প্রতিবেদন : লাগাতার জনসংযোগ এবং সাংগঠনিক সক্রিয়তার মাধ্যমে ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনে দাঁত-নখ বের করা বিজেপিকে প্রবলভাবে পর্যুদস্ত করে কীভাবে বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা দেখেছেন ত্রিপুরাবাসীও। জনস্বার্থে তৃণমূল সরকারের একের পর এক উন্ননয়নমূলক প্রকল্পে বিকল্পের দিশা দেখছেন তাঁরাও। ফলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন প্রদেশ তৃণমূল নেতারা রাজ্য ও রাজ্যবাসীর উন্নয়নে বিকল্প পথের কথা বলছেন, তখন তা মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। মাত্র কয়েক মাসে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান এখন ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মাথাব্যথার কারণ। তাই তৃণমূলকে ‘লঘু’ করে দেখাতে গিয়ে কোমায় চলে যাওয়া সিপিএমকেই রাজ্যে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। এই লক্ষ্যে দুর্বল বামেদেরই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর নয়া কৌশল।
আরও পড়ুন-হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপই প্রেরণা ছিল প্রণয়দের
বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদের সার্বিক অপদার্থতা ঢাকতে সদ্য মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি। বিপ্লব দেবকে ক্ষমতায় রাখলে ভরাডুবি নিশ্চিত বুঝে এক আনকোরা দন্ত চিকিৎসককে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়েছেন নাড্ডা-শাহরা। নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলছেন, রাজ্যে সিপিএমই একমাত্র প্রতিপক্ষ। যুক্তি দিচ্ছেন, ত্রিপুরা বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল তারাই। অথচ গত কয়েক মাসে কীভাবে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে এবং সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব শাসক দলের মোকাবিলায় রণনীতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করেছেন ত্রিপুরার মানুষ। আগরতলা পুরভোটে মাত্র তিন মাসের প্রচারেই ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল, যা নির্বাচনী যুদ্ধে কার্যত অবিশ্বাস্য।
আরও পড়ুন-লক্ষ্যদের সাফল্যে গর্বিত প্রকাশ
বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব যেভাবে মাটি কামড়ে জনসংযোগ শুরু করেছেন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল নেতৃত্ব যেভাবে জনবিরোধী বিজেপির বিরুদ্ধে জানকবুল লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছেন তাতে তৃণমূলই তাঁদের সামনে প্রধান বাধা। সেজন্য জেনেবুঝেই রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে ত্রিপুরায় দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সিপিএমকে হাওয়া দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। তাদের এই পরিকল্পিত কৌশলের মধ্যে একদিকে তৃণমূল ভীতি এবং অন্যদিকে বিরোধী ভোট ভাগের সুযোগ খোঁজার চেষ্টাই দেখছে রাজনৈতিক মহল। যদিও বিজেপির এই চতুর ব্যাখ্যার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারছেন ত্রিপুরাবাসী। ফলে ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসই যে ত্রিপুরায় বিজেপি অপসারণের মূল কারিগর হতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।