রবি ঠাকুরের তিন কন্যা নয় এরা। তিনজনই থাকে সাউথ ক্যালকাটা। একজন লেক টাউন, একজন গড়ফা, আর একজন টালিগঞ্জ। উইক-এন্ডের সান্ধ্য আড্ডায় এরা বসেছে পাঁচতলা মলের ক্যাফেতে। আলোচনার বিষয় কখনও কখনও ভূমধ্যসাগরের সীমাও পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয়ে এ-তিনজনেই প্রায় সহমত। বিভিন্ন ভাবে গান, গল্প, আড্ডায় বলছে নিজেদের কথা। এরা ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইলো না কেহ’। প্রত্যেকেই একটা সিদ্ধান্তে অটুট। এ-জীবনে এরা এক থেকে দুই হবে না। সংসার থেকে বহু দূরে বয়ে নিয়ে যাবে নিজেদের জীবননদী। কিন্তু ভালবাসার ক্ষেত্রে এরা অকৃপণ। এদের মধ্যে অঙ্কিতা খালি গলায় গায়— ‘তোমার কথা ভাবতে গেলে চাঁদ হয় অভিমানী বলে জোছনা চেয়ে মুখটি কি তার অনেক বেশি দামি’? শত সহস্র তারারা আমার
পায়ের কাছে লুটাচ্ছে,/ গাছেরা আমার পোশাকে শরীরে কত না ফুল ফোটাচ্ছে।/ পৃথিবী মাটির সুগন্ধ দিয়ে বলছে আমার মন নে,/ তবু আর পাগলামী করিস না তুই ঐ মেয়েটির জন্যে।/ আমি কী করি কী করি?/ কোন দিকে যাই?/ কোন পথে হারাই?/ রক্ত প্রবাহে স্লোগান উঠেছে/ তোমাকে তোমাকে চাই।
এই স্লোগান বিপ্লবে রূপান্তরিত হয় না। বাঁধ বেঁধে দেয় সেক্টর ফাইভ-এর তিন তরুণী। কিন্তু এদের মধ্যে লিসা বিশ্বাস করে অভীকের খালি গলায় গাওয়া গান— কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া/ তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া/ চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি/ গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি/ ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা/ কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা। এই প্রণয়ের কথা শুধু যে বলতে পারেনি তা নয় বলতে চায়নি লিসা। কিন্তু এই তিন কন্যার মধ্যে ঘোষিত বিবাহ-বিদ্বেষী পারমিতা। ওর বিশ্বাস— কত সাধনায় মিথ্যে মুখোশে/মুগ্ধ করেছ বটে/ কানে কানে তবু গোপন কথাটি/ বলে যাই অকপটে/ বন্ধু আমাকে বানাতে কিন্তু/ পারোনি আহাম্মক/ মনের ভেতরে দেখেছি তোমার/ লোভী চকচকে চোখ। যা কিছু মহান সুন্দর তুমি/ রপ্ত করেছ বেশ/ তোমার মাঝেই শত সুন্দর/ করে যেন সমাবেশ।
মনে নয় মেনে নেওয়া
ভারতের অধিকাংশ মেয়েই এখন বিয়ে (Marriage) করতে চান না। বরং তাদের একলা থাকার অভ্যেস রপ্ত করেছে অপেক্ষাতে। কারও কারও জীবনে অপেক্ষা পরিণত হয়েছে প্রতীক্ষায়। ভাবছে সঠিক মানুষ আসবে জীবনে। সম্প্রতি এই ডেটিং অ্যাপ তাদের সমীক্ষায় এমন তথ্যই তুলে এনেছে। যারা দেখিয়েছে বিয়ে দু’জন মানুষের নয়, দুই পরিবারের মিলন অনুষ্ঠান। তবে পরিবারের জন্য আনন্দের হলেও সমাজ ও পরিবারের প্রত্যাশার জন্য মেয়েদের কাছে তা প্রায়ই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাঁরা