নয়াদিল্লি : আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের প্রস্তাব নাকচ করে শীর্ষ আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারচুপি ও জালিয়াতির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের গঠিত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এক ট্যুইট বার্তায় সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-হৃদরোগ সুস্মিতার
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর সম্পদমূল্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে গিয়েছে। শেয়ার বাজারে আদানিদের বিভিন্ন সংস্থার ধারাবাহিক পতন অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত কয়েক দশক ধরে শেয়ার দরে বেলাগাম কারচুপি করেছে তাঁর শিল্পসংস্থা। অভিযোগের জেরে আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। আন্তর্জাতিক স্তরে শিল্পগোষ্ঠীর ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্বের প্রথম সারির শিল্পপতিদের তালিকা থেকে ছিটকে গিয়েছেন গৌতম আদানি। এবার এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভয় মনোহর সাপ্রের নেতৃত্বাধীন কমিটি গড়ল শীর্ষ আদালত। অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ ব্যাঙ্কার ও ইনফোসিস লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে ভি কামাথ, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পি ভাট, ইনফোসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকেনি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে পি দেওধর ও আইনজীবী সোমশেখর সুন্দরেশন।
আরও পড়ুন-বারাণসীর ঘাটের মতোই এবার কলকাতাতেও শুরু হল গঙ্গা আরতি, কদমতলা ঘাটে উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তদন্ত কমিটি গড়ে দেওয়ার রায় শুনিয়ে এদিন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পি এস নরসিমা ও বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালার বেঞ্চ বলেছে, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (সেবি) তাদের চলতি তদন্ত দু’মাসের মধ্যে শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেবিকে দেওয়া নির্দেশে শীর্ষ আদালত বলেছে, কোথাও নীতি ও নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে কি না, কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। বাজারের স্বার্থে সেবি কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা তদন্ত কমিটিকে জানাতে হবে। সাপ্রে কমিটি আদানিদের প্রসঙ্গে বিস্তারিত তদন্ত করবে। বিধিবদ্ধ যে কাঠামো রয়েছে তা কী করে আরও জোরদার করা যায় এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা কীভাবে করা যায়, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। তদন্ত কমিটির সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করতে সেবির চেয়ারম্যানকে সুপ্রিম কোর্ট অনুরোধ করেছে। প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেশ করতে বলা হয়েছে। সব সরকারি সংস্থাকেও তদন্ত কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রয়োজনে ওই কমিটি বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নিতে পারবে।
আরও পড়ুন-মেঘালয়ে জয়ী ৫ তৃণমূল প্রার্থী, টুইটবার্তায় ধন্যবাদজ্ঞাপন অভিষেকের
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তোলা যাবতীয় অভিযোগ ও বাজারব্যবস্থায় অনিয়মের তদন্ত দাবি করা হয়েছিল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি ছিল, হয় যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত হোক, নয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিটি গঠিত হোক। প্রথম থেকেই সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চেয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আদানি ইস্যুতে সংসদে বিরোধীদের কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সেই মামলার শুনানির সময় শীর্ষ আদালতকে প্রস্তাব দিয়েছিল, মুখবন্ধ খামে কমিটির জন্য সরকার বিশেষজ্ঞদের নাম জমা দেবে। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নেবেন। তদন্তের বিষয়বস্তুও সরকার ঠিক করে দিতে চেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেসব অস্বীকার করে। প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, তাঁরা স্বচ্ছতা চান। সরকারের প্রস্তাব মানলে সেই স্বচ্ছতা থাকবে না।