টোকিও: যেখানেই চোখ যায় শুধু বেড়ালের ছড়াছড়ি। গোটা দ্বীপটাই কার্যত মার্জার বাহিনীর দখলে। বেড়ালের এই রামরাজত্বের দেখা মিলবে জাপানের তাশিরোজিমায়।
জাপানের একটি ছোট্ট দ্বীপ এই তাশিরোজিমা। আয়তন দেড় বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটি এখন ‘দ্য কিংডম অফ ক্যাটস’। এখানে মানুষ থাকেন মেরেকেটে ১০০ জন। আর বেড়ালের সংখ্যা প্রায় ৬০০। বিশ্বাস করতে না পারলেও এটাই বাস্তব। ওখানে গেলে যেদিকেই তাকাবেন বিভিন্ন ধরনের বেড়াল দেখতে পাবেন। রাস্তাঘাট, বাজার দোকান, শ’খানেক মানুষের বাড়ির ছাদ- ঘর সর্বত্র ওদের রাজ চলে। এই দ্বীপের নামই হয়ে গিয়েছে ‘বেড়াল দ্বীপ’। শুধু নানা কিসিমের বেড়াল দেখতেই পর্যটকরা ঘুরতে আসেন এখানে।
আরও পড়ুন- কৃষক মহাপঞ্চায়েতে উত্তাল মুজফ্ফরনগর, ২৭ শে ভারত বন্ধ
কিন্তু কীভাবে গড়ে উঠল এমন বেড়াল সাম্রাজ্য? এখানকার মানুষ নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে এই কাণ্ড করেছেন। প্রায় ৭৫ থেকে ৭৭ বছর পিছনে ফেরা যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই সময়ে তাশিরোজিমায় প্রায় তিন হাজার মানুষের বাস। এরা মূলত মৎস্যজীবী। দ্বীপটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল। জলরাশিতে ঘেরা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে এক স্থলভূমি। মাছ শিকার করে মানুষ জীবিকা চালাতেন। পাশাপাশি শুককীট চাষের প্রচলন ছিল। যা থেকে তৈরি হত রেশমের পোষাক। সবই বেশ সুন্দর চলছিল। বাদ সাধল ইঁদুরের দল। হঠাৎ করেই এখানে শুরু হয় ইঁদুরের উপদ্রব। তারা শুককীটের ব্যাপক ক্ষতি করতে শুরু করে। রেশমের উৎপাদন ব্যাহত হয়। শুধু এতেই থামেনি ইঁদুরের দল। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জালও কেটে দিতে শুরু করে তারা।
আরও পড়ুন- বাংলার হরিস্বামী-সহ ৪৪ শিক্ষক পুরস্কৃত
মূষিক তাড়াতে তখন স্থানীয় বাসিন্দারা এক অভিনব পথ নেন। তারা কিছু বেড়াল নিয়ে এসে ছেড়ে দেন দ্বীপে। দারুন ফল পাওয়া যায়। ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে ‘গল্প’ অন্যদিকে মোড় নেয়। বেড়ালের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বেড়ালরা রেশম চাষের কোনও ক্ষতি করেনি ঠিকই, কিন্তু ক্ষতি হয় মৎস্যজীবীদের। দ্বীপটিতে মৎস্যজীবীরা যে মাছ ধরে আনতেন তা মনের আনন্দে সাবাড় করে দিতে শুরু করে বেড়ালের দল। নাজেহাল হয়ে দ্বীপের বাসিন্দারা অন্য জায়গায় চলে যেতে শুরু করেন। থেকে যান বয়স্ক মানুষরা। তাঁদের নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গ হয়ে ওঠে বেড়ালের দল। সময় গড়িয়ে অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে বেড়ালরাই এখন দ্বীপের মূল বাসিন্দা।
আরও পড়ুন- নিপা ভাইরাসে মৃত্যু কেরলে
প্রসঙ্গত, জাপানিদের কাছে বেড়াল সৌভাগ্যের প্রতীক। ২০১১ সালে এই অঞ্চলে সুনামি হলেও সৌভাগ্যের প্রতীক বেড়াল দ্বীপে কিচ্ছুটি হয়নি। এই দ্বীপে বেড়াল রক্ষা করতে কুকুরের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা করেছে জাপান সরকার। তাশিরোজিমা সেদেশে এখন বেড়াল পর্যটনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।