এক্স ইকুয়্যালস টু প্রেম খুব শোনা লাগছে না নামটা? ঠিকই ধরেছেন ‘এক্স=প্রেম’-এর (X=Prem) রসায়ন ভাবলেই সংগীত শিল্পী শিলাজিৎ-এর অ্যালবামের কথা মনে পড়ে যায়। প্রেমের এক নতুন রসায়নকে একই নামে থ্রিলার রহস্যের মাধ্যমে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় অবশ্যই সংগীত শিল্পীর অনুমতি সাপেক্ষে। ছবিটির প্রযোজনা করেছে এসভিএফ প্রোডাকশন। ‘এক্স=প্রেম’ (X=Prem) আদ্যোপান্ত একটি প্রেমের গল্প। গোটা ছবিটি সাদা-কালোয় তৈরি। কলেজ জীবনের কিছু বলা-কথা, চোখে চোখে হারিয়ে যাওয়া প্রেমের স্বপ্নিল দেশে আবার কিছু অব্যক্ত প্রেমের নিশ্চুপ রোম্যান্টিসিজম সঙ্গে রহস্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। কিন্তু প্রেম তো রঙিন হয় তবে ছবিটা সাদা-কালো কেন! আসলে সাদা-কালোর মাধ্যমে সেই রহস্যময়তাকে আরও মূর্ত করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। হোক সাদা-কালো প্রেম তো প্রেমই। যদিও সৃজিতের প্রেমকাহিনিতে প্রেম ছাড়াও রয়েছে অন্য টুইস্ট। এটাই তাঁর ছবির ম্যাজিক। আমেরিকান ছবি ‘এটারনাল সানশাইন অফ দ্য স্পটলেস মাইন্ড’-এর খানিক ছায়া রয়েছে ছবির গল্পে। কেট উইনস্লেট এবং জিম কেরি অভিনীত ওই রোম্যান্টিক সায়েন্স ফিকশন ছবিতে মেমোরি ডিলিট করা যেত আর ‘এক্স=প্রেম’-এ মেমোরি ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়। ছবির গল্প শুরু থেকেই বেশ ধরে রাখবে দর্শকদের। ধীরে ধীরে একটা থ্রিলারের আমেজ জাঁকিয়ে বসবে দর্শকমনে।
গল্পের শুরু থেকে শেষ খিলাত আর জয়ী। আইটিতে কর্মরত খিলাত ব্যানার্জি আর বান্ধবী জয়িতা চৌধুরি বা জয়ীর প্যাশনেট প্রেমের সঙ্গে রহস্যের মোড়ক। খিলাত চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত যাঁর ডেবিউ ফিল্ম হল ‘এক্স=প্রেম’ (X=Prem)। অনিন্দ্যর বিপরীতে রয়েছেন শ্রুতি দাস। তাঁর অভিনয় ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত। এ-ছাড়া রয়েছে অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রী মধুরিমা বসাক। ছবিতে তাঁদের চরিত্র দুটির নাম অর্ণব দত্ত এবং অদিতি দত্ত। মধুরিমারও এটি প্রথম ছবি।
প্রায় দশ-বারো বছর ধরে টেলিভিশন এবং রেডিওতে সঞ্চালনা করে বেশ পরিচিত মুখ অভিনেতা অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। কীভাবে ডাক পেলেন সেই কথা প্রসঙ্গে অনিন্দ্য জানালেন, ‘টিভি এবং রেডিওতে সঞ্চালনার সুবাদে বেশ কয়েকবার সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তারপর একটি ইউটিউব চ্যানেলের হয়ে একটা স্লো ইন্টারভিউ সিরিজে সৃজিতদার ইন্টারভিউ নিই, সেই ইন্টারভিউতে এসে উনি বেশ ইমপ্রেসড হন। এরপর ২০১৯-এ চন্দ্রিল ভট্টাচার্যর ‘প্রায় কাফকা’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করি। তারপর অতিমারি শুরু হয়ে যায়। সব বন্ধ ফলে সেই পর্বে আর কোনও কাজ এগোয়নি। আনলক হওয়ার কয়েকদিন পরেই সৃজিতদা একদিন হঠাৎ আমাকে ডাকেন। তাঁর ছবি ‘অতি উত্তম’-এর জন্য নির্বাচন করেন আমাকে। ‘অতি উত্তম’-এর শুটিং শেষ করে যখন ডাবিং চলছে তখন একদিন সৃজিতদা আমাকে তাঁর ‘এক্স= প্রেম’ ছবির খিলাত চরিত্রটির জন্য অডিশন দিতে বলেন। তার একমাসের মধ্যে আমি চরিত্রটির জন্য নির্বাচিত হই। ২০২১-এর জুলাই মাসে শুটিং শুরু হয় এবং এই বছরে শুরুর দিকে কিছু দৃশ্যের শুটিং বাকি ছিল সেটা শেষ করার পর এটাই আগে রিলিজ করল। ‘অতি উত্তম’ রিলিজ হবে সম্ভবত পুজোর আগে।
