দেশজোড়া উপনির্বাচনে মোদি-শাহকে কড়া বার্তা দিল জনতা

Must read

প্রতিবেদন : আগামী বছরের শুরুতেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে কী ফলাফল হতে পারে তার আগাম ইঙ্গিত মিলল মঙ্গলবার দেশজোড়া একাধিক উপনির্বাচনে। ৩০ অক্টোবর ১৩টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে উপনির্বাচন হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২৯টি বিধানসভা ও তিনটি লোকসভা আসনে ভোট হয়। একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপনির্বাচনের ফলাফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট, বিরোধীরা বিজেপিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যাশামতোই পশ্চিমবঙ্গের চার বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে বিজেপিকে হোয়াইটওয়াশ করে দিয়েছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার যে চার কেন্দ্রে ভোট হয়েছে তার মধ্যে খড়দহ, দিনহাটা এবং গোসাবা কেন্দ্রে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। একমাত্র শান্তিপুরে কোনওরকমে নিজের জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন বিজেপি প্রার্থী। একই হাল বিজেপি শাসিত হিমাচলপ্রদেশেও। এই রাজ্যে একটি লোকসভা আসন এবং তিনটি বিধানসভা আসনেই ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলির একমাত্র লোকসভা আসনটি বিজেপি তার এক সময়ের শরিক শিবসেনার কাছে খুইয়ে বসেছে। এই প্রথম শিবসেনা মহারাষ্ট্রের বাইরে কোনও লোকসভা আসনে জয় পেল।
রাজস্থানেও বিজেপির চরম কোণঠাসা অবস্থা। রাজ্যের বল্লভনগর বিধানসভা আসনটি কংগ্রেস ধরে রেখেছে এবং অন্যদিকে বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ধারিওয়াড় কেন্দ্রটি। এই দুই আসনেই বিজেপি শুধু হারেনি, একেবারে চতুর্থ স্থানে গিয়ে পৌঁছেছে! রাজস্থানের পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় এলেনাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এই আসনে আইএনএলডি প্রার্থী অভয় চৌতালা বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন। কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালার ছেলে অভয়। মহারাষ্ট্রেও ডেলগুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরাজয়ের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন। কর্নাটকে হাঙ্গল বিধানসভা আসনটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। তবে এই রাজ্যে কংগ্রেসের হাত থেকে সিন্দোগি আসনটি ছিনিয়ে নিতে পেরেছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে খাণ্ডোয়া লোকসভা কেন্দ্রটি কোন রকমে নিজেদের দখলে রেখেছে বিজেপি। পাশাপাশি এই রাজ্যে তিন বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি কংগ্রেসের কাছে একটি খুইয়েছে। অন্ধপ্রদেশের একটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করে জয়ী হয়েছে শাসক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রার্থী।
অন্যদিকে মিজোরাম, মেঘালয়ের মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিই ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এই রাজ্যগুলিতে আদৌ বিজেপি দাগ কাটতে পারেনি। বিহারের দু’টি আসনের একটি জেডিইউ পেলেও অন্যটি দখল করেছে আরজেডি। বিজেপির পক্ষে একমাত্র মুখরক্ষা হয়েছে অসমে।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই উপনির্বাচনী ফলাফল বিজেপির জন্য এক অশনিসঙ্কেত। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা যে প্রবল দম্ভে ভুগছেন, যেভাবে একের পর এক চরম জনবিরোধী নীতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, তার বিরুদ্ধেই দেশ জোড়া উপনির্বাচনে মানুষ রায় দিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলতে মোদি সরকার প্রতিদিনই বাড়িয়ে চলেছে পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম। ভোজ্যতেল, চিনি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, আটা সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। এ-সবেরই প্রতিফলন ঘটেছে উপনির্বাচনের ফলাফলে। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনবিরোধী মোদি সরকারকে ছুঁড়ে ফেলতে এই উপনির্বাচনের মাধ্যমেই প্রস্তুতি শুরু করল জনতা-জনার্দন।

Latest article