দেখিয়েছেন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দু’জন ভারতীয় বিশ্বাস করেন, এই রকম ঐতিহ্যের দু’জনের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক চায় তাঁদের পরিবার। একটা সমীক্ষায় তাঁদের জিজ্ঞেস করা হয় তাঁরা কখন বিয়ে করতে চান? উত্তরে ৩৯ শতাংশ জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তাঁরা বেশ চাপে আছেন এবং প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মনে করে তাঁদের একরকম বাধ্য করা হয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে থাকতে।
ভারতের একটা বড় অংশের মেয়েদের পাশাপাশি একসঙ্গে থাকা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। তার উত্তরে অধিকাংশ অবিবাহিতরাই স্বীকার করেন তাঁরা সিঙ্গল রয়েছেন বলে প্রায় বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ সময় এই বুলিংয়ের ইঙ্গিত ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে যা রীতিমতো অস্বস্তিকর।
সিঙ্গল ডেটিং বনাম সিঙ্গল সেমিং
সম্প্রতি এদেশে সচেতনভাবে সিঙ্গল ডেটিংয়ের প্রবণতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বামবেল অ্যাপের বিশ্বাস অবিবাহিত মহিলারা সচেতনভাবে সিঙ্গল থাকাই পছন্দ করেন। এমনকী কোনওরকম আপসেও তাঁরা যেতে রাজি নন। কাকে কীভাবে ডেট করবেন সে-বিষয়ে নিজের ইচ্ছাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। ডেটিং অ্যাপের সমীক্ষা অনুসারে ভারতের ৮১ শতাংশ মহিলা বলেছেন তাঁরা অবিবাহিত এবং একা থাকতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ডেটিং করার সময় ৬৩ শতাংশ মহিলারা তাঁদের পছন্দ, চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা অন্য কারও মর্জি অনুযায়ী চলতে দিতে রাজি নন। ৮৩ শতাংশ মহিলা বিশ্বাস করেন সঠিক ব্যক্তি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করতে রাজি।
বামবেলের ইন্ডিয়া কমিউনিকেশন জানায় ভারতের বিয়ের মরশুম এলেই প্রায়ই ডেটিং এবং অবিবাহিত জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। একজন সিঙ্গল মহিলাকে অবিবাহিত বলে সম্বোধন করা হয়। তাই সিঙ্গল শেমিংয়ের জন্য অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে চান না, গেলেই শুনতে হয়— ‘তোরটা কবে?’ আবার কেউ বলে আর কত দিন? কেউ আবার কৌতূহল চাপতে না পেরে বলেই ফেলে— ‘দেখা আছে? না আমরা দেখব?’ আবার কেউ বলেন— ‘আর কত দিন…? বিয়েটা করে নে।’ সিঙ্গল শেমিংয়ে সব চেয়ে বেশি যেটা শুনতে হয়— বাবা-মায়ের হোটেলে আর কত দিন! এবার বরের ঘাড় ভাঙ! ভারতীয় মেয়েরা কিন্তু এদের এসব স্লেজিংয়ে মোটেই পাত্তা দেয় না। এক কান দিয়ে ঢোকায় আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়।
আরও পড়ুন-নিষ্কৃতিমৃত্যুই কি একমাত্র সমাধান!
