পূর্ণেন্দু রায়, নয়াদিল্লি : জ্বালানির আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন অয়েল বন্ড-এর সুদ ও আসল টাকা দিতে গিয়ে চাপ বাড়ছে সরকারের কোষাগারে। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার প্রবীণ সদস্য সুখেন্দুশেখর রায় ও অন্যতম মুখপাত্র সাকেত গোখলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে মিথ্যাচারিতা বলে চিহ্নিত করেছেন।
আরও পড়ুন- কার্নালে কৃষকদের রুখতে জারি ১৪৪ ধারা, বন্ধ ইন্টারনেট
উল্লেখ্য, গত সাতবছর ধরে বিজেপি শাসনকালে দেশে পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। দেশের বহু শহরেই পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ১০০ টাকা পার করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকা সত্ত্বেও দেশে এর মূল্যবৃদ্ধি মানুষ মেনে নিতে পারছে না। সরকারের প্রতি মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আঁচ করেই নির্মলা সীতারামন দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে আসরে নামেন বলে অভিযোগ। গত ১৬ অগাস্ট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সীতারামন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য কার্যত পূর্বতন ইউপিএ সরকারের উপর দায় চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘‘ইউপিএ সরকারের সময়কালে বাজারে ছাড়া অয়েল বন্ড-এর সুদ এবং আসল ফেরত দিতে আমাদের ওপর অন্যায় আর্থিক বোঝা বাড়ছে।”
আরও পড়ুন- চন্দ্রিমা-সুস্মিতাদের কর্মী বৈঠক
আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা তেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপ যাতে দেশের মানুষ বা রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলির ওপর না পড়ে, সেজন্য জ্বালানিতে ভরতুকি দিতে ‘অয়েল বন্ড’ বাজারে ছেড়ে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বাজার সংগ্রহ করেছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলের এক আরটিআই-এর জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, ২০১৫-২০১৬ আর্থিক বছর থেকে ২০২০-২০২১ আর্থিক বছর পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা অয়েল বন্ড-এর সুদ বাবদ খরচ হয়েছে। প্রতি বছর সুদ বাবদ খরচ করা হয়েছে ৯,৯৮৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের অধীন পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং ও অ্যানালিসিস সেলের তথ্য অনুযায়ী একমাত্র ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরে সরকারের সংগ্রহ ৪,১৮,৬৩৭ (আনুমানিক) কোটি টাকা। ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছরে আয় হয়েছিল ২,৭৩,২২৫ কোটি টাকা। তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির দায় পূর্বতন সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে চূড়ান্ত মিথ্যাচার করে চলেছে মোদি সরকার ও তার মন্ত্রীরা। সাকেত গোখলে ট্যুইট বার্তায় বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে অয়েল বন্ডের অর্থ প্রদানের কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও, সরকার পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর ভারী কর আরোপ করে ভারতীয়দের সঙ্গে মিথ্যাচার ও তোলাবাজি করছে। এই টাকা কোথায় যাচ্ছে?