গ্রীষ্মকালীন বাড়তি সাবধানতা হিসেবে কয়েকটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো কী কী?
খেতে হবে জল
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি গ্লোবাল ওয়ার্মিং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সূর্যাস্তের পরেও কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকছে। বাইরে তো বটেই, তাপমাত্রা বেশি থাকছে আবদ্ধ জায়গাতেও। হিউমিডিটি বেড়ে যাচ্ছে। এর মোকাবিলায় পানীয় জল গ্রহণ করতে হবে দিনে তিন থেকে চার লিটার। এটা বজায় রাখতেই হবে। সতর্ক থাকতে হবে হার্ট এবং কিডনি রোগীদের। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বাড়তি জলের মাপ ঠিক করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন-ক্রিকেট, টেনিসের পর বার্টি গলফে
জলের পরে ফল
খাবারের মধ্যে রাখতে হবে মরশুমি ফল। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। যাঁদের ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের বাদ দিয়ে বাকিদের জন্য মরশুমি ফল খুব উপকারী। কিডনির সমস্যা থাকলে শসা, পেয়ারা, নাসপাতি খেতে পারেন। যাঁদের শরীরে পটাশিয়াম কম, তাঁদের দেওয়া যেতে পারে ডাবের জল, কলা, তরমুজ। কারণ এরমধ্যে প্রচুর পটাশিয়াম আছে। এই ফলগুলো খেলে মাসল সমস্যা, ক্লান্তি ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে। পেটের সমস্যাতেও খুব উপকারী। রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া কাটা ফল না খেতেই পরামর্শ দেব। গোটা ফল কিনে ভাল করে ধুয়ে নিয়ে তারপর খেতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাঁদের সেই সমস্ত ফল দিতে হবে, যেগুলোয় মিষ্টি কম। যেমন, পেয়ারা, নাশপাতি, শসা। আম, কাঁঠাল, খেজুর, আঙুর, সবেদা, তাল দেওয়া উচিত হবে না।
আরও পড়ুন-হারের হ্যাটট্রিকেও বিচলিত নন, শাহরুখ-বার্তা, হারলে এভাবেই হারো
খাবারদাবার
গরমে খেতে হবে মরশুমি সবজি ও সহজপাচ্য খাবার। তেল যত কম ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। এড়িয়ে চলতে হবে বাসি খাবার, ভাজাভুজি, অতিরিক্ত মশলাপাতি দেওয়া খাবার। কোনও খাবার ফ্রিজে বেশিদিন রেখে খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খেতে হবে টাটকা খাবার।
ঘামাচি
গরমের সময় অনেকের ঘামাচি হয়। এই সমস্যা দূর করতে জলকে সাধারণ তাপমাত্রায় এনে বারবার চামড়া ধোয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি ক্যালেন্ডুলা বা ক্যালামিন মিশ্রিত ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাইগ্রেন
অনেকেই মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের পরামর্শ দেব, বাইরে বেরোলে ছাতা এবং রোদচশমা অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
ত্বকের ক্যানসার
অনেক সময় দেখা যায় ত্বকের ক্যানসার। তুলনামূলক ভাবে আমরা ডার্ক স্কিনের মানুষ। তাই আমাদের দেশে এই রোগ কম হয়। বেশি হয় সাদা চামড়ার মানুষদের। তবু অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা। চড়া রৌদ্ররশ্মি থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন এবং ছাতা ব্যবহার ভীষণ বাঞ্ছনীয়। এর ফলে ত্বকেরও ক্যানসার এড়ানো সম্ভব।
আরও পড়ুন-কাদিজের বিরুদ্ধে অবাক হার বার্সার
জিম