চুমু প্রজন্ম-লিভ টুগেদার সংস্কৃতি
সোশ্যাল মিডিয়াতে তৈরি হয়েছে অন্তি ম্যারেজ কমিউনিটি। সেখানে আলোচনা চলে কার ডিভোর্স হল। বিয়ে করে কে কতটা যন্ত্রণায় আছে। বিয়ে না করে কে কতটা ফুরফুরে দিব্যি জীবন কাটাচ্ছে। ইন্টারনেটের অনেক সাইট এই বিয়ে করার কুফল, আর বিয়ে না-করে ফুর্তিতে বাঁচার টিপস দেওয়া হচ্ছে। বিয়েহীন এই জ্বর-এ আক্রান্ত প্রকাশ্য ‘চুমু’ প্রজন্ম বা লিভ টুগেদার প্রজন্ম। তাদের বিশ্বাস ম্যারেজ ইজ নট মাই কাপ অফ টি কারণ কেবল একমাত্র পুরুষের কাছে ফেরা মাত্রই সময় নষ্ট। তারা আরও বিশ্বাস করে, আইনের চোখে বিয়েটা যত সহজ, বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসার হ্যাপা ঠিক ততটাই কঠিন। কে নেবে এই চাপ? খোঁপায় সোনার চিরুনি, লাল বেনারসির কনে-সাজে ফ্যান্টাসি, প্রথম কদম ফুল থেকে মালা বদল। আজকের প্রজন্ম এই পথচলাকেই জীবন থেকে ঘুচিয়ে দিতে চাইছে।
বিয়ের তো ছুটি হল, তাহলে এবার প্রেমটাও কি যায় যায়? সেক্টর ফাইভে মোটা মাইনের তরুণী বিদিশা অকপটে স্বীকার করে— প্রেমে যাতে থাকতে পারি তার জন্যই তো বিয়ে করছি না। সময়টা বদলেছে সেটা তো মানতে হবে। কেবল একজনের সাথেই প্রেম হবে? না আমি এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, অনেকের সাথে প্রেম হতে পারে। তাই একবার বিয়ে করলে আমার হাজব্যান্ড কি মেনে নেবে, ডিনারে বা ছুটি কাটাতে গিয়ে আমি আমার অন্য পুরুষবন্ধুকে প্রেফার করছি! সে জানলেই তো লঙ্কাকাণ্ড শুরু হবে।
রেডি তো মিঙ্গেল
২৫ বছরের তন্নি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কর্মরত ঝিলিকের গল্পটা কিন্তু অন্যরকম। ওর বাবা রিটায়ার করার পর মধ্যবিত্ত সরকার পরিবারে তার বিয়ে নিয়ে সকলে তাড়া মারতে শুরু করেছিল। সম্বন্ধও এসেছিল অনেক। কারণ তার রং ফর্সা, লেখাপড়া আছে, একটা চাকরিও আছে। কিন্তু সবটাই আটকে থাকে কফির চুমুকে। ঝিলিকের মনে হয় সামনে অনেক দায়িত্ব। ছেলে নয়, ছেলের মাকে খুশি করতে হবে। কেউ আবার খুব উন্নাসিক, কেউ খুব ডমিনেটিং, কেউ আবার অস্বাভাবিক চেহারা। শিউরে ওঠে তার সঙ্গে বিছানা শেয়ার করার কথা ভেবে। ভাবে, বাপরে! থাক এসব। ঝিলিকের মতো ৩০ পেরনো পারমিতারও একই হাল। মনের মতো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ ইংরেজি উচ্চারণে হোঁচট খায় আবার কেউ প্রচণ্ড ন্যাকা। মনের মতো পাত্র পেতে গেলে ভাবছে স্বয়ম্বর সভা ডাকতে হবে। বরং তারা দিব্যি আছে ব্যাচেলর জীবনে। কমিটমেন্টের কথায় পিছিয়ে আসা, বিয়ে নামের দায়িত্ব-প্যাকেজ এড়াতে সম্পর্কটাকেই ভেঙেচুরে ফেলা কিংবা পজেসিভ, ইমোশনাল, সেন্টিমেন্টাল গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড স্ত্রী বা স্বামীরূপে অবতীর্ণ হলে আরও কী কী ঘটিয়ে ফেলতে পারে, সেই আশঙ্কায় নতুন প্রজন্ম বিয়ের দরজা বন্ধই রেখেছে। তাদের বিশ্বাস নিজেকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে করে ফেললে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটাই বোঝা হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং প্রেমটাই থাকুক।অনেকে আবার দু’কদম এগিয়ে কমিটমেন্টহীন লিভিংয়ে বিশ্বাসী। আর সিঙ্গেল থাকলেই বা ক্ষতি কী! বিবাহহীন জীবন মানেই তো ভরপুর স্বাধীনতা।
