উপযুক্ত নীতির অভাবে আকাশ ছুঁয়েছে দেশের বেকারত্বের হার। বিশেষত করোনা মহামারিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি পরিকল্পনার নীতি নির্ধারণের অভাবে বিগত পাঁচ দশকের রেকর্ড ভেঙেছে দেশের বেকারত্ব। নরেন্দ্র মোদি জমানায় দেশের বেকারত্বের হার কীভাবে বেড়েছে শনিবার তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এবং দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
আরও পড়ুন- দেশে বিভেদের বিষ ছড়াতেই ‘দেশভাগ দিবসে’র ডাক: কুণাল ঘোষ
রীতিমতো মোদি সরকারের দেওয়া তথ্য পেশ করে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা জানিয়েছেন ২০১৩ সালে, যখন দেশে ইউপিএ সরকার চলেছে, তখন দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৫৬ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেকারত্বের হার মোটামুটি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। যা যথাক্রমে – ৫.৬০ শতাংশ, ৫.৫৬ শতাংশ, ৫.৫১ শতাংশ, ৫.৪১ শতাংশ, ৫.৩৩ শতাংশ এবং ৫.২৭ শতাংশ ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে দেশের বেকারত্বের হার পৌঁছয় ৭.১১ শতাংশে।
আরও পড়ুন- “দিদি বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য মাসে দেড় হাজার টাকা দিচ্ছেন এই প্রকল্পে”
কেন্দ্রীয় সরকারের চরম ব্যর্থতা সামনে এসে পড়ে। যশবন্ত সিনহার কথায়, “গত ৫০ বছরে দেশে এ হেন কর্মসংস্থানের অভাব দেখা যায়নি। বেকারত্বের এই চরম দুর্দশার অন্যতম কারণ সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিকে না তাকানো। বিশেষত, করোনা অতিমারির সময়েও চোখ বুজে থেকেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়ে রাস্তায় নামলে ও সরকার তাদের দিকে মুখ ফিরে তাকায়নি। যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে অর্থনীতিতে। এর জেরেই দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার।” এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য তুলে ধরে যশবন্ত সিনহা জানিয়েছেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২০১৩ সালে মার্কিন ডলারের নিরিখে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার ছিল ৬.৩৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে অগ্রগতির হার ৮.২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। তারপর থেকেই ক্রমে তলিয়ে গিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। পরের বছরেই অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার ৬.৮০তে গিয়ে ঠেকে। পরের বছর ২০১৮ সালে অগ্রগতির হার ৬.৫৩ শতাংশে পৌঁছায়। ২০১৯ সালে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার নামতে নামতে গিয়ে পৌঁছায় ৪.০৪ শতাংশে। শেষ পর্যন্ত গত বছর ২০২০ সালে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার গিয়ে ঠেকে -৭.৯ শতাংশে। সরকারের তরফে এর জন্য করণা অতিমারিকে দায়ী করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- মেখলিগঞ্জে ফের দুয়ারে সরকার
কিন্তু, এখানে উল্লেখনীয় বিষয় হল, করোনা অতিমারি পর্বের আগের বছরগুলোতেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্রমশ কমেছে। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির কথায়, “গত পাঁচ বছর ধরে দেশের এই করুণ অর্থনৈতিক পরিণতির অন্যতম এবং প্রধান কারণ হল পরিকল্পনাহীন অবিবেচকের মতো নোটবন্দির সিদ্ধান্ত দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দেওয়া। আজ যে কেউ বলতে পারে নোটবন্দি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, নোট বন্দির সময় প্রধানমন্ত্রী যেসব কারণগুলি উল্লেখ করেছিলেন সেই কালোটাকা, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি ইত্যাদির কোনওটিই বন্ধ হয়নি। বরং আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। এর দায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।” উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত আটটায় দূরদর্শনে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশ থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করে নেন প্রধানমন্ত্রী। গোটা বিশ্বে সবার আগে সেই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর জল অনেক দূর গড়িয়েছে যত সময় গিয়েছে ক্রমশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।
আরও পড়ুন- রাজ্য জুড়ে উচ্ছ্বাসে , পালিত ‘কন্যাশ্রী দিবস’
বাংলার প্রতি বঞ্চনা
জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের প্রাপ্ত অর্থের অনেকটা অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিন দলের তরফে সাংবাদিকদের সামনে তথ্য তুলে ধরে দুই প্রবীণ নেতা বলেন, “বাংলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ঘূর্ণিঝড় আমফান, করোনা মহামারিতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক টাকাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। জিএসটি বাবদ প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ এবং বহু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বিপুল অংকের প্রাপ্য টাকা বকেয়া রেখেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের কাছে শুধু জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য ৩৮৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রের আদায় করা মোট করের উপর রাজ্যগুলোর প্রাপ্য আরও ১০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১.৪২ শতাংশ।”
মুদ্রাস্ফীতি ইস্যুতেও কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। তথ্য-সহ তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির কারণেও মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১১.৬৩ হাজার জেরেই ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল ইউপিএ সরকারকে। ২০১৪ সালে মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল ৬.৬৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে ছিল ৪.৯১ শতাংশ। ২০১৬ সালে কিছুটা বেড়ে তা দাড়ায় ৪.৯৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে হয় ৩.৩৩ শতাংশ। পরের দু’বছর মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৩.৯৫ এবং ৩.৭২ শতাংশ। কিন্তু ২০২০ সালে একলাফে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৬.৬২ শতাংশে। মনে রাখতে হবে ২০২০ সালটি করোনা বিপর্যয়ের বছর। চাহিদা একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। তা সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি সরকারি নীতির ব্যর্থতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। গত জুলাইয়ে ও দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫.৬ শতাংশ।