জিন্দেগি লম্বি নেহি
বড়ি হোনি চাহিয়ে
এটাই ট্যাগ লাইন ছবি ‘সালাম ভেঙ্কি’র (Salaam Venky)। নারী প্রধান এই ছবিটির পরিচালকও একজন মহিলাই। তিনি হলেন রেবতী মেনন। প্রায় আঠারো বছর পর আবার পরিচালনায় রেবতী। এর আগে ২০০৪ সালে ‘মিত্র মাই ফ্রেন্ড’ ছবিটির জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। ‘সালাম ভেঙ্কি’ তাঁর পরিচালিত একটি ভিন্নধর্মী প্রজেক্ট। ছবিটির উৎস শ্রীকান্ত মেননের উপন্যাস ‘দ্য লাস্ট হুরে’। যেখানে রয়েছে এক মা আর ছেলের লড়াইয়ের গল্প। একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এই উপন্যাস খুবই মর্মস্পর্শী।
বিরল একটি রোগ ‘ডাচেন মাসকুলার ডিসট্রফি’তে আক্রান্ত ভেঙ্কটেশ বা ভেঙ্কি-ই এই ছবির নায়ক, সে যেন জীবনেরও নায়ক। ঈশ্বর কৃপণ হাতে মেপে দিয়েছেন তাঁর আয়ু। সেই মাপা সময়ের মধ্যেই মা সুজাতার হাত ধরে গোটা জীবনটাই কীভাবে বাঁচবে ভেঙ্কি সেই গল্পই বলবে এই ছবি। সত্তরের দশকের বিখ্যাত হিন্দি ছবি আনন্দ-র সেই বিখ্যাত সংলাপ যা ছিল আসল ভেঙ্কটেশ ওরফে ভেঙ্কির পছন্দের লাইন। আর সেই বার্তাই রেবতীও দিতে চেয়েছেন তাঁর ছবি ‘সালাম ভেঙ্কি’র মাধ্যমে। হোক না জীবন ছোট, প্রাণভরে বাঁচাই আসল।
এই ছবিটির কাস্টিং-এও রয়েছে ভিন্নতা। ভেঙ্কির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী কাজল এবং অসুস্থ ছেলে ভেঙ্কির চরিত্রে ‘মার্দানি’ ছবি খ্যাত অভিনেতা বিশাল জেঠওয়া। সবচেয়ে বড় চমক হল বহুবছর পর ছবিটিতে পর আবার কাজলের সঙ্গে দেখা যাবে আমির খানকে। ভেঙ্কির বাবার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। এর আগে এই জুটিকে দেখা গিয়েছিল ‘ফানা’ এবং ‘ঈশক’ ছবিতে।
ছবিতে ভেঙ্কি অর্থাৎ হায়দরাবাদের ভেঙ্কটেশ যে কি না ডাচেন মাসকুলার ডিসট্রফি নামের একটি বিরল রোগের শিকার। এই রোগে আক্রান্ত হলে ষোলো বছরের বেশি বাঁচে না কিন্তু ভেঙ্কটেশ ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল। তার মা সন্তানের সেই বেঁচে থাকার সময়টাকে ঘিরে এক নতুন জীবনের ছবি এঁকেছিলেন। সেই মা এবং ছেলের লড়াই, তাঁদের চ্যালেঞ্জ, বিফলতা, সাফল্য সবটা নিয়ে ‘সালাম ভেঙ্কি’ (Salaam Venky)।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় গুজরাত ও হিমাচল ১ : ১, জাতীয় সভাপতি নাড্ডার রাজ্যই হাতছাড়া বিজেপির, ক্ষমতায় ফিরছে কং
সম্প্রতি এই ছবির প্রচারের জন্য কলকাতা ঘুরে গেলেন ‘সালাম ভেঙ্কি’র কোর টিম। পরিচালক রেবতী মেনন, অভিনত্রী কাজল এবং অভিনেতা বিশাল জেঠয়া। কলকাতার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জমিয়ে আড্ডা দিলেন। সেখানে ছবির প্রসঙ্গে পরিচালক বললেন, ‘‘এই ছবি তৈরি করার জার্নিটা খুব সুন্দর। শ্রীকান্ত মূর্তির ‘দ্য লাস্ট হুরে’ উপন্যাসটিতে ভেঙ্কটেশের কথা পড়ে আমি ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হই। বিরল রোগে আক্রান্ত ভেঙ্কটেশ নিজের আয়ু কম জেনেও কী দারুণভাবে বাঁচতে চেয়েছিল এবং তাঁর সেই লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন মা সুজাতাও। আসল ভেঙ্কটেশের প্রিয় ছবি ছিল আনন্দ এবং সেও মনে করত জীবন অনেক বড় হওয়া উচিত, দীর্ঘ নয় তাই ওটাই আমার ছবির মূলবার্তা। তিনি আরও বলেন আমাদের দেশে মেডিক্যাল ফেসিলিটি অনেক রয়েছে কিন্তু অনেকেই তা জানে না। হিমালয়ের সোলানে মানবমন্দির নামে একটি সংস্থা রয়েছে যেখানে এই রোগে আক্রান্তকে কীভাবে যত্ন করতে হয় তা শেখানো হয়।”
