উৎসবে দেদার খানাপিনা তার সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন! দুটো কেমন স্ববিরোধী হয়ে গেল না! একসঙ্গে দুটো কীভাবে সম্ভব!
পুজোর দিনগুলোয় বেনিয়ম, ওজন-বাড়া, হজমের কম-বেশি গোলমাল তো মাস্ট। তাহলে কী করণীয়! এর জন্য প্রথমেই জানতে হবে ওজন কেন বাড়ে আসলে খাবার হল এমন একটা জিনিস যা বুদ্ধি করে খেলেই স্বাস্থ্যের আশ্বাস আর বোকার মতো খেলেই অস্বাস্থ্যের অশান্তি। আর বাঙালির পার্বণ মানেই শুধু খাবার। তাই ওজনের আর কী দোষ! পুজোর সময় রোজ ভালমন্দ খাচ্ছেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি শরীরে ঢুকছে এবং ওজন বাড়ছে। কাজেই পুজো মানেই শুধু রোল, বিরিয়ানি, চপ, চাউমিন, কোল্ড ড্রিঙ্ক— চারটি দিন তো, এমন ভাবনার আত্মতৃপ্তিতে না ভোগাই ভাল। এই ক’টা দিনেই কিন্তু যা ওজন বাড়ার বেড়ে যাবে। আর যাঁদের শুগার-প্রেশার, কোলেস্টেরল রয়েছে তাঁদের অতিরিক্ত ক্ষতি তো বটেই।
আরও পড়ুন-শৈলশহর মেতে উঠেছে দুর্গোৎসবে
তাহলে কি পুজোয় খাব না?
কেন খাবেন না! আমরা যদি কম বা পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করি তাহলেই ওজন বাড়বে না।
শরীরের ফাঁকফোকরে, পেটে মেদ জমবে না। যদিও-বা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করি, বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে সেটা খরচ করে ফেলতে হবে অর্থাৎ সঞ্চিত ক্যালরি বার্ন করতে হবে। এর একমাত্র পথ হল ব্যায়াম। অনেককে বলতে শোনা যায় খাটাখাটনি করো আর পেট ভরে খাও। তবে না শরীর থাকবে! এখানেই যত সমস্যা। পেট আর মন ভরে কখনই খাবেন না। এমন ভাবে খান যেন খাবার শেষে মনে হয় আর একটু খেলে ভাল হত।
ডায়েটের গোলকধাঁধা
জিনসের প্যান্টটা আর কোমরেই উঠছে না। এবার কী হবে! তাহলে পুজোর আগে হয়ে যাক একটা ডায়েট। ইদানীং খুব শোনা যাচ্ছে ইন্টারমিট্রেন্ট ডায়েট শব্দটা। কেউ কিছু বুঝুক না বুঝুক এই ইন্টারমিট্টেন্ট ডায়েট বিষয়টা বুঝে গেছে। এগারো, বারো ঘণ্টার ফাস্টিং তারপর খাওয়া। কিন্তু এই সব ভারী ভারী ডায়েটে যাবার আগে নিজের শরীরটাকে কি চিনেছেন? এত ঘণ্টা উপোসী শরীর কিন্তু বিদ্রোহ করে উল্টো ফল দিতে পারে। ওজন তো কমলই না উল্টে শরীরে দেখা দিল অন্য জটিলতা। হঠাৎ ফুলে গেলেন। এমন চলার পর যখন পুজো এল দিন-রাত দেদার খানাপিনা বাড়িতে এবং বাইরে। সারারাত ঠাকুর দেখে এক প্লেট চাউমিন খেয়ে ফেললেন বা অনেকটা বিরিয়ানি। সবগুলোই কিন্তু বিপজ্জনক হতে থাকবে। শরীর চরম ব্যতিব্যস্ত। শরীর অসময়, অবেলায় বেশি খাবার, অতিরিক্ত, জাঙ্কফুড যেমন নিতে পারে না আবার ভুলভাল উপোসও নিতে পারে না। তাই ওই ভারী ভারী ডায়েটে যাবার আগে খুব ভাল করে নিজের শরীরটাকে বুঝুন, তারপর বিশেষজ্ঞের কাছে যান, তিনি কী বলেন শুনে নিন। একদম পুরোদস্তুর গাইডলাইন যাকে বলে, সেটা নিয়মমাফিক নিয়ে তারপর এই ধরনের ডায়েট প্ল্যানে যান।
আরও পড়ুন-এই দুর্গোৎসবে চাঁদা দেন বিল গেটস, পঞ্জিকা নয়, সিয়াটেলের পুজোয় সম্বল ভক্তিরস
সারা বছর হোক নিয়ন্ত্রণ
সারাবছর যদি একটা সাধারণ নিয়মে চলেন দেখবেন পুজোগন্ডার দিনেও ভাবতে হবে না বা পুজোর পরেও ওজন বেড়ে গেল ভেবে চিন্তায় পড়তে হবে না। ওজন আপনিই ভারসাম্যে থাকবে। সেই সঙ্গে ক্যালরি বার্ন করতে হবে ওটার কিন্তু অন্য কোনও অপশন নেই। কী করে করবেন? দেখতে হবে আপনার সারাদিনের খাওয়াদাওয়া ও কাজকর্মের রুটিন কী। অফিসে যদি টানা বসে কাজ করতে হয় লোয়ার বডি পার্ট ভারী হবেই। তাহলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অনেকটা কেটে বাদ দিতে হবে। দিনে অল্প ভাত, রাতে দুটো রুটি। সঙ্গে বেশি করে সবুজ সবজি, চিকেন, তেল ছাড়া মাছ, সয়াবিন, ডালিয়া, ওটস, সুজি, ছাতু এগুলো রাখুন। সবকিছুর সঙ্গে একটু টক দই রাখুন ব্যস।
