কপালকুণ্ডলা চরিত্র
ঘন অন্ধকার সমুদ্রতীর। সেখানে একটি মেয়ে রক্ষা করলেন নবকুমারকে কাপালিকের বলিদানের হাত থেকে। সেই মেয়েটি হলেন কপালকুণ্ডলা। ঘরনি হয়ে উঠলেন নবকুমারের। সংসার-অনভিজ্ঞা কপালকুণ্ডলার পদে পদে বাধা। নবকুমারের প্রথম স্ত্রী মতিবিবির ষড়যন্ত্রে এবং কাপালিকের চক্রান্তে নবকুমারের চোখে কপালকুণ্ডলা অবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। পরিণতিতে নদীবক্ষে কপালকুণ্ডলার জীবন বিসর্জন। নবকুমারও স্ত্রীর পথ অনুসরণ করলেন। এমন একটি কাহিনির রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র। নামভূমিকায় অভিনয় করলেন মহুয়া রায়চৌধুরী (Mahua roy chowdhury)। তিনি যেন উপন্যাসের পাতা থেকে সোজাসুজি উঠে এলেন রূপালি পর্দায়। ছবিতে বহু শিল্পী ছিলেন, তবু সবার মনে দাগ কাটলেন মহুয়া। এই অভিনয় মহুয়াকে অন্য একটা মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল।
সেই মহুয়ার ব্যক্তিগত জীবন
কপালকুণ্ডলার মতো দুঃখ আর দুর্গতিতে ভরা মহুয়ার (Mahua roy chowdhury) জীবন। জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী মেয়ের নাম দিয়েছিলেন শিপ্রা। বহু বিচিত্রানুষ্ঠানে হিন্দি গানের সঙ্গে নাচের অনুষ্ঠান করেছেন। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। গায়িকা বনশ্রী সেনগুপ্ত মহুয়াকে নিয়ে যান তরুণবাবুর কাছে। স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হন মহুয়া। তরুণবাবুর তৎকালীন অভিনেত্রী স্ত্রী সন্ধ্যা রায় তালিম দিলেন মহুয়াকে। তরুণ মজুমদার নতুন নাম দিলেন মহুয়া। এই ছবিতেও প্রচুর শিল্পীর ভিড়। তবু প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন মহুয়া। পুজোয় মুক্তি পাওয়া শ্রীমান পৃথ্বীরাজ রাতারাতি মহুয়াকে স্টার বানিয়ে ছাড়ল। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রেমবিবাহ
জনপ্রিয় নায়িকা থাকতে থাকতে প্রেমে পড়লেন একদা শিশু শিল্পী তিলক-এর সঙ্গে। ‘আনন্দমেলা’ ছবির সূত্র ধরে তিলক-মহুয়া (Mahua roy chowdhury) কাছাকাছি এসেছিলেন। প্রেমে মশগুল হলেন। চার হাতে এক হতে সময় লাগেনি। তাঁদের একটি পুত্রসন্তান। নাম গোলা। টালিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এমনকী বেহালা অঞ্চলে কাটিয়েছেন এই শিল্পী-দম্পতি। পরে নিজের বাড়ি তৈরি করেন টালিগঞ্জের করুণাময়ীতে। যদিও সেই বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করতে পারেননি মহুয়া। তার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।
মহুয়ার বিপরীতে নায়কেরা
সবচেয়ে বেশিবার রঞ্জিত মল্লিকের বিপরীতে মহুয়াকে পাওয়া গেছে (প্রতিশ্রুতি, কপালকুণ্ডলা, শঠে শাঠ্যং, মান অভিমান, শত্রু, সন্ধ্যা প্রদীপ, লাল গোলাপ)। তাপস পালের সঙ্গে (দাদার কীর্তি, কেনারাম বেচারাম, অনুরাগের ছোঁয়া, পারাবত প্রিয়া, যোগ বিয়োগ), সন্তু মুখোপাধ্যায় (শেষরক্ষা, বোধন), দীপঙ্কর দে (সৎমা, পিপাসা, শাপমুক্তি), বিশ্বজিৎ (রাধারানী, রেঞ্জার সাহেব), প্রসেনজিৎ (নীলকণ্ঠ, মধুময়), চিরঞ্জিত (দিন যায়, প্রেম ও পাপ), অসীম কুমার (লালন ফকির), মিঠুন চক্রবর্তী (উপলব্ধি)।
