দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল মুন্নার (Munnar)। পশ্চিমঘাট পর্বতের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। কেরলের ইদুক্কি জেলায় অন্তর্গত। মুথিরাপুরা, নল্লাথান্নি ও কুন্ডালা এই তিন পার্বত্য নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। স্থানীয়দের ধারণা, তাই এইরকম নামকরণ। উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ১৬০০ মিটার। পাহাড়ের গায়ে থরে থরে সাজানো সবুজ চা-বাগান। তার নরম শরীরে লাগে মেঘের আলতো ছোঁয়া। দেখে শিহরন জাগে। একসময় দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ সরকারের গ্রীষ্মকালীন রিসর্ট ছিল। বিস্তৃত অঞ্চল। চা-বাগানের পাশাপাশি আছে নানা রকমের গাছ। পাক দিয়ে ওঠা রাস্তা এবং অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা এই শহরটিকে জনপ্রিয় রিসর্ট টাউন করেছে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে মুন্নারকে বলা হয় কেরলের কাশ্মীর। সুউচ্চ পাহাড় পছন্দের গন্তব্য হলে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই শৈল শহরে। আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা।
আনামুদি শৃঙ্গ : মুন্নারে (Munnar) অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনামুদি। উচ্চতা ২৭০০ মিটার। ট্রেক করার পক্ষে একটি আদর্শ জায়গা। প্রাকৃতিক পরিবেশ অতি মনোরম। ইরাভিকুলমে বন এবং বন্যপ্রাণী দফতর থেকে অনুমতি নিয়ে এই শৃঙ্গে ওঠা যায়।
ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক : মুন্নারের একটি আকর্ষণীয় জায়গা ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক। ৯৭ কিলোমিটার বিস্তৃত। বিপন্ন প্রজাতির নীলগিরি থার-এর জন্য এই পার্কটি বিখ্যাত। দুষ্প্রাপ্য প্রজাপতি, জন্তু এবং পাখির আশ্রয়স্থল। ট্রেকিং-এর পক্ষে পার্কটি দারুণ। এখান থেকে কুয়াশায় মোড়া চা-বাগানগুলি দেখতে দারুণ লাগে। ছবির মতো সুন্দর। ফোটে নীলাকুরিঞ্জি ফুল। এই গাছে ফুল আসে প্রতি বারো বছরে মাত্র একবার।
চক্রমুদি চূড়া : মুন্নারের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি চক্রামুদি চূড়া। এই চূড়া থেকে উপত্যকা, অরণ্য এবং ইদুক্কি বাঁধের অনেকটা অংশ দেখতে পাওয়া যায়। এই চূড়াটি ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে অবস্থিত।
সেলিম আলি পক্ষী অভয়ারণ্য : মুন্নারের সেলিম আলি পক্ষী অভয়ারণ্য। শত শত ধরনের বিরল প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এই অভয়ারণ্যে পাখি দেখার সময় নিতে হয় প্রশিক্ষিত গাইডের সাহায্য। তারাই পাখিদের চিনতে সাহায্য করে। দেখতে পাবেন নানা রকমের গাছ।
চিন্নার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য : কেরলের সংরক্ষিত অঞ্চলে তৈরি বারোটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে অন্যতম চিন্নার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যে আছে বাঘ, চিতাবাঘ, বন্য হাতি, সরু লরিস কুমির, দাগযুক্ত হরিণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কিছু প্রাণী এই অভয়ারণ্যে সহজে দেখতে পাওয়া যায়।
মাত্তুপেট্টি : মাত্তুপেট্টি মুন্নারের একটি আকর্ষণীয় জায়গা। মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাত্তুপেট্টির পরিচিতি কংক্রিটের তৈরি বাঁধ এবং হ্রদের জন্য। চারপাশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই হ্রদে নৌকাবিহার করা যায়। মাত্তুপেট্টিতে আছে ডেয়ারি ফার্ম। এই ফার্মটি চালায় ইন্দো-সুইস লাইভস্টক প্রোজেক্ট।
পল্লিভাসল : মুন্নারের চিথিরাপুরম থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পল্লিভাসল। এখানেই গড়ে উঠেছে কেরলের প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন।
চিন্নাকনাল জলপ্রপাত : মুন্নারের কাছেই অবস্থিত চিন্নাকনাল জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত পাওয়ার হাউস জলপ্রপাত হিসেবেও পরিচিত। সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা ২০০০ মিটার। একটি পাথর থেকে জলপ্রপাতটি ঝরে পড়ে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আনয়িরঙ্গাল : চিন্নাকনাল থেকে সাত কিলোমিটার ও মুন্নার থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আনয়িরঙ্গল। সবুজ চা-বাগানে ঢাকা। এর জলাধারে ভ্রমণ করা যায়। চা-বাগানের পাশাপাশি আনয়িরঙ্গাল ঘিরে রয়েছে চিরহরিৎ অরণ্য।
টপ স্টেশন : মুন্নার থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টপ স্টেশন। উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ১৭০০ মিটার। এটা মুন্নার কোদাইকানাল রোডের সর্বোচ্চ বিন্দু। তামিলনাড়ুর বিস্তৃত সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মুন্নারে আসা পর্যটকরা একবার অন্তত টপ স্টেশনে আসেন। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে যান।
আরও পড়ুন- মণিপুরের বিজেপি সরকারের উপর রাজ্যবাসীর আস্থা নেই
চা মিউজিয়ম : মুন্নারে আছে চা মিউজিয়ম। এই মিউজিয়মে চা-সংক্রান্ত জিনিসপত্র, মেশিন এবং ফটোগ্রাফ রয়েছে। যার প্রত্যেকটির পিছনে মুন্নারে চা-বাগানের উৎস এবং উন্নতির গল্প লুকিয়ে রয়েছে। মুন্নারের নল্লাথান্নি এস্টেটে এই মিউজিয়মটি অবস্থিত।
কুন্ডালা হ্রদ : কুন্ডালা হ্রদ মুন্নারের (Munnar) অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। পাহাড়ে ঘেরা। বাঁধ দিয়ে তৈরি একটি সুন্দর কৃত্রিম হ্রদ। এই হ্রদে আছে প্যাডেল বোট। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ানো যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ।
ইকো পয়েন্ট : মুন্নারের (Munnar) ইকো পয়েন্ট খুব মজাদার এবং আকর্ষণীয় জায়গা। আছে হ্রদ। তিনদিকে পর্বতশ্রেণি দিয়ে ঘেরা। হ্রদে বোটিং করা যায়। উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কালারি ক্ষেত্র : বিশ্বের মার্শাল আর্টের প্রাচীনতম রূপ দেখতে হলে দক্ষিণ ভারতের এই জায়গায় আসতে হবে। এই যুদ্ধ শৈলীটি এখনও মুন্নারে কালারি ক্ষেত্রে শেখানো হয়। প্রতিদিন কালারিপায়াত্তু পারফরম্যান্সের সঙ্গে কথাকলি নৃত্যের অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এখানে একটি সন্ধে কাটালে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে।
মারায়ূর : মারায়ূর মুন্নারের একটি অসাধারণ বেড়ানোর জায়গা। দর্শনীয় অনেক কিছু রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম ডলমেন। মনে করা হয় এটা প্রস্তর যুগের নিদর্শন। এই অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা চন্দন কাঠের বন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আখের খেত, বাঁশের বন এবং জলপ্রপাত। সবকিছুই দেখার মতো।