দুপুরে, রাতে পেট ঠেসে না খেয়ে সারাদিন অল্প অল্প চারটে মিল নিন।
আরও পড়ুন-জল জীবন মিশনে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে বাংলাই! ব্যর্থ বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ ও অসম
পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার
পুজোয় প্যান্ডেল হপিং আর রকমারি ভূরিভোজ ছাড়া বাঙালির চলেই না। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে প্রয়োজন পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারের। ৪০-এর কম বয়েসিদের মধ্যেও হার্টের সমস্যা কিংবা অন্যান্য সমস্যা নতুন নয়। গবেষণা অনুযায়ী যাঁরা পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খান, তাঁদের হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাকিদের তুলনায় ১৩% কম। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার একান্ত জরুরি। তাই অ্যাপ্রিকট, অ্যাভোকাডো, দই, দুধ, আঙুর, সবুজ শাক-সবজি, মাশরুম, কমলালেবু, কড়াইশুঁটি, আলু, কিশমিশ, টম্যাটো, কলা রাখুন। পুজো বলে এগুলো বাদ দেবেন না।
পুজোয় সব খান মেপে
পুজোর দিনগুলোয় সকালে খালিপেটে রোজ একটা অ্যান্টাসিড খান। হজমের সমস্যা কিংবা পেটের গন্ডগোল এড়িয়ে চলতে হলে সকালে উঠে কিংবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জিরে ভেজানো জল খান। পনেরো মিনিট ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম অবশ্যই করুন। যদি ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করতে পারেন তবে তো কোনও কথাই নেই। লুচি পরোটা খান না কিন্তু অল্প করে।
দুপুরে মাটন কষা হতেই হবে। তাহলে অল্পভাত সঙ্গে একটুকরো মাংস খেলেই তো যথেষ্ট। প্রচুর না খেয়ে অল্প-অল্প করে খান। খাবারের পরিমাণ যাঁদের কম ওজন তাঁদের কম হতেই হবে।
উৎসব মানেই খুব বেশি রাত জাগবেন না। পর্যাপ্ত জল খান। সারারাত ঠাকুর দেখলে হালকা কিছু খান সেদিন। মাঝরাতে রোল, চাউমিন কখনওই খাবেন না।
স্যাঁকা রোল বা স্টিমড মোমো স্বাদেও ভাল আবার শরীরের ক্ষতি কম। রেস্তোরাঁয় গেলে ভাত এড়িয়ে যান। রুটি আর কাবাব জাতীয় শুকনো খাবার খান। প্রোটিন পাতে রাখুন। গ্রিলড খাবার আর, বেশি করে স্যালাড অর্ডার করুন।
আরও পড়ুন-আস্থা হারিয়েছিলেন পণ্ডিতরাও, বিজেপিকে উচিত শিক্ষা ভূস্বর্গে
ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর চিপসের পরিবর্তে একটু ডাবের জল বা ফলের রস খান। পুজো মানেই মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টিই তো যত নষ্টের গোড়া। মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার যদি একটু এড়িয়ে যেতে পারেন তাহলেই কেল্লাফতে। না পারলে রোজ খাবেন না এক-আধ দিন খান কম মিষ্টির কিছু।
যাঁদের বাড়িতে দুর্গাপুজো তাঁদের উপোস তো রাখতেই হবে। এক্ষেত্রে উপোস ভেঙেই খিচুড়ি ভোগ নিয়ে বসে পড়বেন না। সারাদিন খাটাখাটনি, উপোসকাপাসের পর শরবত, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে উপোস ভাঙুন। দিনের এবং রাতের খাবার ব্যালেন্সটাই আসল। দিনে ভারী খাবার হলে ডিনারটা স্কিপ করতে পারেন। হালকা স্যুপ খেলে খারাপ লাগবে না। আবার জলখাবার ভারী হলে দুপুরটা হালকা পাতলা থাকুন।