স্মরণীয় চরিত্রায়ণ
কিছু কিছু ছবিতে মহুয়ার স্মরণীয় অভিনয় দর্শকেরা ভুলতে পারবেন না। যেমন তপন সিংহ পরিচালিত হিন্দি ‘আদমি ঔর আউরত’ ছবিতে মুসলমান গর্ভবতী রমণীর চরিত্রে। সে-এক অসাধারণ অভিনয়। সর্বভারতীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মহুয়া এই ছবি থেকে। ‘দাদার কীর্তি’তে সেই গম্ভীর নায়িকা সরস্বতীকে কি ভোলা যায়? সেই নায়িকা যখন নায়কের গানটি শুনিয়ে দেন ‘চরণ ধরিতে দিওগো আমারে’, তখন পর্দার শিল্পীরাই নন, আসনে উপবিষ্ট দর্শকেরাও কেঁদে আকুল হন। ‘দৌড়’ ছবিতে প্রতিবন্ধী নায়িকার চরিত্রে মহুয়ার অভিনয় এক কথায় অভূতপূর্ব। ‘বেহুলা লক্ষীন্দর’ ছবিতে বেহুলা চরিত্রে তিনি এক অন্য মহুয়া। পুরাণের নায়িকা তখন তিনি। ‘পারাবত প্রিয়া’ ছবিতে ত্যাগে উজ্জ্বল মহুয়া এক নার্সের চরিত্রে। ‘অভিমান’ ছবিতে অভিমানী মহুয়া দর্শকদের আকৃষ্ট করেন বটে।
আরও পড়ুন- শ্রাবণধারায় শিবমাস
বিখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে
কলকাতার প্রায় সব বড় পরিচালকের হাতে কাজ করেছেন মহুয়া। সে-তালিকায় তরুণ মজুমদার (শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, দাদার কীর্তি) তো আছেনই, এছাড়া রয়েছেন তপন সিংহ (রাজা), অগ্রদূত (সূর্যসাক্ষী), অগ্রগামী (যে যেখানে দাঁড়িয়ে), অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (অজস্র ধন্যবাদ, প্রায়শ্চিত্ত, কেনারাম বেচারাম), পিনাকী মুখোপাধ্যায় (প্রতিশ্রুতি, কপালকুণ্ডলা), সলিল দত্ত (বাবুমশাই, রাজেশ্বরী, সেই চোখ), পীযূষ বসু (বাঘবন্দী খেলা),
কপালকুণ্ডলা চরিত্র
ঘন অন্ধকার সমুদ্রতীর। সেখানে একটি মেয়ে রক্ষা করলেন নবকুমারকে কাপালিকের বলিদানের হাত থেকে। সেই মেয়েটি হলেন কপালকুণ্ডলা। ঘরনি হয়ে উঠলেন নবকুমারের। সংসার-অনভিজ্ঞা কপালকুণ্ডলার পদে পদে বাধা। নবকুমারের প্রথম স্ত্রী মতিবিবির ষড়যন্ত্রে এবং কাপালিকের চক্রান্তে নবকুমারের চোখে কপালকুণ্ডলা অবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। পরিণতিতে নদীবক্ষে কপালকুণ্ডলার জীবন বিসর্জন। নবকুমারও স্ত্রীর পথ অনুসরণ করলেন। এমন একটি কাহিনির রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র। নামভূমিকায় অভিনয় করলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। তিনি যেন উপন্যাসের পাতা থেকে সোজাসুজি উঠে এলেন রূপালি পর্দায়। ছবিতে বহু শিল্পী ছিলেন, তবু সবার মনে দাগ কাটলেন মহুয়া। এই অভিনয় মহুয়াকে অন্য একটা মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল।
সেই মহুয়ার ব্যক্তিগত জীবন
কপালকুণ্ডলার মতো দুঃখ আর দুর্গতিতে ভরা মহুয়ার জীবন। জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী মেয়ের নাম দিয়েছিলেন শিপ্রা। বহু বিচিত্রানুষ্ঠানে হিন্দি গানের সঙ্গে নাচের অনুষ্ঠান করেছেন। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। গায়িকা বনশ্রী সেনগুপ্ত মহুয়াকে নিয়ে যান তরুণবাবুর কাছে। স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হন মহুয়া। তরুণবাবুর তৎকালীন অভিনেত্রী স্ত্রী সন্ধ্যা রায় তালিম দিলেন মহুয়াকে। তরুণ মজুমদার নতুন নাম দিলেন মহুয়া। এই ছবিতেও প্রচুর শিল্পীর ভিড়। তবু প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন মহুয়া। পুজোয় মুক্তি পাওয়া শ্রীমান পৃথ্বীরাজ রাতারাতি মহুয়াকে স্টার বানিয়ে ছাড়ল। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রেমবিবাহ
