প্রতিবেদন : দুর্গাপুজোর ঠিক আগে ৩-০ হয়েছে। এবার কালীপুজোর আগে হবে ৪-০। রাজ্যে উৎসবের মরশুমে ঠিক একমাসের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে উপনির্বাচনে এমনই ফলাফল হবে। ভোট দিতে তৈরি মানুষ।
বিধিমাফিক উপনির্বাচনের প্রচার শেষ। এবার ভোটের দিনের অপেক্ষা। তবে ভোটের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়ানো ও সাংগঠনিক শক্তি আরও জোরদার করতে কর্মীদের নিয়ে আলোচনা চলবে। পাশাপাশি ভোটের দিন মানুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন এবং কোনওরকম সমস্যা না হয় সেদিকটাও নজরে রাখছেন খড়দহ উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এজন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় কর্মীরাও যাতে সজাগ থাকেন, সে বিষয় নিয়েও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। জাগোবাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভনদেববাবু বুধবার বললেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো ৪৮ ঘণ্টা আগে ভোটপ্রচার বন্ধ হয়েছে। সেই নির্দেশমতোই আমরা আর প্রচার করছি না। ভোটকর্মী থেকে ভোটদাতারা যাতে ভোটপর্ব সঠিকভাবে শেষ করতে পারেন এবং তার জন্য যদি আমাদের সাহায্য তাঁরা চান, তবে নির্বাচনী নির্দেশিকা মেনেই আমাদের কর্মীরা সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের জয় এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খড়দহের মানুষের সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, শিক্ষা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা বঞ্চিত করবেন না। জয়ের পর আপনার প্রথম কাজ কী হবে? জবাবে তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে বসে খড়দহের কী কী সমস্যা আছে তা লিপিবদ্ধ করে প্রাধান্যের ভিত্তিতে পরপর সমস্যাগুলির সমাধান করব। খড়দহের মানুষ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন না।
আরও পড়ুন : নতুন করে ১৩ এয়ারপোর্ট বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পথে মোদি সরকার
এদিকে শেষদিনের প্রচারেও জনজোয়ার। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারের ঝড়েই উড়ে গিয়েছে বিজেপি। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় যে কেবল সময়ের অপেক্ষা তা এক প্রকার প্রমাণ করে দিল দিনহাটার প্রার্থী উদয়ন গুহর শেষদিনের প্রচার। এতদিন হেভিওয়েড প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন তাঁর প্রচারে। কিন্তু বুধবার প্রার্থী নিজেই মঞ্চ গরম করলেন। ‘‘উন্নয়ন না করে মানুষের ভোট নিয়ে প্রতারণা করেছে নিশীথ প্রামাণিক’’, উদয়ন একথা বলতেই আওয়াজ তুলে সমর্থন জানালেন উপস্থিত জনতা।
বুধবার এক অন্যরকম আত্মবিশ্বাসী হিসাবে দেখা গেল উদয়ন গুহকে। তিনি বলেন,‘‘আজ শেষদিনে শুধু ফিনিশিং টাচ দেওয়া হবে। সন্দেহের অবকাশ নেই৷ কত ভোটে জিতব সেটাই এখন দেখার৷’’ একথায় জয়ের ব্যাপারে অনেকাংশে আত্মবিশ্বাসী উদয়ন গুহ৷ তিনি এদিন দিনহাটা শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার করেন। এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৫৭ ভোটে উদয়ন হেরেছিলেন বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের কাছে৷ তবে নিশীথ প্রামাণিক বিধায়ক পদ ছেড়ে সাংসদ পদে থাকার সিদ্ধান্তে উপনির্বাচন হচ্ছে দিনহাটায়। দল ফের উদয়নকে প্রার্থী করেছে। ইতিমধ্যেই তিনি পেয়েছেন মানুষের সমর্থন। তাই শেষদিনের প্রচারে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন উদয়ন। বস্তুত, নিশীথ প্রামাণিক যে সুযোগসন্ধানী তা দিনহাটার মানুষ বুঝে গিয়েছেন। কারণ নির্বাচনে জেতার পর তিনি দিনহাটার মানুষের সঙ্গে থাকলেন না। বরং সাংসদ পদ আঁকড়ে কেন্দ্রের মন্ত্রী হলেন। অনেকের কাছেই তাই তিনি মিরজাফর ছাড়া আর কিছুই নয়। যার প্রমাণ মিলবে ইভিএমে।
আরও পড়ুন : করোনার পর ডেঙ্গুতে জেরবার রাজধানী
অপরদিকে যেন জয়ের স্বাদ পেয়েই গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী। বুধবার ছিল শান্তিপুর বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন। দেখা নেই বিরোধী দলের প্রার্থীদের। উন্নয়নের বজ্রবাণ নিয়ে ঘুরলেন ব্রজকিশোর। সন্ধ্যায় ভোটপ্রচার শেষ হল। তার আগে করলেন রোড শো। ঘুরলেন শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে বললেন, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, শান্তিপুরকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে। আমার ওপর আস্থা রাখুন। অভিষেকের সুরে সুর মিলিয়ে বলছি, আমিও আপনাদের জন্য সবসময় কাজ করে যাব, যখন ডাকবেন তখনই ছুটে যাব, সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেব। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে শান্তিপুরকে কীভাবে সাজিয়ে তোলা যায় সেদিকে নজর দেব। ৮, ১০, ১৩, ১৪, ১৬, ২২-সহ একাধিক ওয়ার্ডে প্রচারে ঝড় তুললেন তিনি। হেভিওয়েট কোনও নেতা প্রচারে না থাকলেও ছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র, শহর সভাপতি বৃন্দাবন প্রামাণিক, ব্লক সভাপতি নিমাই বিশ্বাস, জেলা সভানেত্রী রত্না ঘোষ কর। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ালেন তাঁরাও। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জনসভায় বলেছেন, শান্তিপুর নতুনভাবে গড়ে উঠবে। একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। স্টেট জেনারেল হাসপাতালের উন্নয়ন, অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শেষ করা থেকে স্টেডিয়াম সংস্কারে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কালনা ব্রিজের সবটাই দ্রুত সংস্কার হবে।