হঠাৎ ডাকা হল সংসদের বিশেষ অধিবেশন। ৫ দিনের জন্য। ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর। দিন ঘোষণার সময় পরিষদীয় মন্ত্রীও বলতে পারলেন না কী কারণে এই বিশেষ অধিবেশন। প্রশ্নের মুখে আমতা আমতা করতে শুরু করলেন। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মিটিং হচ্ছে মুম্বইতে। ২৮ দল সেখানে উপস্থিত। প্রচারটাকে ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন। পারেননি। কিন্তু কেন এই অধিবেশন? জে পি নাড্ডা, বিজেপি’র সভাপতিকে দেখা গেল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বাড়ি গিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ইরাক ম্যাচে আজ পরীক্ষা ভারতের
শ্রী কোবিন্দকে সভাপতি করে একটি কমিটি ঘোষণা করা হল যাঁরা ‘সারা একদেশ, এক নির্বাচনের’ ব্যাপারটি দেখবেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে আইন কমিশনকে বলা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট আসারও তর সইছে না বিজেপির। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে প্রায় রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে দিলেন। আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরা অবসর জীবনই কাটিয়েছেন। সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন। রাজনীতি তো দূরঅস্ত্ বিতর্কিত কোনও বিষয়েই তাঁরা থাকেননি। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ছে। যিনি অধ্যক্ষের পদ থেকে বহুজনের প্ররোচনা ও আবদারেও আদালতে ফিরে যাননি। বলেছেন ‘গাউন তুলে রেখেছি’। বিজেপির কাছে এসব আশা করা বৃথা।
আরও পড়ুন-আজ এএফসি’র প্রস্তুতি শুরু
এখন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যাচ্ছে এই কমিটির কার্যধারা কী হবে। সংবিধানের ধারা উপধারার মাধ্যমে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচন একসঙ্গে করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য বলা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সম্পর্কে সংবিধানের নির্দেশ পর্যাপ্ত কিনা তা দেখা। সংশোধনের প্রয়োজন থাকতে সেগুলোর পরামর্শ দেওয়া। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে কীভাবে সমন্বয়সাধন করা যায় তার পর্যবেক্ষণ দেওয়া। যদি ত্রিশঙ্কু সংসদ বা বিধানসভা হয় তাহলে কী করা হবে তার সাংবিধানিক বিস্তার কী হবে সে-ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া। অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কে সাংবিধানিক কাঠামো আরও জোরদার করা। কমিটি সদস্যদের নাম ইতিমধ্যে ঘোষিত। বিজেপির চালাকি তাতে ধরা পড়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি অবশ্য সদস্যপদ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন-‘জেলায় তৈরি করব সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র’ ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি
একসঙ্গে নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন যদি পালটাবার কথা হয় তাহলে সংবিধানের প্রায় হাফ ডজন ধারার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সংবিধানের ৮৩নং ধারা অনুযায়ী সংসদের সময়সীমা নির্ধারণ হয়। লোকসভা ৫ বছর রাজ্য সভা ৬ বছর। ৮৫নং ধারা মতে রাষ্ট্রপতি লোকসভার অবসান ঘটান। বিস্তারিত পরিপ্রেক্ষিত এখানেই বলা আছে। বিধানসভাগুলির সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়টি রয়েছে সংবিধানের ১৭২ নং ধারাতে। প্রত্যেক বিধানসভার সময়সীমা ৫ বছর। ১৭৪ ধারা মোতাবেক বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়। কী জন্য এবং কীভাবে ভাঙা হবে তা বলা আছে। ৩৫৬ নং ধারায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কথা আছে। অতীতে বহুবার এই ধারা প্রয়োগ করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্ট জানানোর ফলে সঙ্গে সঙ্গে পুরনো মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য সরকার বহাল হয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত ধারাগুলিকে নতুন করে সাজাতে গেলে সংবিধানের মূল কাঠামোতে টান পড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিজেপি তো সংবিধান পালটে নতুন সংবিধান আনতে চায় এটা সবাই জানে।
আরও পড়ুন-ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে সুপারি কিলারের বিজ্ঞাপন, গ্রেফতার
এক দেশ এক নির্বাচনের কথা আগে বলি। ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে সারা ভারতে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন এক সঙ্গেই হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে ৩৫৬ নং ধারা প্রয়োগ করে ভেঙে দেওয়া হয়। পরে উপনির্বাচন হয়। এখন যদি আইন পালটানো হয় তাহলে মাঝপথে রাষ্ট্রপতি শাসন কোনও রাজ্যে জারি হলে সেখানে আর উপনির্বাচনের সুযোগ থাকছে না। পাঁচ বছর পর যখন লোকসভা নির্বাচন হবে তখন আবার রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হবে। রাষ্ট্রপতি শাসন চলতে থাকবে। কিন্তু বর্তমানে ৬ মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি শাসন চালানো যায় না। চললে তাতে সংসদের অনুমতি লাগবে। তাহলে সেই ধারারও পরিবর্তন হবে।
আরও পড়ুন-ঘরে-বাইরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধিক্কার বিজেপিকে
তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ বছর সময়সীমা পূর্ণ করতে পারেনি ইতিপূর্বে ৭ বার। যদি আবারও তা হয় তাহলে কী হবে? কোবিন্দ কমিটিকে অবিলম্বে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। যদিও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। যদি বিশেষ অধিবেশনে রিপোর্ট জমা দেয়। তবে একটা রিপোর্ট তো সংসদে আলোচনা করে সংবিধান পালটাতে পারে না। এর জন্য নির্দষ্ট বিল আনতে হবে। দুটো হাউসে পাশ হলেই হবে না। অর্ধেকের বেশি বিধানসভায় সেটা পাশ হতে হবে। বিষয়টি খুব সহজ নয়। কিন্তু বিজেপি তো কোনও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। ফ্যসিবাদীদের হাবভাব এরকমই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তারা আগামী নির্বাচনের আগে প্রবল জোরে কাড়ানাকাড়া বাজাতে শুরু করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন-ইনি প্রধানমন্ত্রী না প্রচারমন্ত্রী? মুখে শুধু আমি আর আমি!
পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত থেকে বিজেপি মুছে গিয়েছে। হঠাৎ হিমাচল প্রদেশ ও কর্ণাটক হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতে বিজেপির নাটবল্টু সব নড়বড় করতে শুরু করেছে। সামনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় নির্বাচন। এখন যে জনসমীক্ষা উঠে আসছে তাতে বিজেপির কপালে কষ্ট আছে বোঝা যাচ্ছে। সুতরাং এক দেশ, এক ভোটের স্লোগান তোলা হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ইন্ডিয়া জোট’। ২৮টি দল যেখানে এক মঞ্চে। বিজেপির আকাশে কালো মেঘের উদ্ভব। প্রধানমন্ত্রীর বারফট্টাই দিয়ে যে আর মানুষের মন জেতা যাবে না সেটা বোঝা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া জোট বিজেপির এই ফ্যাসিবাদী মনোভাবকে প্রতিটি অধিবেশনেই তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে। মুম্বই সভাতেও সেই সংঘবদ্ধ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। ভয় পেয়ে ২০০ টাকা গ্যাসের দাম কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আরও কত কী হবে! কিন্তু দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছে বিজেপির বিদায়ের বাজনা বেজে গিয়েছে।