মানুষের স্বার্থে কাজ করে চলেছে, মা-মাটি-মানুষের সরকার

এদিনই ২০২১-এ পরিষ্কার হয়ে যায়, আরও একবার বঙ্গে মা-মাটি-মানুষেরই সরকার। বাংলা সবুজ-ঝড়ে মতোয়ারা হয়ে ওঠে আরও একবার। তৃতীয়বার সরকার গঠনের তৃতীয় বর্ষে সেই সরকার কোন পথে কতদূর অগ্রগমন নিশ্চিত করেছে, তারই খতিয়ান তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবনারায়ণ সরকার

Must read

২ মে, ২০২১। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলানোর পর তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় জননেত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ওয়াদা করেছিলেন, তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য সারা রাজ্যে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প বাস্তায়িত করবেন। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এলে ১ জুলাই, ২০২১ থেকে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের সূচনা করলেন। যারা সরকারি চকরি করেন না এবং যাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তাঁদের প্রত্যেকেই এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের জন্য প্রতি মাসে ১০০০ টাকা এবং অন্যরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এ-জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রতি বছরে অন্তত দু’বার দুয়ারে সরকার প্রকল্প তৃণমূল সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই নয় তৃণমূল সরকারের (Trinamool government) বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা যাতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মানুষ পেতে পারে তার জন্যই এই ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু করেছে এই সরকার। শেষোক্ত দুয়ারে সরকার প্রকল্প চলেছে ২০২৩ সালের ১—৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। ২৭টি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে।

২০২৩ সালে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প ৬০ বছরের পরেও রাখার ঘোষণা করা হল। কার্যত, একজন মহিলা ২৫ বছর বয়স থেকে সারা জীবন ধরে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবেন। তবে ৬০ বছর থেকে প্রত্যেক সুবিধাভোগীই মাসিক ১০০০ টাকা করে পাবেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে বর্তমানে সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি।
শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই নয়, তৃতীয় বারের (Trinamool government) জন্য ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্প’ চালু করলেন ১৭ জুন ২০২১ থেকে। প্রথম ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’ চালু হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে। এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা করে বছরে কৃষকেরা অর্থ সাহায্য পেতেন। ১৭ জুন ২০২১ থেকে এটি বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হল। সামান্য জমি থাকলেও কোনও কৃষক পরিবার ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা বছরে পাবেন নতুন প্রকল্পে। রাজ্যে প্রায় ৮০ লক্ষ কৃষক বর্তমানে এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।

তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘শিক্ষাশ্রী প্রকল্প’ চালু হয়েছিল অনেক আগেই। ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘মেধাশ্রী প্রকল্প’ চালু করল তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে। এ-ছাড়াও ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণপ্রদান স্কিম চালু করা হল দুয়ারের সরকার প্রকল্প থেকে। দুয়ারে সরকার প্রকল্প থেকে ‘বিধবা ভাতা’ প্রকল্পের প্রসারতা আরও বাড়ানো হল। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে পুরাপুরি ‘দুয়ারে রেশন প্রকল্প’ চালু করেছে বর্তমান সরকার। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক দেশের সেরা প্রকল্প হিসাবে দুয়ারে সরকার প্রকল্পটিকে নির্বাচিত করে এবং ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পুরস্কৃত করেন।

এবারে দেখা যাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২ মে ২০২১ থেকে তৃতীয়বারের (Trinamool government) জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে সামাজিক জনমুখী প্রকল্পের জন্য কত বাড়তি অর্থ খরচ করেছে গত ২ বছরে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৪টি ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, কৃষি ও ভর্তুকি (রেশন-সহ) ২০২১-’২২, ২০২২-’২৩ ও ২০২৩-’২৪ অর্থবছরের বাজেটের তথ্য একটি তালিকায় দেখানো হল। এই চারটি ক্ষেত্রে ২০২১-’২২ অর্থবছরে মোট খরচ ধরা হয়েছিল ৪২,৩৯৩ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩ সালে অর্থাৎ মাত্র ১ বছরে এটি বাড়ে ২১,২২০ টাকার বেশি। অর্থাৎ ১ বছরেই এই ৪টি ক্ষেত্রের ব্যয় ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ে। এর মধ্যে মূলত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণের খাতে ৩ গুণেরও বেশি ব্যয় বাড়ে। টাকার পরিমাণে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

আরও পড়ুন-জিন খুইয়েই মানুষ হয়েছি আমরা

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে ব্যয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় মাত্র ১ বছরে। ২০২১-’২২ সালে ১২৫০০ কোটি টাকা থেকে ১৭৫০০ কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দ বাড়ে এই খাতে। ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় বাড়ে এই খাতে। স্বাস্থ্যসাথী-সহ আরও কিছু জনমুখী প্রকল্প এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে মূলত ২০২১ সাল থেকে নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্পের জন্য ৩০ শতাংশের বেশি ব্যয় বাড়ে ১ বছরে (২ হাজার টাকার বেশি)। দুয়ারে রেশন প্রকল্পের জন্য ২০২২-’২৩ বছরে ভর্তুকি খাতে ব্যয় অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ে। বর্তমান বছরেও (২০২৩-’২৪) এই ব্যয় ১২২৮০ কোটি টাকা ধরা হলেও এটি আরও অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়বে।

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সর্বহারা কবিতায় লিখেছেন—
‘‘হীরা মানিক চাস্‌নিক’ তুই, চাস্‌ নি তো সাত ক্রোর / একটি ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র— ভরা অভাব তোর”।
এই ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র দেওয়ার লড়াইয়ে গত ২ বছরে তার জনমুখী প্রকল্পের প্রসারতা আরও বাড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে আরও বাড়বে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাজেটের তথ্য (কোটি টাকার হিসাবে)
বিষয় ২০২১-’২২ ২০২২-’২৩ ২০২৩-’২৪
মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণ ৬০৪৬.৯৯ ১৯২৩৮.২৬ ২২২২৫.৬৭
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ১২৫৬১.১৯ ১৭৫৭৬.৮৯ ১৮২৬৪.৬২
কৃষি ৭১২৫.০০ ৯৩১০.১৯ ৯৫৯৫.৩২
ভর্তুকি ১৬৬৫৯.৯৯ ১৭৪৮৮.৪০ ১২২৮০.৭১
মোট ৪২৩৯৩.১৭ ৬৩৬১৩.৭৪ ৬২৩৬৬.৩২

Latest article