সুখেন্দুশেখর রায়: ব্যাঙ্কের টাকা চোরাপথে হাতিয়েছে এমন ঠগ-বাটপাড়দের এবার আর কোনও ভয় নেই। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ’মাসের ৮ তারিখ এক সার্কুলার জারি করে সেইসব ঠগদের সঙ্গে সমঝোতার পাকাপাকি ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন-পোড়ানো হয়েছে ২৫৩টি চার্চ, দাবি কুকিদের
এতদিন পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘মাস্টার সার্কুলার’-এর মাধ্যমে ব্যাঙ্ক প্রতারক ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, এমনকী ফৌজদারি আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সব ব্যাঙ্ককে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। তাই যতীন মেহতা, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসির মতো ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বা প্রতারকরা বিদেশে ব্যাঙ্ক লুটের টাকা সরিয়ে দিয়ে অন্য দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে শান্তিতে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। এইসব ঋণখেলাপিকে চাইলেও দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কারণ, ওইসব দেশের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তাই বিজয় মালিয়া অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে পরের দিনই সতেরোটা লম্বা স্যুটকেস নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান।
আরও পড়ুন-মুশকিল আসান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আরামবাগের তেলুয়ায় শুরু হল রাস্তা তৈরির কাজ
ওইসময় রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার সুবাদে তাঁর কাছে কূটনীতিক পাসপোর্ট ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও লুকআউট নোটিশও ছিল না। একইভাবে মেহুলভাই ও নীরবভাই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০১৫-র নভেম্বরে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক সভায় মেহুল হাজির ছিলেন। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘মেহুল ভাই’ বলে সম্বোধনও করেন। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ‘বিশ্ব আর্থিক শীর্ষ সম্মেলনের দিন দাভোসে নীরব মোদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রুপ ফটো তোলেন। ঠিক তার ছ’দিন পর পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক সিবিআইয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানায়, জালিয়াতরা ব্যাঙ্কের ১১,৫০০ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। নাম জানাজানি হওয়ার আগেই নীরব-মেহুলরা পগারপার। ১৪ জুন, ২০২২-এর খবরে প্রকাশ, গতবছর প্রায় ৮০০০ অতি ধনী ভারতীয় চিরদিনের জন্য দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। এদের মধ্যে কতজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি আর ব্যাঙ্ক প্রতারক ছিল তা কেউ জানে না।
আরও পড়ুন-বন্ধ হচ্ছে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস,জানাল রেল
তবে এবার ঠগ-বাটপাড়দের আর কোনও চিন্তা নেই। পুরনো মাস্টার সার্কুলার বিলোপ করে দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৮ জুন অভিনব এক সার্কুলার জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, এমনকী ব্যাঙ্ক প্রতারকদের সঙ্গে এককালীন সমঝোতা করে কমবেশি টাকা আদায় করা যাবে। আদালতে মামলা থাকলে উভয় পক্ষের যৌথ সম্মতি পেলেই চলবে। অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া সার্কুলার অনুসারে এবার বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিরা চাইলে কিছু টাকা ফেরত দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এমনকী সমঝোতা হওয়ার এক বছর পরেই তাঁরা আবার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নিতে পারবেন। ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রের ঠগ-প্রতারকরাও কি এমন সুযোগ আগামিদিনে পেতে চলেছে? বিভিন্ন মহলে তাই প্রশ্ন উঠেছে, আগামী বছরের নির্বাচনী ফান্ড গড়ার লক্ষ্যেই কি ঠগ-বাটপাড়দের সঙ্গে এমন সমঝোতার রাস্তা তৈরি করা হল?