ছবির নাম এবং গল্প নিয়ে অনিন্দ্য বললেন, ‘‘প্রথমে এই ছবির নাম দেওয়া হয়েছিল দেজাভু। কিন্তু পরে তা বদল করা হয় বাঙালি দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতার কথা ভেবে। আসলে প্রতিটা জিনিসের একটা এক্স ফ্যাক্টর থাকে তাই এটা ‘এক্স=প্রেম’ (X=Prem)। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া প্রাক্তন প্রেমকে খুঁজে নেওয়ার গল্পও। দুজোড়া নারী-পুরুষ রয়েছে এখানে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে খিলাত আর জয়ী। কলেজজীবন থেকে যাঁদের গভীর প্রেমের শুরু এবং পরবর্তীতে তাঁরা একে অপরের জন্য বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ। কিন্তু হঠাৎ হওয়া একটি দুর্ঘটনা সব ওলটপালট করে দেয়। দুর্ঘটনায় জয়ীর কিছু না হলেও বিগত দশবছরের স্মৃতি বিলোপ হয়ে যায় খিলাতের মন থেকে। ছবিতে খিলাতের বয়স ২৮, সব ভুলে সে পিছিয়ে চলে যায় তাঁর ১৮ বছরে বয়সে। অর্থাৎ কলেজজীবন এবং প্রেমিকা জয়ী তাঁর স্মৃতি থেকে মুছে যায় সম্পূর্ণ। এরপর খিলাতের মেমরি ট্রান্সপ্লান্ট করে তাঁর পূর্বস্মৃতি এবং প্রাক্তন হয়ে যাওয়া প্রেমিকার জয়ীর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার রহস্যে ঘেরা প্রেম কাহিনি ‘এক্স=প্রেম’।” ছবির বাকি রহস্য জানতে হলে দেখতে হবে ‘এক্স=প্রেম’।
এই ছবির আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে অর্ণব এবং অদিতি। এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রী মধুরিমা বসাক। চারজনের কেমিস্ট্রি ছবিতে বেশ উপভোগ্য।
আরও পড়ুন: উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার ফিরিয়ে আনলেন তৃণমূল বিধায়ক পার্থ
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনিন্দ্য খুব উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘সৃজিতদার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় ছবি। তাই ওঁর কাজের ধরনটা জানি। উনি কী চাইছেন তা নিয়ে খুব পরিষ্কার ছিলেন সবসময়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ করবার চেয়ে বড় এক্সপোজার আর কী হতে পারে। দারুণ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে।”
ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে বেশ সাবলীল অনিন্দ্য। সেই সম্পর্কে বললেন, ‘‘সহ অভিনেতা, পরিচালক সবার প্রচেষ্টায় দৃশ্যগুলো ভালমতোই উতরে গেছে। ক্যামেরার জন্যই সবটা করা। আমরা সহ-অভিনেতারা সমমনস্ক, সমবয়সি বলে কাজটা খুব সুন্দর ভাবে হয়েছে।”
অভিনেত্রী মধুরিমা বসাকেরও এটা প্রথম ছবি। চরিত্রটি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল তাঁর কাছে। ছবিতে বলা তাঁর নিজের সংলাপগুলো বেশ বলিষ্ঠ বলেই নিজের চরিত্রটা এত পছন্দ তাঁর— বললেন মধুরিমা। থার্ড ইয়ারে পড়াকালীন রবি ওঝার প্রডাকশনে হাতেখড়ি তাঁর। তারপর ছোটপর্দায় অভিনয় শুরু। একটি নামী গহনা বিপণির বিজ্ঞাপনে তাঁকে দেখে নিজের ছবির জন্য ভাবেন সৃজিত। এরপরেই ডাক আসে তাঁর। ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে জানালেন, ‘‘এত বড় একজন পরিচালকের ছবি, এত বড় প্রোডাকশন হাউজের মাধ্যমে আমার বড়পর্দায় এন্ট্রি হল এটা ভাগ্যের ব্যাপার। সৃজিতদা খুব গুণী একজন মানুষ তাই কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা সহ-অভিনেতা, অভিনেত্রীরা খুব এনজয় করে কাজটা করেছি।
‘এক্স=প্রেম’-এর (X=Prem) গানগুলো ইতিমধ্যে প্রশংসা পেয়েছে। এই ছবির ছটি গানের সুরকার সপ্তক-সানাই। সুরকার সপ্তক- সানাই সত্যি এক নতুন প্রাপ্তি। বাকি গানের দায়িত্বে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী। গানগুলি গেয়েছেন সৃজিত ও শ্রেয়া ঘোষাল। এ-ছাড়া স্যমন্তক সিংহ, সাহানা বাজপেয়ী, অরিজিৎ সিং প্রমুখ। ছবির একটি গানও লিখেছেন সৃজিত নিজে। দর্শকমন ছুঁয়ে গেছে গানগুলো। বাংলা প্রেমের ছবি হিসেবে বেশ অন্যমাত্রার ছবি যা সময়কে পেরিয়ে যায় অনায়াসে এবং যার ভাবনাও সময়কে অতিক্রম করেছে। এর কৃতিত্ব পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের-সহ গোটা ‘এক্স=প্রেম’ টিমের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।