প্রতিবেদন : বিচারপতির হয়ে কথা বলবে আদালতে দেওয়া তাঁর রায়। কর্মরত বিচারপতি হিসেবে তাঁর দেওয়া রায় অথবা তাঁর অধীনে বিচারাধীন মামলা নিয়ে আলাদা করে মিডিয়ায় কেন মুখ খুলবেন তিনি! সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাম্প্রতিককালে তাঁর অধীনে থাকা বিচারাধীন মামলা ও সেই সংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়া রায়ের ব্যাখ্যা দেন। রায় দিতে গিয়ে কোন বিষয়গুলি তিনি মাথায় রেখেছিলেন তা নিয়েও কথা বলেন। এ বঙ্গে তো বটেই, গোটা দেশেই যা নজিরবিহীন। এই সাক্ষাৎকারের পরই তোলপাড় শুরু হয়েছে সব মহলে।
আরও পড়ুন-কাল খুলছে টালা ব্রিজ
প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি ও আইনজীবী মহল। একজন বিচারপতি ব্যাঙ্গালোর প্রোটোকলকে সামনে রেখে যেভাবে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে তাঁর কথা বলেছেন, তা কি তিনি করতে পারেন? এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিচারপতি হিসেবে রীতি রেওয়াজ ও আদালতের সম্মান। জাগোবাংলা পত্রিকার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য নেই। আমরা শুধু প্রাক্তন বিচারপতি ও আইনজীবী মহল কী বলছেন এখানে তা তুলে ধরলাম। বাকি বিচারের ভার পাঠকের।
আরও পড়ুন-আলিপুর মিউজিয়ামের উদ্বোধনে আজ মুখ্যমন্ত্রী
শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন বিচারপতি)
একজন বিচারপতি তাঁর রায়ের মাধ্যমেই যা বলার বলবেন। আদালতে তিনি যা বলছেন, যা রায় দিচ্ছেন তা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে মতামত দেওয়া উচিত নয়। কর্মরত বিচারপতি হিসেবে মিডিয়া আমাকে ইন্টারভিউ দিতে ডাকলে অথবা আমার কাছে এলে আমি কখনওই রাজি হতাম না। হওয়া উচিতও নয়। ব্যাঙ্গালোর প্রোটোকল কোনও আইন নয়। এটি একটি ইন্টারন্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এই ঘটনার পরে যদি কেউ বলেন, সংশ্লিষ্ট ওই বিচারপতির কাছে মামলা গেলে সমস্যা হতে পারে, কারণ তিনি প্রি জাজ করছেন যে কোনও বিষয়ে, তাহলে সেটা বিড়ম্বনার হতে পারে। একটি বিষয়ে মামলা শুনে সে সংক্রান্ত রায় দিয়ে সেটা মিডিয়ায় বলে দিলাম, আলোচনা করলাম, এটা হতে পারে না। এথিক্যালি তো নয়ই। যদিও আমি কারও অভিভাবক নই। কে কী করবেন, বলবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু কর্মরত বিচারপতি হিসেবে এ জিনিস আমি অন্তত করতাম না।
আরও পড়ুন-দক্ষিণেও কাজু
প্রণব চট্টোপাধ্যায় (প্রাক্তন বিচারপতি)
কর্মরত বিচারপতি হিসেবে কখনও ভাবতেই পারিনি আমি মিডিয়ায় যাব, কোনও মামলা নিয়ে কথা বলব, মতামত দেব, আলোচনা করব। যা বলার আমার জাজমেন্টেই থাকবে।
অরুণাভ ঘোষ (বিশিষ্ট আইনজীবী)
প্রথমত, এভাবে ইন্টারভিউ দিতে পারেন না কোনও বিচারপতি। উনি ব্যাঙ্গালোর প্রোটোকল বলে যা বলছেন সেটা ভেঙেছেন। দুম করে এভাবে কোথাও বলা যায় না, মুখ খোলা যায় না। একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই বিচারপতির বিষয়ের উপর গভীরতা নেই। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজেকে সৎ বলে উনি যে ইমেজ দেখাতে চাইছেন ততটা উনি নন। যদি তাই হয় তাহলে একটা ওপেন ফোরামে আলোচনা হোক না। দেখি কে কত বড় সৎ। আসলে ওঁর কোনও বিষয়ে স্থিরতা নেই। উনি এর আগে এসএসসির আইনজীবী ছিলেন। বাম আমলের দুর্নীতি ঢাকতে, এসব বলে বেড়াচ্ছেন। কলকাতা হাইকোর্টে ৫৩ জন বিচারপতি আছেন। তাঁরা সবাই অসৎ আর উনি সৎ? এটা হয় নাকি! উনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি কথা বলে বললেন, ওঁকে রুল করে ডেকে এনে তিন মাসের জন্য জেলে পাঠাতে পারতাম। এটা সঠিক নয়। সে ক্ষমতা ওঁর নেই। আইন অনুযায়ী উনি শোকজ করতে পারেন। কিন্তু মামলা শুনবে ডিভিশন বেঞ্চ। উনি একবার বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল, আবার বলছেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। বোঝাই যাচ্ছে কখন কী বলছেন নিজেরই ঠিক নেই। যুক্তি দিয়ে বিচারপতি ও বিচার ব্যবস্থাকে ক্রিটিসাইজ করা যায়। তাতে কোনও সমস্যা নেই। আইনগত বাধা নেই।
আরও পড়ুন-
আইনজীবী মহল
যে কেউ বিচার বিভাগের গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন, সেটা আদালত অবমাননা হয় না। দুম করে বলে দিলাম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে পাঠাব, মামলা করব, এটা এভাবে হয় না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন আছে। এটা কোশ্চেন অফ প্রপ্রাইটি। বিচারপতি যে মামলার শুনানি করছেন সেটা পাবলিকলি বলতে পারেন না। বাকস্বাধীনতা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু তারও একটা সীমারেখা থাকা উচিত। বিচারপতি বলে সেই সীমারেখা মানব না, এটা হয় না।