জনপ্রিয় নায়িকা থাকতে থাকতে প্রেমে পড়লেন একদা শিশু শিল্পী তিলক-এর সঙ্গে। ‘আনন্দমেলা’ ছবির সূত্র ধরে তিলক-মহুয়া কাছাকাছি এসেছিলেন। প্রেমে মশগুল হলেন। চার হাতে এক হতে সময় লাগেনি। তাঁদের একটি পুত্রসন্তান। নাম গোলা। টালিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এমনকী বেহালা অঞ্চলে কাটিয়েছেন এই শিল্পী-দম্পতি। পরে নিজের বাড়ি তৈরি করেন টালিগঞ্জের করুণাময়ীতে। যদিও সেই বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করতে পারেননি মহুয়া। তার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।
মহুয়ার বিপরীতে নায়কেরা
সবচেয়ে বেশিবার রঞ্জিত মল্লিকের বিপরীতে মহুয়াকে পাওয়া গেছে (প্রতিশ্রুতি, কপালকুণ্ডলা, শঠে শাঠ্যং, মান অভিমান, শত্রু, সন্ধ্যা প্রদীপ, লাল গোলাপ)। তাপস পালের সঙ্গে (দাদার কীর্তি, কেনারাম বেচারাম, অনুরাগের ছোঁয়া, পারাবত প্রিয়া, যোগ বিয়োগ), সন্তু মুখোপাধ্যায় (শেষরক্ষা, বোধন), দীপঙ্কর দে (সৎমা, পিপাসা, শাপমুক্তি), বিশ্বজিৎ (রাধারানী, রেঞ্জার সাহেব), প্রসেনজিৎ (নীলকণ্ঠ, মধুময়), চিরঞ্জিত (দিন যায়, প্রেম ও পাপ), অসীম কুমার (লালন ফকির), মিঠুন চক্রবর্তী (উপলব্ধি)।
স্মরণীয় চরিত্রায়ণ
কিছু কিছু ছবিতে মহুয়ার স্মরণীয় অভিনয় দর্শকেরা ভুলতে পারবেন না। যেমন তপন সিংহ পরিচালিত হিন্দি ‘আদমি ঔর আউরত’ ছবিতে মুসলমান গর্ভবতী রমণীর চরিত্রে। সে-এক অসাধারণ অভিনয়। সর্বভারতীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মহুয়া এই ছবি থেকে। ‘দাদার কীর্তি’তে সেই গম্ভীর নায়িকা সরস্বতীকে কি ভোলা যায়? সেই নায়িকা যখন নায়কের গানটি শুনিয়ে দেন ‘চরণ ধরিতে দিওগো আমারে’, তখন পর্দার শিল্পীরাই নন, আসনে উপবিষ্ট দর্শকেরাও কেঁদে আকুল হন। ‘দৌড়’ ছবিতে প্রতিবন্ধী নায়িকার চরিত্রে মহুয়ার অভিনয় এক কথায় অভূতপূর্ব। ‘বেহুলা লক্ষীন্দর’ ছবিতে বেহুলা চরিত্রে তিনি এক অন্য মহুয়া। পুরাণের নায়িকা তখন তিনি। ‘পারাবত প্রিয়া’ ছবিতে ত্যাগে উজ্জ্বল মহুয়া এক নার্সের চরিত্রে। ‘অভিমান’ ছবিতে অভিমানী মহুয়া দর্শকদের আকৃষ্ট করেন বটে।
বিখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে
কলকাতার প্রায় সব বড় পরিচালকের হাতে কাজ করেছেন মহুয়া। সে-তালিকায় তরুণ মজুমদার (শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, দাদার কীর্তি) তো আছেনই, এছাড়া রয়েছেন তপন সিংহ (রাজা), অগ্রদূত (সূর্যসাক্ষী), অগ্রগামী (যে যেখানে দাঁড়িয়ে), অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (অজস্র ধন্যবাদ, প্রায়শ্চিত্ত, কেনারাম বেচারাম), পিনাকী মুখোপাধ্যায় (প্রতিশ্রুতি, কপালকুণ্ডলা), সলিল দত্ত (বাবুমশাই, রাজেশ্বরী, সেই চোখ), পীযূষ বসু (বাঘবন্দী খেলা),