শুধু বিনোদন নয় মানুষের মধ্যে রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিও এই ছবির লক্ষ্য।
এই ছবির প্রচারে বহুবছর পর কলকাতায় পা রাখলেন অভিনেত্রী কাজল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম গল্পটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং না করে দিয়েছিলাম কারণ আমিও একজন মা। মা হিসেবে এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে চাইনি যেখানে তার সন্তানের সঙ্গে এমন কিছু ঘটে। কিন্তু রেবতী ম্যাম আমাকে অনুরোধ করে একবার চিত্রনাট্য শোনার জন্য। চিত্রনাট্য শোনার পর না করার কোনও জায়গা ছিল না। বিষয়টা খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল।’ তার চরিত্রটিকে আর পাঁচটা মায়ের সঙ্গে তুলনায় নারাজ কাজল এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উওরে বলেন, আমি মনে করি প্রত্যেক মায়ের তাঁর সন্তানকে মানুষ করার ধরন আলাদা হলেও সবাই আল্টিমেটলি মা-ই। মায়েদের কোনও বিভাজন হয় না। আমিও একজন টিপিক্যাল মা-ই তবে সেটা আমার মতো করে।
কলকাতায় এসে দারুণ মুডে ছিলেন অভিনেত্রী। বাংলার সঙ্গে তার নাড়ির টান যে। আসার আগেই প্ল্যান করে নিয়েছিলেন চুটিয়ে বাঙালি খাবারই খাবেন। প্রেস মিটে অভিনেত্রী জানান কলকাতায় এসেই তিনি ফুড কোমায় চলে গিয়েছিলেন। খেয়েছেন প্রচুর বাঙালি খাবার।
সহ-অভিনেতা বিশাল জেঠওয়া কলকাতায় এসে প্রথম বাংলায় কথা বললেন। এর আগে তাঁকে দেখা গেছে রানি মুখার্জির সঙ্গে মার্দানি ২ ছবিতে। ছবির ট্রেলারই প্রমাণ করে তিনি বলিষ্ঠ অভিনেতা। তাঁর চরিত্রটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভেঙ্কি চরিত্রটা আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এতদিন যে চরিত্রে কাজ করেছি এটা তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করাটাই একজন অভিনেতার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি। মার্দানির পর দর্শকের আমার প্রতি প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। ডাচেন মাসকুলার ডিসট্রফি রোগটি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। রেবতী ম্যাম আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন এই বিষয়। সহ-অভিনেত্রী হিসেবে কাজলের সঙ্গে কাজ করতে পেরে দারুণ খুশি ভেঙ্কি বিশাল জেঠওয়া। এর আগে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রসঙ্গত তিনি মজা করে বলেন, ‘মুখোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে কাজ করা দারুণ ব্যাপার। আমার কী অবস্থা হয়েছিল সবাই জানে।’
সালাম ভেঙ্কির (Salaam Venky) গল্প এবং চিত্রনাট্য সমীর অরোরা এবং কাউসর মুনিরের। এই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রাজীব খান্ডেলওয়াল। যিনি ভেঙ্কির চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া রয়েছেন কামাল সাদানা, অনন্ত মহাদেব, অহনা কামরা, প্রিয়ামণি প্রমুখ। ছবির প্রযোজনায় বিলাইভ প্রোডাকশন এবং আজকে স্টুডিওজ। ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে আগামী ৯ ডিসেম্বর।