কন্যাশ্রীর পর এবার বিশ্বসেরা স্বাস্থ্যসাথীও, মান্যতা দিল আন্তর্জাতিক চিকিৎসক মহল

Must read

প্রতিবেদন : বিশ্বের দরবারে আগেই সেরার স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলার ‘কন্যাশ্রী’। বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেয়েছিল ‘উৎকর্ষ বাংলা’ ও ‘সবুজসাথী’ও। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পও আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্থান করে নিল। বিরোধীদের সমস্ত কুৎসা ও অপপ্রচারকে ধূলিসাৎ করে স্বাস্থ্যসাথীর এই বিশ্ব স্বীকৃতি প্রমাণ করে দিতে চলেছে রাজ্যের সকল স্তরের মানুষের কাজে লেগেছে এই প্রকল্প। বাড়ির মহিলাদের নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে পরিবারের সবাই বেসরকারি নার্সিংহোমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন, তা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প ক্যানসার চিকিৎসায় আর্থিক সুরাহা দিয়েছে মানুষকে। ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সৌজন্যে। বাংলা প্রকল্পের এই সাফল্যের কথা উঠে এসেছে ‘দ্য ব্রেস্ট’ আন্তর্জাতিক জার্নালে। শুধু তাই নয়, বিশ্বসেরা চিকিৎসকদের ‘সেন্ট গ্যালেন’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি পেতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথীর গরিমা রাজ্য ও দেশের চৌকাঠ পেরিয়ে এবার স্পর্শ করল আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে। নতুন গরিমায় উদ্ভাসিত হল ‘স্বাস্থ্যসাথী’ (swasthya sathi) প্রকল্প।
বিশ্বের অন্যতম সেরা চিকিৎসা সম্মেলন ‘সেন্ট গ্যালেন ব্রেস্ট ক্যানসার কনফারেন্স ২০২৫’ মান্যতা দিল ক্যানসারের মতো মারণব্যাধির চিকিৎসায় মানুষের খরচ কমাতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সার্থকতাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী কীভাবে রোগীদের পাশে থেকেছে এবং মাইলফলক স্থাপন করেছে, সেই গবেষণাপত্র পাঠ করতে বাংলার চিকিৎসকেরা ডাক পেয়েছেন অস্ট্রিয়ায় আয়োজিত ওই সম্মেলনে। বৃহস্পতিবার বিশ্বসেরা চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে ওই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তা পাঠ করা হয়। বিশিষ্ট অঙ্কোসার্জন ডাঃ সৌমেন দাস-সহ ৫ জন চিকিৎসকের গবেষণা ও সমীক্ষা রিপোর্ট জানানো হয়, ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার খরচ ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। এই প্রকল্পের জেরেই শেষ পর্যন্ত কেমো চালিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন রোগীরা।
নয়াবাদ ও সিঁথির দুই বেসরকারি হাসপাতালের ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এই সমীক্ষায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ২৪৫০ জন এবং অন্যদিকে ২৭৩৫ জন নগদে চিকিৎসা-করা রোগীদের চিকিৎসার গতিপ্রকৃতি তুলনা করা হয়। মৃত্যুহার দুই ধরনের রোগীদের মধ্যেই ছিল সমান। বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা পর্যন্ত স্বীকার করে নেন, ক্যানসারের মতো ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসাথীর ভূমিকা অপরিসীম। তাই স্বাস্থ্যসাথীর বিশ্ব স্বীকৃতি যথার্থ।

আরও পড়ুন-৭০ দিনে ৯ লক্ষেরও বেশি রোগীর রেজিস্ট্রেশন সেবাশ্রয়ে

সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্যের ৮ কোটি ৭২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬০৭ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসার জন্য ২২৬৩ কোটি ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৩৯ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষে ২৬৩০ কোটি ৫৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৯৪ টাকা, ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে ২৬৯৪ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯ হাজার ৬৩১ টাকা ব্যয় হয়েছে। তিন বছর ধরে প্রতিবারই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসার জন্য খরচ হওয়া অর্থের পরিমাণ বেড়েছে।
উল্লেখ্য, গত অর্থ বর্ষে ২০২৩-২৪ সালে এর মধ্যে হাওড়া জেলাতেই ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭০৮ জন মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা পেয়েছেন। এর জন্য ১৬৯ কোটি ২৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। তার আগের বছর ২০২২-২৩ সালে হাওড়ায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২৪৯ জনের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা হয়েছে। এর জন্য ১৬৩ কোটি ২১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩১১ টাকা ব্যয় হয়েছিল।

Latest article