পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট ‘দাবদাহ’ পত্রিকার বইপার্বণ ২০২৫ সংখ্যায়। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। মনোজ মিত্র স্মরণে সিদ্ধার্থ সিংহ, অরুণকুমার চক্রবর্তী স্মরণে শুভদীপ রায়, ধনঞ্জয় ঘোষাল স্মরণে কানাইলাল জানার গদ্যগুলো মর্মস্পর্শী। নিবেদিত প্রবন্ধে ড. মহুয়া দাশগুপ্তর ‘রবীন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তা’, সুমিতাভ ঘোষালের ‘আমার জীবনানন্দ : অসমৃদ্ধ প্রলাপ’, আবু রাইহানের ‘কবি কামিনী রায় প্রসঙ্গ’ গভীর এবং মননশীল। একান্ত ভাবনায় পাঠকদের ভাবিয়েছেন ড. বাসুদেব মণ্ডল, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, বিতস্তা ঘোষাল, তৃষ্ণা বসাক, তৈমুর খান, পারমিতা ভৌমিক, বেবি সাউ প্রমুখ। গল্প উপহার দিয়েছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, প্রগতি মাইতি, চুমকি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ছন্দকথায় রতনতনু ঘাটি, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, হাননান আহসান অনবদ্য। কবিতা সরণিতে আছেন বিভিন্ন প্রজন্মের কবিরা। স্থান পেয়েছে বিদেশি কবিতাও। সেইসঙ্গে আছে শব্দপরিক্রমা, সুরসফর, আপ্তকথা, মুক্তগদ্য, সিনেমাস্কোপ, ভ্রমণ, সাক্ষাৎকার প্রভৃতি বিভাগ। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখার মতো।
আরও পড়ুন-চরম অসভ্যতা পাক কূটনীতিকের ভারতীয়দের গলা কাটার ইঙ্গিত
এই সময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকা ‘সহমত’। প্রকাশিত হয় সুবিদ আবুদাল্লহ্-র সম্পাদনায়। জানুয়ারি-জুন সংখ্যাটিতে স্থান পেয়েছে নানা বিষয়ের লেখা। পুনর্পাঠে রয়েছে অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘হিন্দু-মুসলমান’। বর্তমান সময়ে এইরকম লেখার কাছে বারবার ফিরে ফিরে আসতে হয়। প্রবন্ধ বিভাগটি আকর্ষণীয়। লিখেছেন কাজী মুজিবুর রহমান, জোবায়ের মিলন, সুব্রতা ঘোষ রায়, মুন্সি আবুল কাশেম, ফারুক আবদুল্লাহ, তাজিমুর রহমান প্রমুখ। বিষয় এবং ভাবনা রীতিমতো চমকে দেয়। ইতিহাসচর্চায় বর্ধমান জেলার ঐতিহ্য ও প্রাচীনতার নিদর্শন বিষয়ে লিখেছেন অদিতি চট্টোপাধ্যায়। লোকাচারে উত্তরবঙ্গের প্রচলিত রাভা সাহিত্য নিয়ে প্রমোদ নাথ ও শেরশাবাদী সম্প্রদায় নিয়ে মহঃ ইব্রাহিমের রচনা দুটি প্রশংসার দাবি রাখে। মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস, শাহীন রায়হান, দেবাশিস ভট্টাচার্য, সৌমিত বসু, ফিরোজ হক, মিহির দে প্রমুখের কবিতা জাগায়, ভাবায়। আছে আরও কিছু বিভাগ। সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখার মতো।
আরও পড়ুন-বিস্ফোরণে উড়ে গেল সেনাট্রাক, বালুচ বিদ্রোহীদের হামলায় খতম ১০ পাকসেনা
‘মৈত্রীদূত’ পত্রিকা প্রকাশিত হয় কল্যাণী থেকে। কুশল মৈত্রর সম্পাদনায়। জানুয়ারি ২০২৫ সংখ্যাটি গদ্যে পদ্যে ঠাসা। প্রবন্ধে বাঁধন সেনগুপ্তর ‘নজরুল-সখা কালীপদ গুহা রায়’, নীলিমা চক্রবর্তী কাঞ্জিলালের ‘শতবর্ষের আলোয় বাদল সরকার’ পড়ে মুগ্ধ হতে হয়। নিবন্ধে ‘নদিয়ার বিদ্যাচর্চা’ ঝরঝরে ভাষায় লেখা এক জ্ঞানগর্ভ রচনা। মুক্তগদ্যে দীপক সাহার ‘জীবন মৃত্যুর সলিল সমাধি’, ঈশানী রায়চৌধুরীর ‘ঝড়’, কল্যাণী সেনগুপ্তার ‘আমায় থাকতে দে’, আশালতা মাইতির ‘দৃষ্টি’ মন ছুঁয়ে যায়। মনে রাখার মতো কবিতা উপহার দিয়েছেন কালীকৃষ্ণ গুহ, শ্যামলকান্তি দাশ, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত সরকার, বীথি চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাদাস মিদ্যা, অমলেন্দু বিশ্বাস, অমিত কাশ্যপ, তাজিমুর রহমান, তাপস ওঝা, ফটিক চৌধুরী, গোলাম রসুল, সুস্মেলী দত্ত, জুলি লাহিড়ী, উদয়শঙ্কর বাগ প্রমুখ। কিছু কবিতা বেশ দুর্বল। নির্বাচনের সময় সম্পাদককে আরেকটু সচেতন হতে হবে। তবে আয়োজন যে আন্তরিক, এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
চুঁচুড়া থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘শতানীক’ পত্রিকার নববর্ষ সংখ্যা। নিত্যরঞ্জন দেবনাথের সম্পাদনায়। নানান বিষয়ের লেখায় সমৃদ্ধ। প্রবন্ধে অতনুকুমার বসুর ‘বেদনার আনন্দ : অন্তর্মুখী রবীন্দ্রনাথ’, উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতে পদার্পণের ১২৫ বছর পূর্তিতে নিবেদিতা অনুধ্যান’, জগন্ময় সেনগুপ্তর ‘কৃত্তিবাস পত্রিকা ও সামরিকরা’ যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য লেখা। বিশেষ রচনায় অমর মিত্র-র ‘আমার তিনটি উপন্যাস নিয়ে’, সূর্য মুখোপাধ্যায়ের ‘পরিতোষের অফিস বেলা’, সুজিত রেজের ‘মারে কে যদি হরি রাখে’ পড়তে ভাল লাগে। আনসারউদ্দিনের সঙ্গে মানস সরকারের কথোপকথনটি অজানাকে জানাতে সাহায্য করে। তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নলিনী বেরা, বীরেন শাসমলের বড়গল্প, গৌর বৈরাগী, বিমল লামা, সুকুমার রুজ, আইভি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখর ছোটগল্প এবং নবারুণ চক্রবর্তীর ভ্রমণ-রচনা সংখ্যাটিকে আলোকিত করেছে। কবিতা উপহার দিয়েছেন দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় কালীকৃষ্ণ গুহ, শ্যামলকান্তি দাশ, শংকর চক্রবর্তী, সুজিত সরকার, অরণি বসু, গৌতম চৌধুরী, সৈয়দ কওসর জামাল, গৌতম হাজরা, সমরেশ মণ্ডল, পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়, তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অণুগল্পে প্রগতি মাইতি, কালীপদ চক্রবর্তী, অলক্তিকা চক্রবর্তী, দীপক দাস মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। আছে আরও কিছু বিভাগ। সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি সংখ্যা।