আজকাল অনেকেই শরীরচর্চার জন্য জিমে যান। এই গরমে একনাগাড়ে জিম করার ফলে মাসল থেকে মায়োগ্লোবিন বেরিয়ে আসতে পারে। এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিডনি। তাই সমস্যা মোকাবিলায় এইসময় ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
নতুন স্টেইন
আমরা সবে কোভিড অতিমারি থেকে বেরিয়ে আসছি। শুনছি, নতুন নতুন স্টেইন আসতে পারে। এতে গা গোলানো, বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা ভীষণ কমন লক্ষণ। যদি দেখা যায় কোনও মানুষের বেশ কিছুদিন পেট খারাপ চলছে, তাঁদের ওআরএস দিতে হবে, ডিহাইড্রেশনের চিকিৎসা করাতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে নাক দিয়ে জল পড়ছে কি না, শরীরে ব্যথা আছে কি না, জ্বর আছে কি না।
আরও পড়ুন-কেরলের কাছে হেরে চাপে বাংলা
ছোটদের জন্য
গ্রীষ্মকালে ছোটদের বেশকিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন পেটখারাপ, গা-গুলোনো, বমি পাওয়া, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে থাকেন। এই ওষুধগুলো মূলত বড়দের জন্য তৈরি। ভুল ভাবে ওষুধ ব্যবহার করার ফলে ছোটদের ক্ষতি হতে পারে। এই ওষুধগুলোর কারণে কিন্তু স্কিন অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় দেখা দিতে পারে জীবন সংশয়ও। ছোটদের জ্বর এবং পেটখারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে শিশু-চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খাওয়াতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওআরএস, জল। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া হচ্ছে কি না দেখার সহজ উপায় হল, ঠিকঠাক ইউরিন হচ্ছে কি না দেখা। যদি ঠিকমতো ইউরিন হয় এবং তার রং যদি ঠিক থাকে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ানো হয়েছে। গলাভাত, ডাল, ঝোল, দইয়ের লস্যিও খাওয়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ লিকুইড খাবার।
বয়স্কদের জন্য
এবার আসি বয়স্কদের কথায়। বেশি বয়সে ডিহাইড্রেশন খুব বেশি হয়। আজকাল সুগার এবং হার্টের সমস্যায় অনেক নতুন নতুন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ওষুধগুলো ব্যবহারের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়। চিকিৎসকদের কাছে জেনে নিতে হবে দিনে ঠিক কতটা পরিমাণ জল খাওয়া যাবে। খেতে হবে ফল। জল এবং ফল বেশি খেলেও সমস্যা, আবার কম খেলেও সমস্যা।
আরও পড়ুন-শ্রেয়সের লড়াই ব্যর্থ, টানা তিন হার কেকেআরের, হ্যাটট্রিকে বাজিমাত চাহালের
স্নান
দিনে দুই থেকে তিনবার স্নান করাই যায়। অনেকেরই আছে ঠান্ডা লাগার ধাত। অবশ্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলে স্নান করলে কোনও সমস্যা নেই। স্নান করার পরে ভালভাবে শরীর মুছে নিতে হবে। শুকিয়ে নিতে হবে ভিজে চুল। স্নানের পরে সুতির পোশাকে থাকতে পারলে খুব ভাল হয়।
বাতানুকূল যন্ত্র
আজকাল অনেকেই বাড়িতে বাতানুকূল যন্ত্র ব্যবহার করছেন। যাঁরা এই যন্ত্র ব্যবহার করছেন, তাঁদের অনুরোধ, ফিলটারটা নিয়মিত ভালভাবে পরিষ্কার রাখবেন। নাহলে ফিলটারে জমে থাকা ফাঙ্গাস থেকে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। বাতানুকূল যন্ত্রের তাপমাত্রা খুব কম না রেখে ২৫-২৮ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে পারলে খুব ভাল। এর ফলে ঠান্ডা লাগা, সাইনাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে। বিদ্যুতের বিলও কম আসবে। বাইরে বেশি, ভিতরে কম, তাপমাত্রার এই বৈপরীত্য থেকে পাওয়া যাবে মুক্তি।