কুমায়ুন পর্বতের রানি হল রানিখেত (Ranikhet)। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। আলমোড়া জেলার এই ক্যান্টনমেন্ট শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬১৩২ উচ্চতায় অবস্থিত। একটা সময় কাত্যুরি ও চাঁদ বংশের শাসকেরা এখানে শাসন করেছেন। কাত্যুরি রাজা দুধন দেব ও রানি পদ্মিনী এই অঞ্চলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। বসবাস শুরু করেন। মনে করা হয়, সেই কারণেই জায়গাটির নাম হয়েছে রানিখেত। অন্য মত অনুসারে, রানিখেতে (Ranikhet) একসময় প্রচুর যুদ্ধ হয়েছে। রণক্ষেত্র থেকেই জায়গাটার নাম হয়েছে রানিখেত। ব্রিটিশ ভারতে রানিখেতকে গ্রীষ্মকালীন সদর দফতর হিসাবে মনোনীত করার কথা ভাবা হয়েছিল। বর্তমানে রানিখেত কুমায়ুন রেজিমেন্টের সদর দফতর। রানিখেত গলফ কোর্স এশিয়ার সর্বোচ্চ গলফ কোর্স। এখানে খেলতে আসেন বহু বিখ্যাত মানুষ।
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি উত্তরাখণ্ডের ছোট-বড় পাহাড় এবং উপত্যকা, বনাঞ্চলে ঘেরা। চারপাশের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে নানারকম ফুল, সবুজ তৃণভূমি, পাইন, ওক, দেবদারু গাছ। বর্ষার সময় সবুজ বনাঞ্চলে ঘুরতে দারুণ লাগে। এই অঞ্চল চিতাবাঘ, বার্কিং ডিয়ার, পাহাড়ি ছাগল এবং লঙ্গুর-সহ বিস্তৃত বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। যাঁরা শহরের কোলাহলমুখর জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা রানিখেত। এখানে আছে প্রচুর পর্যটন কেন্দ্র। সেগুলো অতি সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর।
জায়গাগুলো কী কী?
চৌবাটিয়া বাগান
শহরের কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চৌবাটিয়া বাগান। বাস বা ট্যাক্সিতে পৌঁছনো যায়। এই বাগানে দেখা যায় নানারকমের ফুল। এখান থেকে চোখে পড়ে হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ নন্দা দেবী এবং ত্রিশূল পর্বতমালা।
আশিয়ানা পার্ক
রানিখেতে (Ranikhet) খোলা প্রথম থিম পার্ক হল আশিয়ানা পার্ক। দেবদার উদ্যান নামেও পরিচিত। এটা রানিখেতের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন উপাদান। আছে এন্ট্রি ফি। গেমস এবং বোটিংয়ের জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।
রানি ঝিল
রানি ঝিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের উদ্যোগে বৃষ্টির জল সংগ্রহের জলাধার হিসেবে নির্মিত। এখানে অনেকেই পিকনিক করেন। ঝিলে বোলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভালু বাঁধ
ভালু বাঁধ রানিখেতের একটি দুর্দান্ত জায়গা। এটা শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাস বা ট্যাক্সিতে পৌঁছনো যায়। জায়গাটা ছবির মতো সুন্দর।
সানসেট পয়েন্ট
শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সানসেট পয়েন্ট হল রানিখেতের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। সূর্যাস্ত দেখার পাশাপাশি হিমালয়ের শীতল বাতাস গায়ে মাখার জন্য বহু মানুষ এখানে আসেন।
মাজখালি
মাজখালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতি মনোরম। রানিখেত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সারা বছর বহু পর্যটক ভিড় জমান। বেশি ভিড় হয় বৃষ্টিদিনে। বর্ষায় এলাকা সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে।
ম্যানিলা গ্রাম
শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ম্যানিলা গ্রাম। একটি নিরিবিলি জায়গা। রানিখেত থেকে বাস বা গাড়িতে যাওয়া যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানকার আকর্ষণীয় জায়গা কৃত্রিম হ্রদ কায়াকিং। ধানের খেত দেবে চোখের আরাম।
মিউজিয়াম
কুমায়ুন রেজিমেন্টাল সেন্টার মিউজিয়ামটি ইতিহাসপ্রেমী এবং পর্যটকদের পরিদর্শন করা আবশ্যক। এটা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছনো যায়। প্রবেশ ফি আছে। সাতের দশকের গোড়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর কুমায়ুন রেজিমেন্ট এই মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখানে দেখা যায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর কুমায়ুন এবং গাড়ওয়াল রেজিমেন্টের যুদ্ধ নিদর্শন।
আরও পড়ুন- দেশে রেকর্ড, এবার সংসদে তৃণমূলের ৩৮% মহিলা
তরিখেত গ্রাম
রানিখেতের একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য তরিখেত গ্রাম। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। গ্রামটি পাহাড় এবং জঙ্গলে ঘেরা। এখান থেকে হিমালয়ের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখা যায়। তরিখেতে বিখ্যাত রাজভবনও রয়েছে। সেটা ব্রিটিশ ভাইসরয়দের গ্রীষ্মকালীন বাসভবন ছিল। গ্রামটি শহরের কেন্দ্রের সঙ্গে ভালভাবে সংযুক্ত। বাস বা ট্যাক্সিতে সহজেই পৌঁছনো যায়।
সদর বাজার
রানিখেতের সদর বাজার তাজা পণ্য, মশলা এবং হস্তনির্মিত পণ্যের জন্য পরিচিত। বাজারটি শহরের কেন্দ্রের ঠিক বাইরে অবস্থিত। পায়ে হেঁটে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে পৌঁছনো যায়। এখান থেকে কেনা যায় স্মারক এবং উপহার।
আপেল বাগান
আপেল বাগান একটি দুর্দান্ত বেড়ানোর জায়গা। শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাস বা ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছনো যায়। বহু পর্যটক ভিড় জমান।
কীভাবে যাবেন?
যাওয়া যায় ট্রেনে। রানিখেত রেলওয়ে স্টেশন ভারতের সমস্ত বড় শহরের সঙ্গে সংযুক্ত। যাওয়া যায় বিমানেও। দেরাদুন বিমানবন্দরে নেমে বাস বা গাড়িতে যেতে হয়। সড়কপথে পন্তনগর থেকে রানিখেত, হলদওয়ানি নৈনিতাল এবং আলমোড়া পর্যন্ত ট্যাক্সি পাওয়া যায়। হলদওয়ানি, কাঠগোদাম এবং নৈনিতালের মধ্যে চলা বাস রানিখেতে (Ranikhet) নিয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন?
রানিখেতে আছে বেশকিছু হোটেল, গেস্ট হাউস। থাকা খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। কমপক্ষে তিনদিন সময় লাগবে রানিখেত ঘুরে দেখার জন্য। রানিখেত রকমারি মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় বাজার থেকে উলের পোশাক এবং হস্তশিল্প সামগ্রী কেনা যায়।