সংস্কার সুখের হয়
অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির অধ্যাপিকা বিশ্লেষণ করেন, বিয়ের মধ্যে থাকা এআই যুগের মেয়েরা আর একসঙ্গে থাকার আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না। বিয়ের চেয়ে বিয়ের আনুষঙ্গিক দায়িত্ব বড় হয়ে উঠছে। গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবারের সঙ্গে পরিবারের বোঝাপড়া, আর বিয়ের মধ্যে যখন আরও কয়েকজন মানুষ চলে আসছে তখন সমস্যা বাড়তে থাকে। এখন দিনের অধিকাংশ প্রোডাকটিভ সময়টা কাজকে ঘিরে। সেক্ষেত্রে অন্য পরিবারের মানুষকে সময় দিয়ে তাদের আবেগকে প্যাম্পার করে চলা সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং অফিস-ফেরত ক্যাফে বা রাতের পার্টি নিমেষে মনের ক্লান্তি ঘুচিয়ে দেয়, সেটাই যথেষ্ট বলে মনে করেন এই প্রজন্মের মেয়েরা। বিয়ে করে বাড়ি ফিরে যদি রাতের ডিনার বা শ্বশুরবাড়ির নেমন্তন্নর কথা ভাবতে হয়, সেখানে ফুর্তি আর থাকে না। দায়িত্ব নেওয়ার ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকেই বিয়ের বাজার এখন মন্দা।
কলেজের অধ্যাপিকা শিল্পী মুখার্জি বিয়ে নয় লিভ ইনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। চুক্তিবদ্ধ বিয়েতে তিনি বিশ্বাসী নন। তিনি বলেন, ভালবাসলে ইচ্ছে হলে একসঙ্গে থাকব, সই করার কিছু নেই। শ্বশুরবাড়িতে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। দু’জনকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকতে হবে। বিয়ের পথে হাঁটা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় কারণ তিনি কোনওদিন বউ হতে পারবেন না। তাঁর বিশ্বাস শুধু লিভ ইনে। তারঁ আতঙ্ক কমিটমেন্ট ফোবিয়াতে। তিনিও বিশ্বাস করেন হাজার হাজার তরুণীর মতো বিয়ের সামাজিক নিরাপত্তা এখন শুধু ভণ্ডামি।
স্টেবিলিটি না রোম্যান্স!
মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী দেবলীনা বলেন, ৪৫ বা ৫০-এ গিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়বে, সেই কারণে কি ২২ বছর বয়সে একজন পুরুষকে নিয়ে সম্পর্ক তৈরি করে বিয়ে করে ফেলব? একের পর এক সম্পর্কে গিয়ে বুঝতে পেরেছি স্টেবিলিটি আর রোম্যান্স একসঙ্গে পাওয়া যায় না। আমি আপাতত রোম্যান্সই চাই। বাবা-মা বিশ্বাস করেন আগে বিয়ে পরে প্রেম কিন্তু আমার বিশ্বাস শুরুতেও প্রেম শেষেও প্রেম।
ভুবনজোড়া না-বিয়ের সংক্রমণ
আজকের প্রজন্মের কমিটমেন্ট আছে ভালবাসা আছে নিজের প্রতি, কেরিয়ারের প্রতি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় ইন্টারনেটের খোলা ভুবনে মেয়েরা প্রতিমুহূর্তে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে তাদের ভয় হচ্ছে শ্বশুরবাড়ি সামলাতে হলে বাচ্চা চলে এলে তার কেরিয়ার তার নিজের মতো করে বাঁচাটা কোথাও থমকে যেতে পারে। ভারতীয় মেয়েদের বিয়ে না করার এই অনিচ্ছা ব্যতিক্রমী নয়। বিশ্বজুড়ে বিয়ে না করার হিড়িক পড়েছে। জাপানি মেয়েদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন তাঁরা বিয়ে করবেন না। