ভয়ে মোদিজি থরহরি কম্পমান।
কারণ, ইন্ডিয়া জাগ্রত দ্বারে।
তাই নিশির ডাক বাতাসে ভাসিয়ে যৌবন জলতরঙ্গ রোখার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে তাঁর সরকার।
হ্যাঁ, একাধিকবার মোদি সরকারের এজেন্সি-রাজনীতির অ্যাজেন্ডা দেখলে এমনটাই মনে হতে বাধ্য।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস যতবার কেন্দ্র ও বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে, ততবার রুটিন মেনে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তলব করছে তাঁকে।
আরও পড়ুন-মাতৃত্ব অবাঞ্ছিত নয়, হোক গর্বের
এর আগে নবজোয়ার যাত্রা চলাকালীন এবং বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকের দিনেই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ইস্যুতে দিল্লির বুকে ধর্না আন্দোলন পর্বেও। আগামী ৩ অক্টোবর সেই কর্মসূচিতে হাজির থাকার কথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। ঠিক সেদিনই সকাল সাড়ে ১০টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁকে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। তাঁর বাবা-মাকে পর্যন্ত বৃহস্পতিবার হাজিরার নোটিশ দিয়েছে ইডি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এভাবে হয়রান করা হচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আসলে ভয় পেয়েছে মোদি সরকার। এইসব কার্যকলাপ সেই ভয়েরই বহিঃপ্রকাশ।
আরও পড়ুন-পরচুলা কথা
১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। এই প্রাপ্য আদায়ের দাবিতে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লির বুকে কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ আজ সকালে দিল্লির ট্রেন ধরবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকছে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে লেখা বাংলার ৫০ লক্ষ মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ সংবলিত চিঠি। নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লিতে ধর্না দেওয়ার কথা ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচির রূপায়ণে এই কার্যক্রম। যতবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ডাকছে, ততবার অভিষেক যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যাঘ্রশাবকের মতো, বুক চিতিয়ে। কিন্তু তার নির্যাস হচ্ছে শূন্য। সেই নষ্ট দৃশ্যের পুনরাভিনয়ের জন্যই বোধহয় আবার সমন। অভিষেক ঠিকই বলেছেন, ‘১৩ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠক ছিল। সেদিন ইডি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়ে তদন্তে সহযোগিতা করেছিলাম। আবার আমাকে সমন পাঠিয়েছে। বাংলার প্রাপ্য আদায়ের দাবিতে যেদিন দিল্লিতে কর্মসূচি রয়েছে, সেদিনই আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ফলে এটা বোঝা যাচ্ছে কারা আসলে ভীত।’
এরই মধ্যে ভীত বোস সাহেবও। সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাজভবনটিকে বিজেপির পার্টি অফিস বানাতে চাইছেন।
আরও পড়ুন-লাইভ-শো’তেই তুমুল হাতাহাতি পাক নেতাদের!
চাইছেন, রাজ্যের মধ্যে একটা সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তুলে মা মাটি মানুষের সরকারকে বিরক্ত করতে। সেজন্যই নানা ফন্দি এঁটে চলেছেন রোজ। নতুন, নতুন।
উপাচার্য নিয়োগ থেকে ধূপগুড়ির বিধায়কের শপথ গ্রহণ— একের পর এক ইস্যুতে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন, সাংবিধানিক রীতিনীতিকে শিকেয় তুলে। যেমন, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে উপাচার্য বাছাইয়ে সার্চ কমিটিতে আচার্যের মনোনীত প্রার্থীরা প্রত্যেকেই ভিন রাজ্যের। ব্রাত্য বসু যথার্থই বলেছেন, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, উনি কিছু হাতের পুতুলকে দায়িত্বে বসাতে চান। রাজ্য থেকে কোনও প্রতিনিধি থাকাটা তাঁর একেবারেই না-পসন্দ।
আরও পড়ুন-অন্তঃসত্ত্বা কন্যাকে জ্বালিয়ে দিলেন মা
আবার, রাজভবনের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন নতুন নাটক। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের জেড প্লাস সুরক্ষায় জানুয়ারি মাসেই নিয়োগ করা হয়েছিল সিআরপিএফ। এবার রাজভবনের দোতলা-তিনতলার (রেসিডেন্সিয়াল ফ্লোর এবং রাজ্যপালের সচিবালয়ের) দায়িত্বও গেল আধাসেনার হাতে। অর্থাৎ, এই দু’টি তলের নিরাপত্তায় আর কোনও ভূমিকা থাকবে না কলকাতা পুলিসের। তবে রাজভবনের একতলা, গেটগুলি এবং বাকি অংশে লালবাজারের অফিসাররা দায়িত্বে থাকবেন। মূল অংশের নিরাপত্তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সিআরপিএফের হাতে তুলে দেওয়া হল।
ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ‘হাইলি সাসপিশাস’। কারণ, লুকোচুরির বিষয় থাকলেই নজরদারির অভিযোগ ওঠে। রাজভবনে এত লুকোচুরির কী আছে? আসলে পুতুল খেলায় যেমন বাজিগর পুতুল নাচায়, তেমনই এখানকার রাজভবনের সুতো রয়েছে দিল্লির হাতে। সেই কারণে এসব হচ্ছে।
আরও পড়ুন-তৃণমূলকেই ভয় বিজেপির, গরিবের ট্রেন বাতিল করল নির্লজ্জ মোদি সরকার
রাজভবন থেকে রাজ্য সরকারের কর্মী বা আধিকারিকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। নন্দিনী চক্রবর্তীর পর থেকেই রাজ্যপালের সচিব পদ ফাঁকা। প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব যিনি পালন করতেন সেই শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নবান্নে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। এবার সরানো হচ্ছে দোতলা-তিনতলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিসের কর্মী-আধিকারিকদেরও। তবে কি এবার সরাসরি কেন্দ্রের কর্মী এনেই চলবে পুরো রাজভবন? রাজ্য প্রশাসনের ভিতর একটুকরো দ্বীপ রচনা করে সমান্তরাল প্রশাসন চালাবেন তিনি? প্রশ্নটা উঠছেই।
এ-সবের মধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলাকে বঞ্চনা এবং বাংলার ন্যায্য পাওনার বিরুদ্ধে লড়াই সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে অব্যাহত থাকবে। বাংলার মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য আমার এই লড়াই পৃথিবীর কোনও শক্তিই দমাতে পারবে না।’ এর পর অভিষেক লেখেন, তিনি আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লিতে থাকবেন বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য।
তাঁর দীপ্র ঘোষণা, ‘স্টপ মি ইফ ইউ ক্যান।’ অর্থাৎ, পারলে আমাকে আটকাক।
এই হিম্মত-হ্রেষা সামগ্রিকভাবে গোটা বাংলার। পারলে রাজ্যপাল কেন্দ্রের চক্রান্ত চরিতার্থ করতে রাজ্যকে আটকাক।