ছোট বয়স থেকেই লেখার ক্ষমতাকে ঘষামাজা করতে পারলে পরবর্তীকালে লেখার দক্ষতাকেই কাজে লাগিয়ে পেশায় অনেক উন্নতি করা যায়। পত্র- ম্যাগাজিন, বুক পাবলিশিং হাউস এবং সাম্প্রতিককালে ওয়েবসাইটের হাত ধরে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এক বিরাট পেশার জগৎ তৈরি করেছে।
ক্রিয়েটিভ রাইটিং কী ?
লেখার প্রতি ভালবাসা থাকলে এবং ভাষাশিক্ষার প্রতি আকর্ষণ থাকলে সবথেকে উপযুক্ত পেশার জগৎ হল ক্রিয়েটিভ রাইটিং। কল্পনা শক্তি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর, প্রভাবশালী লেখা গড়ে তোলা যায়। ভাল লেখার জন্য ভাল পড়ারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভাল লেখার ক্ষমতা করায়ত্ত করাটা খুব একটা সহজ কাজও নয়। ভাল পড়াশুনার পাশাপাশি অনবরত লেখার অভ্যাস করা থাকলে নিজেকে দক্ষ ক্রিয়েটিভ রাইটার হিসাবে গড়ে তোলা সহজ হবে। উপন্যাস, প্রবন্ধ বা গল্পের মতো শুধুমাত্র সাহিত্যজগৎই নয়, সংবাদমাধ্যম বা ওয়েব দুনিয়ার ক্ষেত্রেও বর্তমানে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের মতো পেশা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনমত গঠন করার ক্ষেত্রে বা সমাজের উপর নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বা মতবাদের প্রভাব তৈরি করার জন্য সৃজনশীল লেখার ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন মাধ্যমে।
কী ধরনের যোগ্যতা লাগে ?
ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। নিজের লেখার ক্ষমতা, অভ্যাস এবং প্রতিভার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। তবে অবশ্যই ভাষা এবং বাক্যগঠন, শব্দভাণ্ডার তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার যথেষ্ট ভূমিকাও রয়েছে। যে ভাষা বা ভাষাগুলি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে, প্রথমত সেই ভাষাগুলি যথেষ্টভাবে রপ্ত করার জন্য পড়াশুনা করা দরকার। উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল মানের পরীক্ষা পাশ করার পর নির্দিষ্ট ভাষা নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনা করা যায়। বাংলা, ইংলিশ, হিন্দি যে কোনও ভাষায় বিএ বা এমএ যোগ্যতা নিয়ে এই পেশায় আবেদন করা যেতে পারে। তবে এর বাইরে সবথেকে বেশি প্রয়োজন নিজের সৃজনশীল ক্ষমতা এবং কল্পনাশক্তি। কোনও বিষয়বস্তু সমন্ধে বিশদভাবে পড়া ও বোঝার পর সেই সমন্ধে পরিমিত ভাষায় এবং সুস্পষ্ট ভাষা লেখার ক্ষমতা দীর্ঘদিন অভ্যাসের দ্বারা গড়ে তোলার প্রয়োজন। একটি বিষয়কে বোধগম্য করার জন্য সহজভাবে পরিবেশন করা বা কিছু তথ্য এবং বিবরণের সাহায্যে একটি উচ্চমানের প্রভাবশালী লেখা তৈরি করাটা নিরলস অভ্যাসের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
কীরকম কোর্স রয়েছে ?
ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে ডিপ্লোমা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট বিভিন্ন ধরনের কোর্স করা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে ডিপ্লোমা বা পিজি ডিপ্লোমা কোর্স হয়, যেগুলি উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতক যোগ্যতার পর করা যেতে পারে। এ-ছাড়াও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ কোর্সের মধ্যে অপশনাল সাবজেক্ট হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে।
কোর্স কোথায় করবে?
ইন্দিরাগান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাইটিং বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। দূরশিক্ষায় এখান থেকে হিন্দি এবং ইংলিশ বিষয়ের ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে ডিপ্লোমা বা পিজি ডিপ্লোমা করা যেতে পারে। দিল্লির জরহলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ এমএ কোর্সের মধ্যে ক্রিয়েটিভ রাইটিং একটি বিশেষ পেপার হিসাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ভাষা নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনার পরেই এই পেশার যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেশি।
কাজ কীরকম হয় ?
এই বিষয় নিয়ে পড়ার পর সংবাদমাধ্যমগুলিতে কপি এডিটর, সাব এডিটর, কলাম রাইটার বিভিন্ন ধরনের লেখার সঙ্গে যুক্ত থাকা যেতে পারে। এর বাইরেও স্ক্রিপ্ট রাইটার, জার্নাল রাইটিংয়ের মতো কাজ করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে ওয়েব দুনিয়া এক বিশাল কাজের জগৎ তৈরি হয়েছে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের হাত ধরে। বিভিন্ন বিষয়বস্তু, বিবরণ বা বিশ্লেষণাত্মক লেখা সংবলিত ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যেগুলিতে লেখার জন্য নতুন কর্মজগৎ তৈরি হয়েছে। এই কাজের ক্ষেত্রকে কনটেন্ট রাইটিং (Content Writting) নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এর বাইরেও লেখার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কনটেন্ট ডেভেলপার, লিগাসি রাইটার, ট্র্যাভেল রাইটার, বুক ট্রান্সলেটার, স্ক্রিন রাইটার— এই সমস্ত পদে কাজ করার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। লেখার অনেকরকম ধরন হয়— উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ থেকে শুরু করে সংবাদ, ফিচার, ডায়লগ প্রভৃতি। নিজের লেখার ধরন, দক্ষতা এবং পছন্দের ভিত্তিতে পেশাকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
পেশায় চাহিদা কেমন ?
বলা হয়— লেখা জানা থাকলে কাজের জায়গার অভাব হয় না। লেখা জানা মানেই যে সাহিত্যিক বা কবি হতে হবে, সে ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে। ভাল লেখার ক্ষমতা থাকলে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে কনটেন্ট রাইটিং এজেন্সি— যে কোনও ক্ষেত্রেই জায়গা করে নেওয়া যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের লেখা সম্পর্কিত কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে। আরেকটি বিশাল পেশার জায়গা গড়ে উঠেছে ওয়েবসাইটগুলির কনটেন্ট রাইটিংয়ের উপর ভিত্তি করে। বিভিন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কিত বা তথ্য সংবলিত লেখা বা কাজ সম্পর্কিত বিবরণ যা-ই হোক না কেন, কনটেন্ট রাইটিং প্রয়োজন। এমনকী বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলিতেও কনটেন্ট রাইটার (Content Writting) যথেষ্ট চাহিদা তৈরি হয়েছে। অন্য কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে ফ্রিলান্সার হিসাবেও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায়। কলকাতার বাইরেও বেঙ্গালুরু, মুম্বই, দিল্লির মতো শহরগুলিতে এই ধরনের পেশার চাহিদা রয়েছে প্রচুর।