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৩৪। তাঁরা নিজেদের সিঙ্গল জীবন উপভোগ করতে চান। ব্যক্তিস্বাধীনতায় ছাড় দিতে চান না। এবং পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে চান। জাপানে ওয়ার্কোহলির তরুণীরা বিয়ে করে সংসার করার চেয়েও নিজেদের পেশাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। শুধু জাপান নয়, বিশ্বের বহু দেশেই বিয়ে-কেন্দ্রিক সাংসারিক চাপ ও দায়িত্ব সামলাতে পারছেন না। পাশাপাশি মানিয়ে চলা ও পরস্পরকে বোঝার ধৈর্যও কমে গেছে। এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের কাজের গণ্ডি বেড়েছে। বেড়েছে ব্যস্ততা ও দায়িত্ব। ঘরের দায়িত্ব এবং ঘরের বাইরের কাজের দায়িত্বও— দুটোই বেড়েছে সমান তালে। চিনের তরুণীরাও বিয়েতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যাপারে বেশি উৎসাহী। বিয়েটাকে বোঝা মনে করছেন। মনে করছেন অতিরিক্ত দায়বদ্ধতা। তরুণীদের এই ‘বিয়ে ভীতি’র হার বাড়ছে। সেটা কি শুধু দায়িত্ব এড়ানোর জন্য? স্বাধীন জীবনযাপনের জন্য? নাকি সংসার-ভাঙনের ভয় থেকে?
হোয়াইট ম্যারেজেও গ্যামোফোবিয়া
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বিয়ের ভয়কে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলা হয়। গ্রিক ভাষায় ‘গ্যামো’ মানে বিয়ে, ‘ফোবিয়া’ মানে ভয়। গ্যামোফোবিয়া হল বিয়ে কিংবা কোনও ধরনের স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয়। গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের কাছে বিয়েকে সরল জীবনযাপনের প্রতি হুমকি মনে হয়। এছাড়া, সম্পূর্ণ নতুন একটি মানুষের সঙ্গে বসবাস ও তার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার বিষয়টিকেও তারা সহজভাবে নিতে পারে না। শুধু আধুনিক দেশেই বিয়ে ছাড়া একসঙ্গে থাকার সংখ্যা বাড়ছে, তা নয়। সৌদি আরবে ক্রমেই চুক্তিভিত্তিক বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে। শর্তহীন এই বিয়ে সৌদি সমাজে ‘মিসইয়ার’ নামে পরিচিত। তবে এই বিয়ে নিয়ে চিন্তিত সৌদির ধর্মীয় ব্যক্তিরা। তাদের অভিযোগ, মিসইয়ারের মাধ্যমে আদতে উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এর জন্যে বিশেষ ‘ম্যাচ-মেকিং’ সাইট বা গ্রুপও আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। বিয়ে ছাড়া একসঙ্গে থাকাকে ইরানে বলা হয় ‘হোয়াইট ম্যারেজ’ বা সাদা বিয়ে। ইরানি সমাজেও নারী-পুরুষের একসঙ্গে থাকা অবৈধ। কিন্তু তারপরও দেশটিতে এই সাদা বিয়ে চলছে। এটা ক্রমান্বয়ে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে বলে ইরানের প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে।
ভালবাসব আবার
ভারতীয় মেয়েরা বিয়ে-বিমুখ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রেম-বিমুখ হয়নি। তারা আজও স্বপ্ন দেখে নিজেদের মতো করে। সেক্টর ফাইভের মেঘলা বিকেলে উইন্ডোস্ক্রিনে তাকিয়ে গাইতে থাকে— আবার যেদিন তুমি সমুদ্রস্নানে যাবে আমাকেও সাথে নিও। বলো, নেবে তো আমায়? আর মকর্শালের ছাদবারান্দায় দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির জালনা দিয়ে ভেসে আসা গান শোনে— তোমার এত ভালবাসা কোথায় আমি রাখব বল না? যেথায় রইব শুধু তুমি আমি সেথায় চল না!