প্রতিবেদন : তৃণমূলের প্রশ্নের উত্তর নেই তাই লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন বিজেপির মন্ত্রীরা। সে দিল্লিতে হোক বেগুসরাইতে হোক কিংবা কলকাতায় সেই ট্রাডিশন চলেছেই। শনিবারও কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী নিজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা বললেন তাকে বিশুদ্ধ মিথ্যাচারই বলে, শনিবার সন্ধায় ধরনামঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিজেপিকে তুলোধনা করে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, শুনছি ওরা নাকি পরে ধরনা দেবে এখানে! পরে কেন এখনি আসুন। হিম্মত থাকলে কোন মঞ্চে যেতে হবে বলুক। আমি যাব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে, ওরা আমার মুখোমুখি হোক।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
শনিবারই রাজ্যপালের সম্মান রক্ষার্থে দার্জিলিং গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের তিন প্রতিনিধি। দ্রুত কলকাতায় ফিরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মূল ডেলিগেশন টিমের সঙ্গে বৈঠকে বসুন— এই দাবি জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাজভবন ধরনার তৃতীয় দিন পার হল। এদিন ধরনামঞ্চে এসেছিলেন অন্য রাজনৈতিক দলের কয়েকজন প্রতিনিধি।
লাগাতার আন্দোলন : রাজ্যপাল বোস দ্রুত কলকাতায় ফিরুন। যতদিন না পর্যন্ত রাজ্যপাল বোস আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন ও লিখিত ব্যাখ্যা না পাচ্ছি আমাদের ধরনা চলবে। আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়বে। গ্রামে গ্রামে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। অভিষেক বলেন, কর্মসূচি না থাকলেও পাহাড়ে বসে আছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মিস্টার ইন্ডিয়া বলেও তোপ দাগেন।
*দু’বছর ধরে টাকা বন্ধ রেখেছেন, এফআইআর করেননি কেন? দুর্নীতি থাকলে প্রকাশ্যে আনুন
*গ্রামে গ্রামে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে
*লিখিত ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
*মঞ্চে প্রতিবাদে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও
*কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মিস্টার ইন্ডিয়া। কর্মসূচি না থাকলেও পাহাড়ে বসে রাজ্যপাল
বাংলার দাবি ন্যায্য : রাজ্যপালের সম্মান রক্ষার্থে শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল দার্জিলিংয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক করেন। পরে প্রদীপ মজুমদার বলেন, আমাদের দাবি ন্যায্য একথা রাজ্যপাল মেনে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এ-বিষয়ে কথা বলবেন। তবে এর মাঝে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এলে তাঁর কিছু করার নেই। একইসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে জানিয়েছেন, দ্রুত তিনি কলকাতায় ফিরে মূল ডেলিগেশন টিমের সঙ্গে দেখা করবেন। দার্জিলিং থেকেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে সবটা জানিয়েছেন।
ঠেলায় পড়ে বাংলায় : কথা বলতে চাইলে কলকাতায় সরকারি ভবনে বসুন। অথবা রাজভবনের সামনে আসুন। বিজেপি পার্টি অফিসে কথা বলতে যাবে না তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, উনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও বিজেপি পার্টি অফিসে বসে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তিনি সরকারি জায়গায় বসুন আমরা যাব। আমাদের কোনও ইগো নেই। কিন্তু বিজেপির এই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধেই আমাদের এই লড়াই। সাফ কথা অভিষেকের।
দুর্নীতি থাকলে এফআইআর কই : গত দুবছর ধরে কেন্দ্র ১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। এখন বলছে দুর্নীতি হয়েছে। যদি তাই হবে, তবে একটাও এফআইআর করেননি কেন? দুর্নীতির কাগজ কোথায়? প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। ২১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষ টাকা পাননি। টাকা ঘেরাবোই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিবিআই-এর কথা বলছেন। করুন সিবিআই, তবে তিন মাসের মধ্যে টাকা দিতে হবে। অভিষেকের তোপ, যার মাথায় সিবিআই কেস ঝুলছে সেই সিবিআই তদন্তের কথা বলছে। সিবিআইএর বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় গিয়েছে! শুধু মজুরির ৩৮০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। মনরেগায় সব মিলিয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
সুকান্তকে ফোন করুন : বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও একহাত নিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, তিনি মিডিয়ার সামনে বলেছেন তাঁর এক ফোনে বাংলায় টাকা চলে আসবে। এরপরই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন সুকান্ত মজুমদারের ফোন নম্বর সকলকে জানিয়ে দিতে। যেখানে ফোন করে মার্জিত ভাষায় ২০ লক্ষ মানুষ বলবেন, আপনি অসীম ক্ষমতাধর, দয়া করে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে আমাদের বকেয়া টাকা ফেরান।
অভিষেকের এই নির্দেশের পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সুকান্তর দু’টি ফোন নম্বর সকলকে জানিয়ে দেন (১) ৮৭৬৮৩-৩৩৯৮৩, (২) ৯৪৩৪৯-৬৪১২৫। মঞ্চেই সুকান্তর বলা সেই মিডিয়া বাইট সকলকেই শোনান অভিষেক। যেখানে তিনি বলছেন আমার এক ফোনেই সব টাকা চলে আসবে। একই সঙ্গে অভিষেকের নির্দেশ, বিজেপি সভাপতিকে ফোন করে তাঁর উত্তর রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিতে হবে। যাতে রাজ্যের মানুষ জানতে পারে তাদের আসল চেহারাটা। অভিষেকের সংযোজন, গদ্দার অধিকারী বলছে, টাকা বন্ধ করব। আর সুকান্ত বলছে এক ফোনে টাকা আনব।
কাকলি-শশীর তোপ : এদের পাশে বসিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করছেন! এদিন কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর মিথ্যা ভাষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা। দু’জনেই এই সাংবাদিক বৈঠকের কড়া সমালোচনা করে পাল্টা বলেন, দিল্লিতে নিজের দফতরে যিনি দেখা করেননি, তিনি আজ ঠেলায় পড়ে কলকাতায় এসেছেন ব্যাখ্যা দিতে। এটা আমাদের নৈতিক জয়।